সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে জ্যোতির সাথে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সাথে গভীর সখ্যের তথ্য মিলেছে। এসব সন্ত্রাসীর কাছ থেকে সময়ে অসময়ে জ্যোতি নানা সহযোগিতা নিত, আর বিনিময়ে বাবার ক্ষমতার দাপটে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিত। ওইসব সন্ত্রাসী অবৈধ কর্মের মাধ্যমে যে অর্থ হাতিয়ে নিত তারও একটি ভাগ পেত জ্যোতি। বিদেশে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের সাথে এই জ্যোতির ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব থাকার কথাও জানা গেছে। দেশ থেকে সে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগে বেশ কিছু মামলার আসামি হয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পলাতক আসাদুজ্জামান খান কামাল। তারই ছেলে জ্যোতি। বাবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে এক সময় প্রশাসনে তার ব্যাপক দাপট ছিল। কথিত রয়েছে পুলিশ প্রশাসনের কাছে জ্যোতিই ছিল অঘোষিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পুলিশের পদায়ন ও রদবদলের নায়ক সাফি মুদাচ্ছির খান জ্যোতি সম্প্রতি এক মাস যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে গত ৩০ জুলাই দেশে ফিরে আসে। এরপর তার বাহিনী নিয়ে নজর দেন ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমানোর কাজে। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর উত্তরার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন আদালতে সোপর্দ করে ৪ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
জ্যোতির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে তিনি বিদেশে শত কোটি টাকা পাচার করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই জ্যোতির আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মিল্কি হত্যা মামলার পলাতক আসামি চঞ্চলের সাথে বৈঠক করেন এবং তার ব্যবসার অংশীদার হন। এই ব্যবসায় তিনি অর্ধশত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন বলে জানা গেছে। বৈঠকের পর জ্যোতি গ্রুপ ছবি তোলেন যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক কয়েকজন সন্ত্রাসী ও সাবেক ডিপিএস খোকনের সাথে। জ্যোতির সাথে ঢাকার পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী টিটন, তার ভাই রাজন ও সুমনের সাথে সখ্যের অভিযোগ রয়েছে। এই টিটন, রাজন ও সুমনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদেরকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে গত ৯ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী টিটনের বিরুদ্ধে এর আগেও হত্যাসহ অনেক মামলা রয়েছে। এখনো অনেকে তাদের ভয়ে তটস্থ। রাজধানীর তেজগাঁওকেন্দ্রিক যে চাঁদাবাজি হতো তার একটি নির্দিষ্ট অংশ চলে যেত জ্যোতির কাছে। এলাকা নিয়ন্ত্রণের জন্য জ্যোতির আলাদা বাহিনীও রয়েছে।
একাধিক সূত্র বলেছে, পুলিশে পদায়ন ও নিয়োগ বাণিজ্যে করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে জ্যোতি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা ধনঞ্জয়ের সাথে তার ঘনিষ্টতা ছিল। অনেক বদলি ও পদায়ন তার নির্দেশেই হতো। পুলিশের অনেক বড় বড় কর্মকর্তা জ্যোতিকে তোয়াজ করে চলতে বাধ্য হতেন।