বিশ্বজুড়ে সংঘাতের ছায়া শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নকে গভীর হুমকির মুখে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘সোশ্যাল বিজনেস, ইয়ুথ অ্যান্ড টেকনোলজি’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সাইডলাইন বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আজকের বিশ্ব এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈষম্য ও যুদ্ধের মতো সংকটগুলো একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সমগ্র মানবসভ্যতাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। এর মোকাবেলায় পুরনো পন্থা যথেষ্ট নয় নতুন কূটনীতি, সহযোগিতা ও দৃষ্টিভঙ্গি দরকার।”
তিনি বলেন, যুদ্ধ ও বাস্তুচ্যুতি শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি করছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ছে, লাখ লাখ মানুষ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, অথচ একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু বিপর্যয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপে ভুগছে। এর মধ্যে জাতিসংঘের বাজেট সংকোচন বা আন্তর্জাতিক সহায়তা কমানো হলে তা হবে আত্মঘাতী পদক্ষেপ।”
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমান পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় যেখানে মানুষের চেয়ে মুনাফার গুরুত্ব বেশি, সেখানে এসডিজি পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পরিবর্তনের জন্য চাই একটি নতুন অর্থনীতি যেখানে মানুষের কল্যাণ, পরিবেশ রক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচারই হবে মূল অগ্রাধিকার।”
তিনি জানান, সামাজিক ব্যবসা সেই নতুন ব্যবস্থার ভিত্তি হতে পারে। “এক ডলারের ক্ষুদ্র ঋণ থেকে শুরু হওয়া সামাজিক ব্যবসা আজ বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে সমস্যা সমাধান ও অর্থনৈতিক টিকে থাকা একসঙ্গে সম্ভব।”
তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেন, “নতুন সভ্যতার স্থপতি হবে তরুণরাই। তাদের সৃজনশীলতা, স্বপ্ন এবং নেতৃত্বই পারে এই পৃথিবীকে বদলে দিতে।”
প্রযুক্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি সবই আমাদের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। কিন্তু প্রযুক্তি যেন মানবতার জন্য আশীর্বাদ হয়, তা নিশ্চিত করতে হলে প্রতিযোগিতার বদলে চাই সহযোগিতা, দায়িত্বশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধ।”
সর্বশেষে তিনি বলেন, “স্বপ্ন দেখতে হবে বড়, তবে তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে আজই কাল নয়।”