5:29 am, Wednesday, 6 November 2024

কুষ্টিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা

  • Zuel Rana
  • Update Time : 09:43:58 pm, Monday, 30 September 2024
  • 66

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিনছবি: সংগৃহীত

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন ওরফে সেন্টুকে একাধিক গুলি ছুড়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইউপি কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় নঈম উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। মাত্র ৫ মিনিটে এ হত্যাকাণ্ড সমাপ্ত করে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। সন্ত্রাসীরা একাধিক দলে ভাগ হয়ে ওই কার্যালয় ঘিরে ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও সিরাজনগর গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন। ঘটনার সময় তিনি চেয়ারম্যানের কক্ষেই উপস্থিত ছিলেন। রুহুল আমিন মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, সকালের দিকে তিনি পরিষদে যান। এরপর চেয়ারম্যানের কক্ষে কথাবার্তা বলতে যান। ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন এ সময় তাঁর কক্ষে বসে ছিলেন। ওই কক্ষে চেয়ারম্যানসহ তাঁরা চারজন বসে গল্প করছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার কিছু সময় পর হঠাৎ চেয়ারম্যানের চেয়ারের ঠিক পেছনের জানালা দিয়ে একজন একটি হাত ঢুকিয়ে একটা ‘ফায়ার’ (গুলি) করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় ও প্রচণ্ড শব্দে সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। দেখতে পান, ওই চেয়ার ভেঙে চেয়ারম্যানের মাথায় গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যান চেয়ার থেকে নিচে পড়ে যান।

আতঙ্কিত হয়ে রুহুল আমিনসহ বাকিরা দৌড়ে ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। এ সময় কক্ষের বাইরে আরও তিনজন সন্ত্রাসীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন রুহুল আমিন। তাঁদের মধ্যে দুজন রুহুল আমিনের দিকে দুটি পিস্তল তাক করেন। এতে রুহুল আমিন ভয় পেয়ে হাতজোড় করে তাঁকে না মারার আকুতি জানান। সন্ত্রাসীদের মধ্যে অস্ত্রধারী দুজন তখন দ্রুত চেয়ারম্যানের কক্ষে চলে যান। বাইরে একজন খালি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই ফাঁকে রুহুল আমিনসহ অন্যরা দৌড়ে পরিষদ চত্বরের বাইরে চলে যান। এ সময় তাঁরা আরও তিন থেকে চারটি গুলির শব্দ শুনতে পান।

রুহুল আমিন বলেন, পুরো ঘটনা পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটে যায়। যে তিনজনকে তিনি দেখেছেন, তাঁদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হতে পারে বলে রুহুল আমিনের ধারণা। তাঁদের কারও মুখ ঢাকা ছিল না। পরনে গেঞ্জি ও প্যান্ট পরা ছিল। একজনের পরনে সাদা টি–শার্ট, আরেকজনের পরনে ছিল ঘিয়ে রঙের টি–শার্ট। তাঁদের দুজনের হাতের অস্ত্র দেখে তিনি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলেন।

স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে রুহুল আমিন পরে জানতে পারেন, ওই সন্ত্রাসীরা সবাই কাজ শেষ করে দ্রুত পদ্মা নদীর ধার দিয়ে মোটরসাইকেলে চলে যান। রুহুল আমিন পরিষদ চত্বরের বাইরে বের হয়েই চিৎকার-চেঁচামেচি করেন, বলতে থাকেন, ‘চেয়ারম্যানকে মেরে ফেলল। তোমরা সবাই আসো।’ এরপর তিনি দ্রুত নিজের বাড়ি চলে যান। তাঁকে ভীষণ আতঙ্কিত দেখে পরিবারের সদস্যেরা তাঁর মাথায় পানি ঢালেন।

রুহুল আমিন আরও বলেন, তিনি এই তিন তরুণকে এর আগে কখনো এলাকায় দেখেননি। তবে সাদা গেঞ্জি পরিহিত ছেলেটাকে দেখলে তিনি চিনতে পারবেন।

কুষ্টিয়া ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল খালেক গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থলে যান। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাধিক দলে ৭ থেকে ৮ জন এই ঘটনায় অংশ নিতে পারেন। তাঁদের শনাক্ত করতে পুলিশ গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। ইউপি কার্যালয়সহ এর আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে। তবে একটি ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা কয়েক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। কেন বন্ধ হয়েছে, সেটাও তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে, আমি নিজেও ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ প্রাথমিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। ঘটনায় জড়িত কোনো ব্যক্তিকেও আটক করা যায়নি।’

দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন একসময় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি নিরপেক্ষ ছিলেন। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

Write Your Comment

About Author Information

Zuel Rana

কুষ্টিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা

Update Time : 09:43:58 pm, Monday, 30 September 2024

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন ওরফে সেন্টুকে একাধিক গুলি ছুড়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইউপি কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় নঈম উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। মাত্র ৫ মিনিটে এ হত্যাকাণ্ড সমাপ্ত করে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। সন্ত্রাসীরা একাধিক দলে ভাগ হয়ে ওই কার্যালয় ঘিরে ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও সিরাজনগর গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন। ঘটনার সময় তিনি চেয়ারম্যানের কক্ষেই উপস্থিত ছিলেন। রুহুল আমিন মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, সকালের দিকে তিনি পরিষদে যান। এরপর চেয়ারম্যানের কক্ষে কথাবার্তা বলতে যান। ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন এ সময় তাঁর কক্ষে বসে ছিলেন। ওই কক্ষে চেয়ারম্যানসহ তাঁরা চারজন বসে গল্প করছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার কিছু সময় পর হঠাৎ চেয়ারম্যানের চেয়ারের ঠিক পেছনের জানালা দিয়ে একজন একটি হাত ঢুকিয়ে একটা ‘ফায়ার’ (গুলি) করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় ও প্রচণ্ড শব্দে সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। দেখতে পান, ওই চেয়ার ভেঙে চেয়ারম্যানের মাথায় গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যান চেয়ার থেকে নিচে পড়ে যান।

আতঙ্কিত হয়ে রুহুল আমিনসহ বাকিরা দৌড়ে ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। এ সময় কক্ষের বাইরে আরও তিনজন সন্ত্রাসীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন রুহুল আমিন। তাঁদের মধ্যে দুজন রুহুল আমিনের দিকে দুটি পিস্তল তাক করেন। এতে রুহুল আমিন ভয় পেয়ে হাতজোড় করে তাঁকে না মারার আকুতি জানান। সন্ত্রাসীদের মধ্যে অস্ত্রধারী দুজন তখন দ্রুত চেয়ারম্যানের কক্ষে চলে যান। বাইরে একজন খালি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই ফাঁকে রুহুল আমিনসহ অন্যরা দৌড়ে পরিষদ চত্বরের বাইরে চলে যান। এ সময় তাঁরা আরও তিন থেকে চারটি গুলির শব্দ শুনতে পান।

রুহুল আমিন বলেন, পুরো ঘটনা পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটে যায়। যে তিনজনকে তিনি দেখেছেন, তাঁদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হতে পারে বলে রুহুল আমিনের ধারণা। তাঁদের কারও মুখ ঢাকা ছিল না। পরনে গেঞ্জি ও প্যান্ট পরা ছিল। একজনের পরনে সাদা টি–শার্ট, আরেকজনের পরনে ছিল ঘিয়ে রঙের টি–শার্ট। তাঁদের দুজনের হাতের অস্ত্র দেখে তিনি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলেন।

স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে রুহুল আমিন পরে জানতে পারেন, ওই সন্ত্রাসীরা সবাই কাজ শেষ করে দ্রুত পদ্মা নদীর ধার দিয়ে মোটরসাইকেলে চলে যান। রুহুল আমিন পরিষদ চত্বরের বাইরে বের হয়েই চিৎকার-চেঁচামেচি করেন, বলতে থাকেন, ‘চেয়ারম্যানকে মেরে ফেলল। তোমরা সবাই আসো।’ এরপর তিনি দ্রুত নিজের বাড়ি চলে যান। তাঁকে ভীষণ আতঙ্কিত দেখে পরিবারের সদস্যেরা তাঁর মাথায় পানি ঢালেন।

রুহুল আমিন আরও বলেন, তিনি এই তিন তরুণকে এর আগে কখনো এলাকায় দেখেননি। তবে সাদা গেঞ্জি পরিহিত ছেলেটাকে দেখলে তিনি চিনতে পারবেন।

কুষ্টিয়া ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল খালেক গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থলে যান। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাধিক দলে ৭ থেকে ৮ জন এই ঘটনায় অংশ নিতে পারেন। তাঁদের শনাক্ত করতে পুলিশ গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। ইউপি কার্যালয়সহ এর আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে। তবে একটি ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা কয়েক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। কেন বন্ধ হয়েছে, সেটাও তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে, আমি নিজেও ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ প্রাথমিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। ঘটনায় জড়িত কোনো ব্যক্তিকেও আটক করা যায়নি।’

দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন একসময় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি নিরপেক্ষ ছিলেন। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।