5:39 am, Saturday, 2 November 2024
কমে যাবে কর্মসংস্থান

বাজারভিত্তিক সুদহার চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা

দীর্ঘদিন সুদহারের সীমা নয় শতাংশে বেঁধে রাখার পর গত অর্থবছর থেকে চালু হয়েছিল ‘স্মার্ট রেট’ পদ্ধতি। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তসহ নানামুখী চাপে এবার স্মার্ট রেট থেকে বেরিয়ে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক সুদহার চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে সুদের হার কত হবে তা নিজেরাই ঠিক করবে ব্যাংকগুলো। এতে করে সুদহার অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, ঋণে সুদ বাড়লে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং কমে যাবে কর্মসংস্থান। বিষয়টি সার্বিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

গত বছরের ১ জুলাই থেকে সুদহার নির্ধারণে নতুন নিয়ম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়মে সুদহার নির্ধারণ হচ্ছে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের ওপর। যার নাম ‘সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল’ (ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড়) ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ বা স্মার্ট রেফারেন্স রেট। এ পদ্ধতিতে ফল না আসায় নয় মাস না যেতেই ‘স্মার্ট রেট’ থেকে সরে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি নতুন করে বাজারভিত্তিক সুদহার করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

গত রোববার (৫ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহারের বর্তমানের স্মার্ট রেফারেন্স রেট থেকে সরে এসে বাজারভিত্তিক করা হবে।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন দেয় আইএমএফ। যার অন্যতম শর্ত ছিল বেঁধে দেওয়া সুদহার থেকে বেরিয়ে আসা। ঋণের শর্ত পরিপালনের জন্য গত বছরের জুলাই থেকে সুদহারের নতুন ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যবস্থা চালুর পর থেকে স্মার্ট রেটের সঙ্গে নির্ধারিত মার্জিন যোগ করে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে।
তিনি জানান, এখন যে সুদহার রয়েছে তা প্রায় বাজারভিত্তিক। তাই স্মার্ট তুলে দেওয়া হলেও সুদহার তেমন বাড়বে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবার (৮ মে) বৈঠক করে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির।

পরিচালকরা নিজেরাই জানেন না কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারকে কোনো ঋণ দেওয়া হচ্ছে না : গভর্নর
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ছিল নয় শতাংশ। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন দেয় আইএমএফ। যার অন্যতম শর্ত ছিল বেঁধে দেওয়া সুদহার থেকে বেরিয়ে আসা। ঋণের শর্ত পরিপালনের জন্য গত বছরের জুলাই থেকে সুদহারের নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পদ্ধতি চালুর পর থেকে স্মার্ট রেটের সঙ্গে নির্ধারিত মার্জিন যোগ করে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে। গত জুলাই থেকে প্রতি মাসের শেষ কর্মদিবসে স্মার্ট রেট ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, গত এপ্রিলের স্মার্ট রেট কত, আনুষ্ঠানিকভাবে তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, এপ্রিলে সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা স্মার্ট রেট দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর সঙ্গে তিন শতাংশ মার্জিন যোগ করে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের মাস মার্চের স্মার্ট রেট ছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, অক্টোবরে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশে, জানুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশে ওঠে স্মার্ট রেট। ধারাবাহিক স্মার্ট রেট বাড়তে থাকায় আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বাধ্য হয়ে এ নিয়ম থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এখন এমনিতেই সুদহার বেশি, এর মধ্যে বাজারভিত্তিক সুদহার হলে এটি আরও বেড়ে যাবে। সুদহার বাড়লে ব্যবসা স্থির হয়ে যাবে। কারণ সবাই একটা হিসাব করে অর্থ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এখন যদি হিসাবের বাইরে বেশি সুদ দিতে হয়, তাহলে তার খরচ বেড়ে যাবে। বিরাজমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে উচ্চ সুদহার যোগ হলে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে যাবে।

ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার মূল্যস্ফীতি কমাতে স্মার্ট সুদহারকে বেছে নিয়েছিল। কিন্তু এর সুফল আসেনি। সুদহার ধারাবাহিক বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এখন বাজারভিত্তিক করলে এ হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি চলে যাবে। ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার ব্যয় বেড়েছে, যার প্রভাবে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। এখন সুদহার আরও বাড়লে ব্যবসা সংকটে পড়বে।

এদিকে, ব্যাংকারদের দাবি, সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হলে স্বল্প সময়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে ভালো হবে। শুরুতে হয়ত সুদহার সামান্য বাড়বে। তবে, দ্রুততম সময়ে তা স্থিতিশীল হয়ে আসবে।

বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার নীতি কী করবে তা কার্যকর করলে বোঝা যাবে। কারণ এর আগে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে ভালো ফল আসেনি। তবে, বাজারভিত্তিক সুদহার করতে পারলে ভালো। প্রথম দিকে সুদহার কিছুটা বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল আসবে।

সুদহার বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীরা দুর্দশায় পড়বে দাবি করে নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন এমনিতেই সুদহার বেশি, এর মধ্যে বাজারভিত্তিক সুদহার হলে এটি আরও বেড়ে যাবে। সুদহার বাড়লে ব্যবসা স্থির হয়ে যাবে। কারণ সবাই একটা হিসাব করে অর্থ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এখন যদি হিসাবের বাইরে বেশি সুদ দিতে হয়, তাহলে তার খরচ বেড়ে যাবে। বিরাজমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে উচ্চ সুদহার যোগ হলে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে যাবে।

আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী বাজারভিত্তিক সুদহার প্রচলন করতে যাচ্ছে। এতে সুদের হার বেড়ে গিয়ে দুই অঙ্কে দাঁড়াতে পারে। তাতে সিএমএসএমই খাতের ব্যয় বেড়ে যাবে। যা পণ্যের বাজারে স্থানীয় ও বিদেশি প্রতিযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে
ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান
এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসার পথ রাখার দাবি জানান তিনি। তার মতে, ব্যবসা করতে না পারলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া পথ থাকবে না।

বাজারভিত্তিক ‍সুদহারের সঙ্গে বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালুর দাবি জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানির ডলারে দেবেন একশ সাড়ে ৯ টাকা। আর আমদানির জন্য কিনতে গেলে গুনতে হবে ১২০ থেকে ১২২ টাকা, এটা কেমন নীতি? এ নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখানেও বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালু করতে হবে। কারণ এক বাজারে দুই নীতি কেন থাকবে?

ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, স্মার্ট রেটে এখন ১৩ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ইতোমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এটি বাজারে কাঙ্ক্ষিত ঋণের সুদ কমিয়ে আনতে পারেনি। ব্যাংকের গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণে এটি কাজে লাগেনি। স্মার্ট রেটের প্রবৃদ্ধি সিএমএসএমই খাতের বর্ধিত ব্যবসায় ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য হয়নি। অতি উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ এবং বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্মার্ট রেটের হার পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন। তবে, এই মুহূর্তে স্মার্ট রেটের পরিবর্তে বাজারভিত্তিক সুদহার প্রচলন হলে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদের হার বেড়ে যাবে। আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী বাজারভিত্তিক সুদহার প্রচলন করতে যাচ্ছে। এতে সুদের হার বেড়ে গিয়ে দুই অঙ্কে দাঁড়াতে পারে। তাতে সিএমএসএমই খাতের ব্যয় বেড়ে যাবে। যা পণ্যের বাজারে স্থানীয় ও বিদেশি প্রতিযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রিজওয়ান রাহমান জানান, আগের যে ‘সুদের হার সীমা’ এবং স্মার্ট হার রেট করা হয়েছিল, তা পুরোপরি কার্যকর হয়নি। প্রস্তাবিত নতুন রেট ব্যাংকের আমানতকারীদের আকৃষ্ট করবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর সুদের হার বাড়বে। ফলে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো সুবিধা পাবে না।

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট

Bangladesh Diplomat | বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট | A Popular News Portal Of Bangladesh.

কমে যাবে কর্মসংস্থান

বাজারভিত্তিক সুদহার চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

Update Time : 04:08:41 am, Wednesday, 8 May 2024

অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা

দীর্ঘদিন সুদহারের সীমা নয় শতাংশে বেঁধে রাখার পর গত অর্থবছর থেকে চালু হয়েছিল ‘স্মার্ট রেট’ পদ্ধতি। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তসহ নানামুখী চাপে এবার স্মার্ট রেট থেকে বেরিয়ে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক সুদহার চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে সুদের হার কত হবে তা নিজেরাই ঠিক করবে ব্যাংকগুলো। এতে করে সুদহার অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, ঋণে সুদ বাড়লে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং কমে যাবে কর্মসংস্থান। বিষয়টি সার্বিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

গত বছরের ১ জুলাই থেকে সুদহার নির্ধারণে নতুন নিয়ম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়মে সুদহার নির্ধারণ হচ্ছে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের ওপর। যার নাম ‘সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল’ (ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড়) ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ বা স্মার্ট রেফারেন্স রেট। এ পদ্ধতিতে ফল না আসায় নয় মাস না যেতেই ‘স্মার্ট রেট’ থেকে সরে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি নতুন করে বাজারভিত্তিক সুদহার করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

গত রোববার (৫ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহারের বর্তমানের স্মার্ট রেফারেন্স রেট থেকে সরে এসে বাজারভিত্তিক করা হবে।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন দেয় আইএমএফ। যার অন্যতম শর্ত ছিল বেঁধে দেওয়া সুদহার থেকে বেরিয়ে আসা। ঋণের শর্ত পরিপালনের জন্য গত বছরের জুলাই থেকে সুদহারের নতুন ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যবস্থা চালুর পর থেকে স্মার্ট রেটের সঙ্গে নির্ধারিত মার্জিন যোগ করে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে।
তিনি জানান, এখন যে সুদহার রয়েছে তা প্রায় বাজারভিত্তিক। তাই স্মার্ট তুলে দেওয়া হলেও সুদহার তেমন বাড়বে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবার (৮ মে) বৈঠক করে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির।

পরিচালকরা নিজেরাই জানেন না কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারকে কোনো ঋণ দেওয়া হচ্ছে না : গভর্নর
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ছিল নয় শতাংশ। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন দেয় আইএমএফ। যার অন্যতম শর্ত ছিল বেঁধে দেওয়া সুদহার থেকে বেরিয়ে আসা। ঋণের শর্ত পরিপালনের জন্য গত বছরের জুলাই থেকে সুদহারের নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পদ্ধতি চালুর পর থেকে স্মার্ট রেটের সঙ্গে নির্ধারিত মার্জিন যোগ করে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে। গত জুলাই থেকে প্রতি মাসের শেষ কর্মদিবসে স্মার্ট রেট ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, গত এপ্রিলের স্মার্ট রেট কত, আনুষ্ঠানিকভাবে তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, এপ্রিলে সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা স্মার্ট রেট দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর সঙ্গে তিন শতাংশ মার্জিন যোগ করে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের মাস মার্চের স্মার্ট রেট ছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, অক্টোবরে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশে, জানুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশে ওঠে স্মার্ট রেট। ধারাবাহিক স্মার্ট রেট বাড়তে থাকায় আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বাধ্য হয়ে এ নিয়ম থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এখন এমনিতেই সুদহার বেশি, এর মধ্যে বাজারভিত্তিক সুদহার হলে এটি আরও বেড়ে যাবে। সুদহার বাড়লে ব্যবসা স্থির হয়ে যাবে। কারণ সবাই একটা হিসাব করে অর্থ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এখন যদি হিসাবের বাইরে বেশি সুদ দিতে হয়, তাহলে তার খরচ বেড়ে যাবে। বিরাজমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে উচ্চ সুদহার যোগ হলে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে যাবে।

ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার মূল্যস্ফীতি কমাতে স্মার্ট সুদহারকে বেছে নিয়েছিল। কিন্তু এর সুফল আসেনি। সুদহার ধারাবাহিক বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এখন বাজারভিত্তিক করলে এ হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি চলে যাবে। ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার ব্যয় বেড়েছে, যার প্রভাবে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। এখন সুদহার আরও বাড়লে ব্যবসা সংকটে পড়বে।

এদিকে, ব্যাংকারদের দাবি, সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হলে স্বল্প সময়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে ভালো হবে। শুরুতে হয়ত সুদহার সামান্য বাড়বে। তবে, দ্রুততম সময়ে তা স্থিতিশীল হয়ে আসবে।

বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার নীতি কী করবে তা কার্যকর করলে বোঝা যাবে। কারণ এর আগে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে ভালো ফল আসেনি। তবে, বাজারভিত্তিক সুদহার করতে পারলে ভালো। প্রথম দিকে সুদহার কিছুটা বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল আসবে।

সুদহার বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীরা দুর্দশায় পড়বে দাবি করে নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন এমনিতেই সুদহার বেশি, এর মধ্যে বাজারভিত্তিক সুদহার হলে এটি আরও বেড়ে যাবে। সুদহার বাড়লে ব্যবসা স্থির হয়ে যাবে। কারণ সবাই একটা হিসাব করে অর্থ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এখন যদি হিসাবের বাইরে বেশি সুদ দিতে হয়, তাহলে তার খরচ বেড়ে যাবে। বিরাজমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে উচ্চ সুদহার যোগ হলে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে যাবে।

আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী বাজারভিত্তিক সুদহার প্রচলন করতে যাচ্ছে। এতে সুদের হার বেড়ে গিয়ে দুই অঙ্কে দাঁড়াতে পারে। তাতে সিএমএসএমই খাতের ব্যয় বেড়ে যাবে। যা পণ্যের বাজারে স্থানীয় ও বিদেশি প্রতিযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে
ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান
এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসার পথ রাখার দাবি জানান তিনি। তার মতে, ব্যবসা করতে না পারলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া পথ থাকবে না।

বাজারভিত্তিক ‍সুদহারের সঙ্গে বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালুর দাবি জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানির ডলারে দেবেন একশ সাড়ে ৯ টাকা। আর আমদানির জন্য কিনতে গেলে গুনতে হবে ১২০ থেকে ১২২ টাকা, এটা কেমন নীতি? এ নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখানেও বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালু করতে হবে। কারণ এক বাজারে দুই নীতি কেন থাকবে?

ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, স্মার্ট রেটে এখন ১৩ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ইতোমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এটি বাজারে কাঙ্ক্ষিত ঋণের সুদ কমিয়ে আনতে পারেনি। ব্যাংকের গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণে এটি কাজে লাগেনি। স্মার্ট রেটের প্রবৃদ্ধি সিএমএসএমই খাতের বর্ধিত ব্যবসায় ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য হয়নি। অতি উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ এবং বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্মার্ট রেটের হার পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন। তবে, এই মুহূর্তে স্মার্ট রেটের পরিবর্তে বাজারভিত্তিক সুদহার প্রচলন হলে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদের হার বেড়ে যাবে। আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী বাজারভিত্তিক সুদহার প্রচলন করতে যাচ্ছে। এতে সুদের হার বেড়ে গিয়ে দুই অঙ্কে দাঁড়াতে পারে। তাতে সিএমএসএমই খাতের ব্যয় বেড়ে যাবে। যা পণ্যের বাজারে স্থানীয় ও বিদেশি প্রতিযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রিজওয়ান রাহমান জানান, আগের যে ‘সুদের হার সীমা’ এবং স্মার্ট হার রেট করা হয়েছিল, তা পুরোপরি কার্যকর হয়নি। প্রস্তাবিত নতুন রেট ব্যাংকের আমানতকারীদের আকৃষ্ট করবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর সুদের হার বাড়বে। ফলে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো সুবিধা পাবে না।