অসহনীয় গরম মোকাবিলায় গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন চিফ হিট অফিসার পদে বুশরা আফরিনকে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে বুশরার দায়িত্ব গ্রহণের পর একবছর পেরিয়ে গেলেও হিট অফিসার হিসেবে তার কাজের দৃশ্যমান কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি।
তাপমাত্রার ভয়াবহ উৎকণ্ঠায় প্রশ্ন উঠেছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের চিফ হিট অফিসারের কাজ আসলে কী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন অনেক ধরনের প্রচারণা চলছে। সাম্প্রতিক গরম নিয়ে ঢাকার চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের বক্তব্য ভাইরাল হয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
হিটস্ট্রোক করে মারা গেছেন কয়েকজন। এছাড়া দেশের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা। এরইমধ্যে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এ বছর অসহনীয় তাপপ্রবাহের শিকার ঢাকাবাসীর মনেও এরই মধ্যে হিট অফিসার হিসেবে তার দায়িত্ব, এ পদে তার নিয়োগ পাওয়া এবং এ পদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হতে শুরু করেছে।
চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন গণমাধ্যমকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে পানীয় জলের সুব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য। একই সঙ্গে ‘কুলিং স্পেস’-এর ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে যেন পথচারীরা বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পান। আমাদের অবশ্যই আরো বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, গত এক বছরে আমরা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বস্তি এলাকায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। কারণ, তারা অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী। এসব জায়গায় গাছ লাগানোর মাধ্যমে এবং এসব গাছের রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এছাড়া আবহাওয়া অধিদফতরসহ বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি এবং এনজিওর সঙ্গে আমরা শিগগিরই যুক্ত হয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছি। কল্যাণপুর ও বনানীতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে আমরা ‘নগর বন’ তৈরি করতে যাচ্ছি, যা একই সঙ্গে শীতলকরণ, বায়ুদূষণ রোধ এবং মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করবে।
সাধারণত স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করা হয়। আর্শট-রকের নিয়োগ প্রক্রিয়ার নীতিমালা অনুযায়ী হিট অফিসার নিয়োগ পেয়ে থাকেন। সংস্থাটি প্রতিটি মহাদেশে একজন হিট অফিসার নিয়োগ দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ছয়টি মহাদেশে চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে লস অ্যাঞ্জেলেস, মিয়ামি, মেলবোর্ন, অ্যাথেন্স এবং ফ্রিটাউনে চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের একজন এলিনি মাইরিভিলি। তিনি এথেন্সের চিফ হিট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উভয় ক্ষেত্রে তাপমাত্রা কমানোর জন্য কাজ করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি-ডেড কাউন্টিতে আর্শট-রকের চিফ হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জেন গিলবার্ট। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, জলবায়ু দুর্যোগ প্রশমন এবং অভিযোজন এবং শহরের স্থিতিস্থাপকতায় তার ৩০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা আছে। তিনি শহরে গ্রিন স্পেস বাড়ানো এবং তাপপ্রবাহ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছেন। আফ্রিকা মহাদেশের চিফ হিট অফিসার হলেন ইউজেনিয়া কার্গবো। দেশটির ফ্রিটাউন শহরে আর্শট-রকের চিফ হিট অফিসার হিসেবে তিনি নিযুক্ত। তিনি শহরের তাপমাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। শহরায়ণের কারণে ফ্রিটাউন শহরটি যেসব সমস্যা মোকাবিলা করছে তিনি তা চিহ্নিত করেছেন। এ জন্য তিনি শহরের তাপমাত্রা কমাতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের রক্ষা করতে বেশ সৃজনশীল সমাধান খুঁজে বের করছেন।
অন্যদিকে বংলাদেশে প্রথম হিট অফিসার বুশরা আফরিন। বুশরা শুধু ঢাকা নয়, এশিয়া মহাদেশেরও প্রথম চিফ হিট অফিসার। সে হিসেবে তার কাছ থেকে এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের শিকার মানুষদেরও প্রত্যাশা রয়েছে। কিন্তু অন্য দেশের হিট অফিসাররা যখন কুল পেভমেন্ট, গাছ লাগানো এবং ক্যানোপি তৈরির মতো ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেখানে বুশরা আফরিনের দিকে এখনো অপেক্ষায় চেয়ে আছেন ঢাকাবাসী। গত এক বছরেও তার কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। ফলে এ নিয়ে নানা মাধ্যমে আলোচনায় সরব রয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।