গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ বাঁচাতে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, আগুন আর ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে উপকূলীয় সড়ক ধরে দক্ষিণের দিকে ছুটছে মানুষ।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে গাজা সিটির ওপর এটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন এই হামলাকে “গণহত্যা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব একে বলেছেন “ভয়ঙ্কর ও অমানবিক”।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক্সে লিখেছেন, “গাজা জ্বলছে”। সেই আগুন আর ধ্বংসের মুখে পড়ে গাধার গাড়ি, আসবাবপত্র বোঝাই ভ্যান আর হাতে-পিঠে ব্যাগ নিয়ে জীবন বাঁচাতে ছুটছে মানুষ।
প্রথমে কেউ কেউ শহরে থেকেই প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও, এখন বোমাবর্ষণের তীব্রতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সামর্থ্যবান সবাই দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সেখানেও নিরাপত্তা নেই। রাফাহ, খান ইউনিস, এমনকি দক্ষিণের শরণার্থী ক্যাম্প আল-মাওয়াসিতেও বোমাবর্ষণ চালিয়েছে ইসরায়েল।
শুধু মঙ্গলবার একদিনেই ইসরায়েলি হামলায় ৯১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, গাজা ছেড়ে পালানোর সময় একদল সাধারণ মানুষের গাড়ির বহরে হামলা চালানো হয়। পূর্ব গাজার তুফফাহ এলাকায় আইবাকি মসজিদসহ অন্তত ১৭টি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনারা গাজার উত্তরে, দক্ষিণে এবং পূর্বে বিস্ফোরক বোঝাই রোবট দিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ইউরোমেড মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি রোবট দিয়ে প্রায় ২০টি বাড়ি ধ্বংস করা সম্ভব এবং গাজায় ইতোমধ্যে ১৫টি রোবট মোতায়েন করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনা সূত্রের দাবি, গাজা সিটি থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে পালিয়েছে। তবে গাজার সরকারি গণমাধ্যম জানায়, শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিমাঞ্চলে সমান সংখ্যক মানুষ এখনো অবস্থান করছেন। এছাড়া ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ পুরোপুরি শহর ছেড়ে গেছেন।
দক্ষিণে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোও নতুন করে বিপদের মুখে পড়েছেন। আল-মাওয়াসি ক্যাম্পে বোমাবর্ষণের পরে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আবার গাজা সিটিতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন, যদিও সেখানে এখনও অব্যাহত হামলার মুখে আছে পুরো শহর।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আকাশ থেকে ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যানবাহনের অগ্রসরমান অবস্থার ফুটেজ প্রকাশ করেছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন বলেন, “যত সময়ই লাগুক, গাজা দখলে আমাদের অভিযান চলবে।”
এদিকে, শুধু মঙ্গলবার ভোর থেকে ১০৬ জনের বেশি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজার মেডিকেল কর্মকর্তারা।