8:03 am, Thursday, 11 September 2025

জুলাই অঙ্গীকারনামা চূড়ান্ত, দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের শেষ সংলাপ আজ

জুলাই অঙ্গীকারনামা চূড়ান্ত, দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের শেষ সংলাপ আজ। ছবি: সংগৃহীত

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর অঙ্গীকারনামা চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশনের বৈঠকে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে অঙ্গীকারনামার চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়।

আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেই ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের শেষ সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংলাপে অংশ নিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই সংলাপ থেকেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে,

১. জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন স্বেচ্ছাশ্রম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তেপ্রক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক ঐকমত্যের দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব।

২. জনগণ এই রাষ্ট্রের মালিক; তাদের অভিপ্রায়ই হবে সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে।

এমতাবস্থায় আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ গ্রহণ করেছি বিধায় এই সনদ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করব।

৩. আমরা জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করব না; উপরন্তু উক্ত সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করব।

৪. আমরা ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি যে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের দীর্ঘ ১৬ বছরের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করব।

৫. আমরা সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করছি যে, গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও গুম-খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।

৬. জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ বাংলাদেশের মৌলিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করব।

৭. আমরা এই মর্মে একমত যে, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat

জুলাই অঙ্গীকারনামা চূড়ান্ত, দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের শেষ সংলাপ আজ

Update Time : 07:35:36 am, Thursday, 11 September 2025

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর অঙ্গীকারনামা চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশনের বৈঠকে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে অঙ্গীকারনামার চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়।

আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেই ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের শেষ সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংলাপে অংশ নিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই সংলাপ থেকেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে,

১. জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন স্বেচ্ছাশ্রম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তেপ্রক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক ঐকমত্যের দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব।

২. জনগণ এই রাষ্ট্রের মালিক; তাদের অভিপ্রায়ই হবে সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে।

এমতাবস্থায় আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ গ্রহণ করেছি বিধায় এই সনদ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করব।

৩. আমরা জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করব না; উপরন্তু উক্ত সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করব।

৪. আমরা ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি যে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের দীর্ঘ ১৬ বছরের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করব।

৫. আমরা সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করছি যে, গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও গুম-খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।

৬. জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ বাংলাদেশের মৌলিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করব।

৭. আমরা এই মর্মে একমত যে, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।