8:50 am, Thursday, 11 September 2025

‘ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছি’

ভারত বিরোধিতার কারণে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছি। ছবি: সংগৃহীত

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

নেপালের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি অভিযোগ করেছেন, ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণে তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে। এক চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ ও ধর্মীয় ইস্যুতে স্পর্শকাতর মন্তব্য করায় তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জেনারেশন-জেড (জেন-জি) আন্দোলনের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হন ওলি। পদত্যাগের পর গুঞ্জন ওঠে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে সূত্র জানিয়েছে, তিনি এখনো নেপালেই অবস্থান করছেন এবং রাজধানী কাঠমান্ডুর শিবপুরি সেনা ব্যারাকে আশ্রয়ে আছেন।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) নিজের দলের মহাসচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে ওলি লিখেছেন, আমি যদি লিপুলেখ নিয়ে প্রশ্ন না তুলতাম, অযোধ্যা ও দেবতা রাম নিয়ে কথা না বলতাম, তাহলে হয়তো এখনো ক্ষমতায় থাকতাম।

তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছি কারণ আমি ভারতের সেই দাবির বিরোধিতা করেছি যে রাম ভারতের অযোধ্যায় জন্মেছিলেন। আমি বলেছিলাম রাম নেপালের বীরগঞ্জে জন্মেছিলেন।

নেপাল ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে লিপুলেখ গিরিপথ ও কালাপানি অঞ্চল নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ১৮১৬ সালের সুগৌলি চুক্তির ভিত্তিতে দুই দেশের সীমান্ত নির্ধারিত হলেও, কালী নদীর উৎসস্থল ঘিরে বিভ্রান্তি থেকেই যাচ্ছে। নেপালের দাবি—নদীর উৎপত্তি লিম্পিয়াধুড়া থেকে, যা লিপুলেখের উত্তর-পশ্চিমে। তাই তাদের মতে লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুড়া—সবই নেপালের অংশ।

কেপি ওলির সরকার ২০২০ সালে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছিল, মহাকালী নদীর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত লিম্পিয়াধুড়া, লিপুলেখ ও কালাপানি নেপালের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এই ঘোষণার পর নেপাল ভারতকে ওই অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করার অনুরোধ করলেও, ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে জানায়, ১৯৫৪ সাল থেকেই তারা ওই পথ ব্যবহার করে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

২০২০ সালের জুলাইয়ে ওলি একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেছিলেন, রাম ভারতের নয়, নেপালের নাগরিক ছিলেন। ভারতের অযোধ্যা আসলে ভুয়া; প্রকৃত অযোধ্যা নেপালের পূর্ব বীরগঞ্জে অবস্থিত।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ভারতে জন্ম নেওয়া রাম কীভাবে নেপালের জনকপুরের সীতাকে বিয়ে করলেন? প্রাচীন আমলে তো দূরবর্তী স্থানে বিয়ের চল ছিল না। ফোন বা যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকলে বিয়েটাই বা হলো কীভাবে?

এই বক্তব্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। অনেকেই ওলির মন্তব্যকে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ এবং ‘রাজনৈতিক চমক’ বলে উল্লেখ করেন।

ক্ষমতা হারানোর পরও কেপি শর্মা ওলি তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরে আসেননি। বরং তিনি তার অবস্থান আরো জোরালো করে বলেছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধিতা করাই ছিল তার প্রধান ‘অপরাধ’। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ওলির এমন বক্তব্য নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat

‘ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছি’

Update Time : 07:24:13 am, Thursday, 11 September 2025

নেপালের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি অভিযোগ করেছেন, ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণে তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে। এক চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ ও ধর্মীয় ইস্যুতে স্পর্শকাতর মন্তব্য করায় তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জেনারেশন-জেড (জেন-জি) আন্দোলনের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হন ওলি। পদত্যাগের পর গুঞ্জন ওঠে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে সূত্র জানিয়েছে, তিনি এখনো নেপালেই অবস্থান করছেন এবং রাজধানী কাঠমান্ডুর শিবপুরি সেনা ব্যারাকে আশ্রয়ে আছেন।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) নিজের দলের মহাসচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে ওলি লিখেছেন, আমি যদি লিপুলেখ নিয়ে প্রশ্ন না তুলতাম, অযোধ্যা ও দেবতা রাম নিয়ে কথা না বলতাম, তাহলে হয়তো এখনো ক্ষমতায় থাকতাম।

তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছি কারণ আমি ভারতের সেই দাবির বিরোধিতা করেছি যে রাম ভারতের অযোধ্যায় জন্মেছিলেন। আমি বলেছিলাম রাম নেপালের বীরগঞ্জে জন্মেছিলেন।

নেপাল ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে লিপুলেখ গিরিপথ ও কালাপানি অঞ্চল নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ১৮১৬ সালের সুগৌলি চুক্তির ভিত্তিতে দুই দেশের সীমান্ত নির্ধারিত হলেও, কালী নদীর উৎসস্থল ঘিরে বিভ্রান্তি থেকেই যাচ্ছে। নেপালের দাবি—নদীর উৎপত্তি লিম্পিয়াধুড়া থেকে, যা লিপুলেখের উত্তর-পশ্চিমে। তাই তাদের মতে লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুড়া—সবই নেপালের অংশ।

কেপি ওলির সরকার ২০২০ সালে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছিল, মহাকালী নদীর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত লিম্পিয়াধুড়া, লিপুলেখ ও কালাপানি নেপালের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এই ঘোষণার পর নেপাল ভারতকে ওই অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করার অনুরোধ করলেও, ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে জানায়, ১৯৫৪ সাল থেকেই তারা ওই পথ ব্যবহার করে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

২০২০ সালের জুলাইয়ে ওলি একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেছিলেন, রাম ভারতের নয়, নেপালের নাগরিক ছিলেন। ভারতের অযোধ্যা আসলে ভুয়া; প্রকৃত অযোধ্যা নেপালের পূর্ব বীরগঞ্জে অবস্থিত।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ভারতে জন্ম নেওয়া রাম কীভাবে নেপালের জনকপুরের সীতাকে বিয়ে করলেন? প্রাচীন আমলে তো দূরবর্তী স্থানে বিয়ের চল ছিল না। ফোন বা যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকলে বিয়েটাই বা হলো কীভাবে?

এই বক্তব্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। অনেকেই ওলির মন্তব্যকে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ এবং ‘রাজনৈতিক চমক’ বলে উল্লেখ করেন।

ক্ষমতা হারানোর পরও কেপি শর্মা ওলি তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরে আসেননি। বরং তিনি তার অবস্থান আরো জোরালো করে বলেছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধিতা করাই ছিল তার প্রধান ‘অপরাধ’। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ওলির এমন বক্তব্য নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।