12:07 am, Sunday, 22 December 2024

কেনিয়াতে ভারত বিরোধী বিক্ষোভের দানা বাঁধছে

ছবি: সংগৃহীত।

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

ভারতের আদানী গ্রপের জন্য সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে যে বিক্ষোভ হয়েছিল তা পক্ষান্তরে ভারত বিরোধিতার শামিল। আবারও সেই আদানী গোষ্টির জন্য আফ্রিকার দেশ কেনিয়াতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এতে করে কংগ্রেসের চরম উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে।

গত কয়েক মাস থেকেই ভালো নেই পূর্ব আফ্রিকার দেশ- কেনিয়া। গেলো জুলাই থেকেই, উত্তপ্ত হয়ে আছে দেশটির পরিস্থিতি। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভের রেশ কাটতে না কাটতেই, দেশটিতে এবার শুরু হয়েছে আদানি গ্রুপকে নিয়ে বিক্ষোভ।

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে একটি বিমানবন্দরের দায়িত্বভার নেয়ার জন্য তোড়জোড় চালাচ্ছে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি। তবে, এর প্রতিবাদে কেনিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আন্দোলনে নেমেছে দেশটির বিমান উড্ডয়ন পরিচালনাকারী কর্মী সংগঠন কেনিয়া এভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন।

নাইরোবির জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কিনতে উদ্যোগী গৌতম আদানির গোষ্ঠী। সে দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন , তার জন্য সেখানে শাখা খুলেছে আদানিরা। এর পরেই কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। আদানিরা সফল হলে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে, এই আশঙ্কায় সোমবারই ধর্মঘট করে ইউনিয়ন।

এমনিতেই তাঁরা চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছে। তার ওপর এখন আদানি গোষ্ঠীর হাতে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণভার গেলে তা হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। কেনিয়ার সরকার অবশ্য বিমানকর্মীদের আশ্বস্ত করেছে, বন্দর বিক্রি হচ্ছে না। এটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ; কার হাতে যাবে তা-ও চূড়ান্ত নয়।

এই বিক্ষোভে নতুন বিপদের গন্ধ পাচ্ছে ভারতের বিরোধী দল। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের আশঙ্কা, এই ঘটনা কেনিয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ইন্ধন দিতে পারে। এক্স হ্যান্ডলে রমেশ লেখেন, আদানিদের বিরুদ্ধে কেনিয়ার মানুষের এই আন্দোলন ভারত সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষে পরিণত হতে পারে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেনিয়ার এভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন আদানির নাইরোবি বিমানবন্দর অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। আর এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ।

এক বিবৃতিতে জয়রাম রমেশ আরও বলেছেন, এটি ভারতের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ আদানির সঙ্গে অজৈবিক প্রধানমন্ত্রীর (নরেন্দ্র মোদির) বন্ধুত্ব এখন বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। তাই এই প্রতিবাদ সহজেই ভারত এবং ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে রূপান্তরিত হতে পারে।

রমেশ বিবৃতিতে আরও বলেছেন, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে আদানি প্রকল্পগুলো নিয়ে একই ধরনের বিতর্ক আমাদের জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং ভারতের জন্য নেতিবাচক ফল বয়ে এনেছে। উদাহরণস্বরূপ, ঝাড়খন্ডে আদানির কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পরিণত হয়েছিল।

কংগ্রেসের এই নেতা আরও বলেন, শ্রীলঙ্কার মান্নার জেলায় আদানি গ্রুপের পুনর্নবায়ণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোও বিতর্ক উসকে দিয়েছিলো। এর কারণে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভও শুরু হয়েছিলো। তিনি বলেন, কেনিয়ার ঘটনা অবশ্যই ভারতের জন্য উদ্বেগের।

উল্লেখ্য, কেনিয়ার এই বিমানবন্দর পরিচালনাসহ আরও কিছু প্রস্তাব দিয়েছে ভারতের আদানি গোষ্ঠী। ৩০ বছরের মেয়াদে বিমানবন্দর পরিচালনা করতে চেয়েছে তারা।

নেতাদের মন্তব্যে বিপাকে মমতার তৃণমূলনেতাদের মন্তব্যে বিপাকে মমতার তৃণমূল
চলতি বছরের শুরুতে তারা মোট ৭৫ কোটি ডলারের প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে আছে বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, ট্যাক্সিওয়ে সংস্কার ও দুটি নতুন দ্রুতগতির ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ। এসব প্রকল্প ২০২৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রস্তাব রয়েছে। সেই সঙ্গে আরও কিছু কাজের জন্য আদানি আরও ৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্রকল্প প্রস্তাব দেয়।

আদানি গোষ্ঠী একই সঙ্গে নাইরোবি শহরে ব্যবসাকেন্দ্র ও হোটেল-মোটেল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। ৩০ বছর এই বিমানবন্দর পরিচালনার পর আদানি গোষ্ঠী কর্তৃপক্ষের কাছে এটি বুঝিয়ে দেবে। উভয় পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে যে মূল্য নির্ধারিত হবে, তার বিনিময়ে এই বিমানবন্দর বুঝিয়ে দেবে আদানি গোষ্ঠী।

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat

কনক্রিট হল ব্লক- বাড়ির শক্ত ভিতের জন্য সেরা পছন্দ

কেনিয়াতে ভারত বিরোধী বিক্ষোভের দানা বাঁধছে

Update Time : 05:26:45 pm, Wednesday, 4 September 2024

ভারতের আদানী গ্রপের জন্য সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে যে বিক্ষোভ হয়েছিল তা পক্ষান্তরে ভারত বিরোধিতার শামিল। আবারও সেই আদানী গোষ্টির জন্য আফ্রিকার দেশ কেনিয়াতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এতে করে কংগ্রেসের চরম উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে।

গত কয়েক মাস থেকেই ভালো নেই পূর্ব আফ্রিকার দেশ- কেনিয়া। গেলো জুলাই থেকেই, উত্তপ্ত হয়ে আছে দেশটির পরিস্থিতি। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভের রেশ কাটতে না কাটতেই, দেশটিতে এবার শুরু হয়েছে আদানি গ্রুপকে নিয়ে বিক্ষোভ।

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে একটি বিমানবন্দরের দায়িত্বভার নেয়ার জন্য তোড়জোড় চালাচ্ছে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি। তবে, এর প্রতিবাদে কেনিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আন্দোলনে নেমেছে দেশটির বিমান উড্ডয়ন পরিচালনাকারী কর্মী সংগঠন কেনিয়া এভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন।

নাইরোবির জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কিনতে উদ্যোগী গৌতম আদানির গোষ্ঠী। সে দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন , তার জন্য সেখানে শাখা খুলেছে আদানিরা। এর পরেই কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। আদানিরা সফল হলে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে, এই আশঙ্কায় সোমবারই ধর্মঘট করে ইউনিয়ন।

এমনিতেই তাঁরা চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছে। তার ওপর এখন আদানি গোষ্ঠীর হাতে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণভার গেলে তা হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। কেনিয়ার সরকার অবশ্য বিমানকর্মীদের আশ্বস্ত করেছে, বন্দর বিক্রি হচ্ছে না। এটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ; কার হাতে যাবে তা-ও চূড়ান্ত নয়।

এই বিক্ষোভে নতুন বিপদের গন্ধ পাচ্ছে ভারতের বিরোধী দল। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের আশঙ্কা, এই ঘটনা কেনিয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ইন্ধন দিতে পারে। এক্স হ্যান্ডলে রমেশ লেখেন, আদানিদের বিরুদ্ধে কেনিয়ার মানুষের এই আন্দোলন ভারত সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষে পরিণত হতে পারে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেনিয়ার এভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন আদানির নাইরোবি বিমানবন্দর অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। আর এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ।

এক বিবৃতিতে জয়রাম রমেশ আরও বলেছেন, এটি ভারতের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ আদানির সঙ্গে অজৈবিক প্রধানমন্ত্রীর (নরেন্দ্র মোদির) বন্ধুত্ব এখন বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। তাই এই প্রতিবাদ সহজেই ভারত এবং ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে রূপান্তরিত হতে পারে।

রমেশ বিবৃতিতে আরও বলেছেন, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে আদানি প্রকল্পগুলো নিয়ে একই ধরনের বিতর্ক আমাদের জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং ভারতের জন্য নেতিবাচক ফল বয়ে এনেছে। উদাহরণস্বরূপ, ঝাড়খন্ডে আদানির কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পরিণত হয়েছিল।

কংগ্রেসের এই নেতা আরও বলেন, শ্রীলঙ্কার মান্নার জেলায় আদানি গ্রুপের পুনর্নবায়ণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোও বিতর্ক উসকে দিয়েছিলো। এর কারণে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভও শুরু হয়েছিলো। তিনি বলেন, কেনিয়ার ঘটনা অবশ্যই ভারতের জন্য উদ্বেগের।

উল্লেখ্য, কেনিয়ার এই বিমানবন্দর পরিচালনাসহ আরও কিছু প্রস্তাব দিয়েছে ভারতের আদানি গোষ্ঠী। ৩০ বছরের মেয়াদে বিমানবন্দর পরিচালনা করতে চেয়েছে তারা।

নেতাদের মন্তব্যে বিপাকে মমতার তৃণমূলনেতাদের মন্তব্যে বিপাকে মমতার তৃণমূল
চলতি বছরের শুরুতে তারা মোট ৭৫ কোটি ডলারের প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে আছে বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, ট্যাক্সিওয়ে সংস্কার ও দুটি নতুন দ্রুতগতির ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ। এসব প্রকল্প ২০২৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রস্তাব রয়েছে। সেই সঙ্গে আরও কিছু কাজের জন্য আদানি আরও ৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্রকল্প প্রস্তাব দেয়।

আদানি গোষ্ঠী একই সঙ্গে নাইরোবি শহরে ব্যবসাকেন্দ্র ও হোটেল-মোটেল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। ৩০ বছর এই বিমানবন্দর পরিচালনার পর আদানি গোষ্ঠী কর্তৃপক্ষের কাছে এটি বুঝিয়ে দেবে। উভয় পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে যে মূল্য নির্ধারিত হবে, তার বিনিময়ে এই বিমানবন্দর বুঝিয়ে দেবে আদানি গোষ্ঠী।