রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণের জন্য সাড়ে ছয় মাস ধরে কাজ করছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড। ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন। তার বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক; অর্থাৎ ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়। তার পরদিন থেকেই মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। সাত দিন ধরে চলা এই আন্দোলন ইতিমধ্যে সহিংস আকার ধারণ করেছে।
২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে গতকাল সোমবার আশুলিয়া-সাভার ও গাজীপুরে সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন শ্রমিকেরা। গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আহত রাসেল হাওলাদার নামের এক শ্রমিক মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে একটি পক্ষ নিজেদের ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে। তা না হলে অন্যান্য শিল্পকারখানায় কেন ভাঙচুর ও লুটপাট হচ্ছে।
সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি, বিজিএমইএ
গাজীপুরের কোনাবাড়ির একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক শরিফুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বেতন দেওয়া হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই টাকায় আমাদের সংসার চলছে না। ঘরভাড়া দেওয়ার পর যা থাকে, তা-ই দিয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছি। এখন আমাদের দাবি, ২৩ হাজার টাকা দিতে হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
মজুরি পুনর্নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা এবং মালিকপক্ষের তুলনামূলক কম মজুরি প্রস্তাবই শ্রম অসন্তোষকে উসকে দিয়েছে বলে মনে করেন শ্রমিকনেতারা। অন্যদিকে মালিকপক্ষের দাবি, একটি পক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা ও কারখানায় ছড়িয়ে পড়ায় পোশাকশিল্পের মালিকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা চলতি সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন।
এদিকে গতকাল এক তথ্য বিবরণীতে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা হওয়ার আগে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না।