মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বেশ কয়েক দিন ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন পোশাকশ্রমিকেরা। আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর মালিকপক্ষ ও পুলিশের হামলা এবং শ্রমিকদের পাল্টা বিক্ষোভের মধ্যে দুজন পোশাকশ্রমিক নিহত হয়েছেন। গাজীপুরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ আশুলিয়া, সাভার হয়ে মিরপুর পর্যন্ত ছড়িয়েছে।
একদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের চড়া দাম, অন্যদিকে মজুরি বোর্ডে মালিকদের কম মজুরি প্রস্তাব—এই দুইয়ে মিলে শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি এমনিতেই অনেক কম। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ন্যূনতম মজুরি সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। শুধু তা-ই নয়, এ অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই খাতভিত্তিক ন্যূনতম মজুরি আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচের স্তরের চেয়েও কম।
সাম্প্রতিক কালে দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের ব্যাপক বৃদ্ধি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন অসহনীয় করে তুলেছে। এ রকম একটা পরিস্থিতিতেই কিন্তু পোশাকশ্রমিকদের সংগঠনগুলো ২৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। শ্রমিকদের দাবির মুখে গত ৯ এপ্রিল ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হলেও শ্রমিকদের দাবি পূরণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২২ অক্টোবর মজুরি বোর্ডের চতুর্থ সভায় পোশাকমালিকদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরি মাত্র ১০ হাজার ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা শ্রমিকদের আরও বিক্ষুব্ধ করে তোলে।
পোশাকমালিকদের এই ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি প্রস্তাব কতটুকু গ্রহণযোগ্য? ২০১৮ সালে যখন ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়, তখন গড়ে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৮৭ পয়সা। ফলে ২০১৮ সালে ডলারে ন্যূনতম মজুরি দাঁড়ায় ৯৫ দশমিক ৩৮ ডলার। বর্তমানে পোশাকমালিকেরা রপ্তানির ক্ষেত্রে ১ ডলার বাবদ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন। ফলে ৯৫ দশমিক ৩৮ ডলারের বর্তমান মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১০ হাজার ৫৩৯ টাকা। ফলে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সর্বশেষ বৈঠকে পোশাকমালিকদের দেওয়া প্রস্তাবিত মজুরি, এমনকি ডলারের মূল্যবৃদ্ধি সমন্বয় করলে ২০১৮ সালের মজুরির বর্তমানে যা দাঁড়ায়, তার চেয়েও ১৩৯ টাকা কম!
আরও পড়ুন