অধ্যাপক ইউনূস, তাড়াতাড়ি আসুন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আপনাকে চান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও তা-ই চেয়েছেন। প্রথম আলোর খবর: নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। (প্রথম আলো, ৭ আগস্ট, ২০২৪) আপনি রাজি হয়েছেন, এটাই এখন মানুষের জন্য বড় একটা ভরসার খবর।
এই মুহূর্তে দেশ হালছাড়া জাহাজের মতো ভাসমান। দেশে একজন রাষ্ট্রপতি আছেন, কিন্তু কার্যত কোনো সরকার নেই। মানুষ একদিকে যেমন নতুন দিনের আশায় উদ্বুদ্ধ, তেমনি আজ এই মুহূর্তটা সে নিরাপদে পার করবে কি না, এই চিন্তায় পেরেশান। বহু মানুষ রাতে ঘুমোতে পারছেন না। এই বুঝি দরজায় আঘাত আসবে, বলবে, এখনই যা আছে, তাই দিয়ে দিন। রাজনৈতিক কর্মীরা নয়, দুর্বৃত্তরা অনেক জায়গায় নেমে পড়েছে। প্রথম দিকে দোকানে দোকানে ডাকাতি হয়েছে। এমন নয় যে এই ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। এগুলো স্রেফ লুটতরাজ।
রাজনৈতিক রংওয়ালা মানুষদের বাড়িঘর–স্থাপনায় হামলা তো হয়েছে। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হবে। আইন থাকবে, কানুন থাকবে, বিচার হবে, শাস্তি হবে। কিন্তু যশোরে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন বহুতল পাঁচতারা হোটেলে আগুন দিয়ে যে মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তারা কেউ আওয়ামী লীগ করত কি? যে বিদেশি হোটেলে উঠেছিলেন রুম বুকিং দিয়ে, তাঁর মৃত্যুর কী মানে? কিংবা আওয়ামী লীগ করেছে বলেই কি বাড়িঘর–কলকারখানা পুড়িয়ে দিতে হবে? বহু পোড়া বাড়ি থেকে এখন শিশুদের লাশ বের হচ্ছে। ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, সামনে পড়ে আছে যে দুটো পোড়া লাশ, তা শিশুর। এক শিশুর মা কেঁদে বলছেন, তাঁর ১৭ বছরের ছেলে ইউসুফ বের হওয়ার সময় বলেছিল, মা, দেশ স্বাধীন করতে যাচ্ছি।
আর দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন। আমাদের সহকর্মী সনাতনধর্মী হঠাৎ ফোন পেয়ে কেঁদে উঠছেন, বাড়িতে হামলা হয়েছে।
অনেক সুখবরও আছে। আশার খবর আছে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মন্দির–মণ্ডপ পাহারা দিচ্ছে। মহল্লার লোকেরা দল বেঁধে রাস্তা পাহারায় বেরিয়ে পড়েছে।
কিন্তু অনেক থানায় পুলিশ নেই। আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী কিছু কিছু দায়িত্ব নিয়েছে আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধ করতে। জেলভাঙা কয়েদিরা এসে আত্মসমর্পণ করবে, কিন্তু কার কাছে করবে?
কারখানায় আগুন দিলে কার ক্ষতি? ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হলে কার লাভ? যে ফুটপাত বা বাজার আওয়ামী লীগের পান্ডারা দখল করত, তা দখল করতে আরেক দল এরই মধ্যে লাঠি নিয়ে মহড়া দেওয়া শুরু করেছে। কোথাও কোথাও সাইনবোর্ড পাল্টে গেছে।
নিপীড়নতন্ত্র, দুর্বৃত্ততন্ত্র, চৌর্যতন্ত্র, লুণ্ঠনতন্ত্র, দখলবাজির বিপরীতে শান্তিবাদ, সুনাগরিকতন্ত্র, অভয়তন্ত্র, সততাতন্ত্র, ন্যায়বিচারতন্ত্র, মানবাধিকারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজটা অনেক বড়। আপাতত গুন্ডা বা ডাকাতেরা যেন জনপদে জনপদে মানুষের জীবন, সম্মান, সম্পত্তির জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়, সে জন্য দেশে সরকার দরকার। আপনি এসে সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রশাসন, পুলিশ, চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠা করুন।
আপনি দেশে এসেছেন, এই খবর শুনলেও দেশের সুনাগরিকেরা ভরসা পাবে, দুর্বৃত্তরা দমে যাবে।
প্রতিটা মুহূর্ত মূল্যবান। তাড়াতাড়ি আসুন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আপনি যত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের মাটিতে পা দেবেন, ততই মঙ্গল।
টেলিগ্রামের আমলে প্রবাসী সন্তানকে বাবা বার্তা পাঠাতেন, মাদার সিরিয়াস কাম শার্প। আমরাও বলছি, বাংলাদেশ নামের দেশটার সিচুয়েশন সিরিয়াস, কাম শার্প।