12:20 am, Monday, 23 December 2024

বিদ্রোহীদের কাছে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে শত শত জান্তা সৈন্যের অসহায় আত্মসমর্পণ

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর শত শত সদস্য

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর শত শত সদস্য। সোমবার ওই রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী তানাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) কাছে জান্তা বাহিনীর অন্তত ১৫০ সৈন্য আত্মসমর্পণ করেন। এ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে কেবল এই রাজ্যেই ৬৫০ জনের বেশি জান্তা সৈন্য বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইনসহ অন্যান্য প্রদেশেও জান্তা সৈন্যরা বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইয়ে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংঘাতে বিপর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে সেখানকার স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করে আসা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।

মঙ্গলবার থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইরাবতির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে শান রাজ্যের সাখান থিত কোন ঘাঁটির দেড় শতাধিক সৈন্য টিএনএলএ বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পালিয়ে গেছেন এই ঘাঁটির আরও শত শত সৈন্য।

শান রাজ্যের সাখান থিত কোন ঘাঁটির নেতৃত্বে ছিলেন মেজর মিন্ট কিয়াউ। নামখাম শহরের কাছের এই ঘাঁটি থেকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতেন জান্তা সৈন্যরা। পরে টিএনএলএ যোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় তারা পিছু হটে। এ সময় মেজর মিন্ট কিয়াউসহ সেখানকার দেড় শতাধিক সৈন্য বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

আশপাশের কয়েকটি শহরের জান্তা বাহিনীর ঘাঁটি থেকে সাখান থিত কোনের সৈন্যদের সহায়তা করা হলেও তারা লড়াইয়ে টিকতে পারেননি। এমনকি সৈন্যদের সহায়তায় দেশটির বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে বিদ্রোহীদের অবস্থানে হামলা চালানো হয়। কিন্তু তাতেও সৈন্যরা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়তে ব্যর্থ হন।

দ্য ইরাবতি বলছে, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মির (এএ) সমন্বয়ে গঠন করা জান্তাবিরোধী জোটের চলমান অপারেশন-১০২৭ এর অংশ হিসাবে গত ২৭ অক্টোবর থেকে শান রাজ্যজুড়ে হামলা চালাচ্ছে বিদ্রোহীরা।

দেশটির এই সংবাদমাধ্যম বলছে, জাতিগত বিদ্রোহীগোষ্ঠী টিএনএলএ সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে শান রাজ্যের নমশান শহরের দখল নেওয়ার দাবি করেছে। গত ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সামরিক ব্যাটালিয়ন, ঘাঁটি এবং পুলিশ স্টেশনের বিরুদ্ধে ছয় দিনের টানা আক্রমণের পর শহরটির দখল নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে টিএনএলএ।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওয়াই-১২, এআরটি-৪২ পরিবহন বিমান, এমআই-৩৫ যুদ্ধবিমান থেকে হামলা সত্ত্বেও নমশান দখল করেছে টিএনএলএ বিদ্রোহীরা। বিমান হামলার পাশাপাশি নমশান শহরের কাছের মানতং শহরে বিদ্রোহীদের অবস্থানে জান্তা-নিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনীর আর্টিলারি ইউনিট গোলাবর্ষণ করেছে।

ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমএনডিএএ, টিএনএলএ এবং আরাকান আর্মির সমন্বিত আক্রমণ শুরুর পর থেকে উত্তর শান রাজ্যে অন্তত ৪৫০ জান্তা সৈন্য ও সহযোগী মিলিশিয়া সদস্যরা বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এই রাজ্যে ২৭০টিরও বেশি জান্তা ফাঁড়ি এবং ঘাঁটি দখলে নিয়েছে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহীদের জোট।

আরাকান আর্মি (এএ) বলেছে, তারা রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে অন্তত ১৫টি এবং প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরের দখল সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। এই দুই রাজ্যে সেনাবাহিনীর ১৪২টি সামরিক চৌকির দখলও নিয়েছে তারা।

মিয়ানমারের দুই-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডজুড়ে সামরিক বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলছে। বিদ্রোহী-জান্তার লড়াইয়ে গত কয়েক মাসে ৩৬০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। এই সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন পাঁচ লাখের বেশি মানুষ।

সূত্র: দ্য ইরাবতি।

 

Tag :

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট

Bangladesh Diplomat | বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট | A Popular News Portal Of Bangladesh.

বিদ্রোহীদের কাছে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে শত শত জান্তা সৈন্যের অসহায় আত্মসমর্পণ

Update Time : 11:57:15 pm, Tuesday, 19 December 2023

বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর শত শত সদস্য

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর শত শত সদস্য। সোমবার ওই রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী তানাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) কাছে জান্তা বাহিনীর অন্তত ১৫০ সৈন্য আত্মসমর্পণ করেন। এ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে কেবল এই রাজ্যেই ৬৫০ জনের বেশি জান্তা সৈন্য বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইনসহ অন্যান্য প্রদেশেও জান্তা সৈন্যরা বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইয়ে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংঘাতে বিপর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে সেখানকার স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করে আসা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।

মঙ্গলবার থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইরাবতির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে শান রাজ্যের সাখান থিত কোন ঘাঁটির দেড় শতাধিক সৈন্য টিএনএলএ বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পালিয়ে গেছেন এই ঘাঁটির আরও শত শত সৈন্য।

শান রাজ্যের সাখান থিত কোন ঘাঁটির নেতৃত্বে ছিলেন মেজর মিন্ট কিয়াউ। নামখাম শহরের কাছের এই ঘাঁটি থেকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতেন জান্তা সৈন্যরা। পরে টিএনএলএ যোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় তারা পিছু হটে। এ সময় মেজর মিন্ট কিয়াউসহ সেখানকার দেড় শতাধিক সৈন্য বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

আশপাশের কয়েকটি শহরের জান্তা বাহিনীর ঘাঁটি থেকে সাখান থিত কোনের সৈন্যদের সহায়তা করা হলেও তারা লড়াইয়ে টিকতে পারেননি। এমনকি সৈন্যদের সহায়তায় দেশটির বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে বিদ্রোহীদের অবস্থানে হামলা চালানো হয়। কিন্তু তাতেও সৈন্যরা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়তে ব্যর্থ হন।

দ্য ইরাবতি বলছে, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মির (এএ) সমন্বয়ে গঠন করা জান্তাবিরোধী জোটের চলমান অপারেশন-১০২৭ এর অংশ হিসাবে গত ২৭ অক্টোবর থেকে শান রাজ্যজুড়ে হামলা চালাচ্ছে বিদ্রোহীরা।

দেশটির এই সংবাদমাধ্যম বলছে, জাতিগত বিদ্রোহীগোষ্ঠী টিএনএলএ সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে শান রাজ্যের নমশান শহরের দখল নেওয়ার দাবি করেছে। গত ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সামরিক ব্যাটালিয়ন, ঘাঁটি এবং পুলিশ স্টেশনের বিরুদ্ধে ছয় দিনের টানা আক্রমণের পর শহরটির দখল নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে টিএনএলএ।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওয়াই-১২, এআরটি-৪২ পরিবহন বিমান, এমআই-৩৫ যুদ্ধবিমান থেকে হামলা সত্ত্বেও নমশান দখল করেছে টিএনএলএ বিদ্রোহীরা। বিমান হামলার পাশাপাশি নমশান শহরের কাছের মানতং শহরে বিদ্রোহীদের অবস্থানে জান্তা-নিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনীর আর্টিলারি ইউনিট গোলাবর্ষণ করেছে।

ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমএনডিএএ, টিএনএলএ এবং আরাকান আর্মির সমন্বিত আক্রমণ শুরুর পর থেকে উত্তর শান রাজ্যে অন্তত ৪৫০ জান্তা সৈন্য ও সহযোগী মিলিশিয়া সদস্যরা বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এই রাজ্যে ২৭০টিরও বেশি জান্তা ফাঁড়ি এবং ঘাঁটি দখলে নিয়েছে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহীদের জোট।

আরাকান আর্মি (এএ) বলেছে, তারা রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে অন্তত ১৫টি এবং প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরের দখল সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। এই দুই রাজ্যে সেনাবাহিনীর ১৪২টি সামরিক চৌকির দখলও নিয়েছে তারা।

মিয়ানমারের দুই-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডজুড়ে সামরিক বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলছে। বিদ্রোহী-জান্তার লড়াইয়ে গত কয়েক মাসে ৩৬০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। এই সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন পাঁচ লাখের বেশি মানুষ।

সূত্র: দ্য ইরাবতি।