প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফুট উঁচু দুটি সমান্তরাল ভবন ও ১০০ মাইল দৈর্ঘ্য নিয়ে গড়ে উঠছে সৌদি আরবের নিওম শহর। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই শহরটি কোটি কোটি পরিযায়ী পাখির মরণফাঁদ হবে।
সৌদি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বাইরে কাচের আবরণে ঢাকা সুদীর্ঘ ভবন দুটি দেশটির উপকূলীয়, পার্বত্য, ও মরুভূমির বুক চিড়ে গড়ে উঠছে। ১ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে বানানো এই শহরটি তার বাসিন্দাদের এক অভূতপূর্ব জীবনের অভিজ্ঞতা দেবে এবং পারিপার্শ্বিক প্রকৃতিকেও রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে সংরক্ষণবাদীরা বিশাল এই প্রকল্পের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এটি প্রতিবছর ইউরোপ এবং আফ্রিকার মধ্যে পাড়ি জমানো পাখিদের জন্য একটি মারাত্মক বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
স্যাটেলাইট চিত্রগুলোতে দেখা যায়, নিওম শহরের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। সৌদি আরব এটিকে ‘সভ্যতার বিপ্লব’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও গবেষকেরা এটিকে প্রাকৃতিক সংরক্ষণকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী পৃথিবীর শীর্ষ ১৫ প্রকল্পের একটি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
গত সোমবার প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণে শহরটি প্রতিবছর সৌদি আরবে অভিবাসী পাখিদের জন্য একটি বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে শহরটির বাইরের দিকে কাচের আবরণ, শহরের দিকনির্দেশনা এবং সবার ওপরে থাকা উইন্ড টারবাইনগুলো।
এ বিষয়ে দ্য টাইমসকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণা পরিচালক প্রফেসর উইলিয়াম সাদারল্যান্ড জানান, শহরের বাইরের আবরণটি কাচের হওয়ায় পাখিরা বুঝতেই পারবে না তাদের সামনে একটি বাধা অপেক্ষা করছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি নিয়ে না ভাবলে পরিযায়ী পাখিদের অনেক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর শহরের মাথায় থাকা টারবাইনগুলো নিশ্চিতভাবেই পাখিদের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাবে।
টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পথ ধরে চলাচলকারী পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে রয়েছে নাইটিঙ্গেল, হুইটিয়েটার, লার্কস, স্যান্ডগ্রাউস এবং ঘুঘু। এ ছাড়া মিসরীয় শকুন এবং সাকার ফ্যালকনের মতো দুটি বিপন্নপ্রায় পাখিও এই পথ ধরে চলাচল করে।
গবেষকদের সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, শহরটি সম্পন্ন হওয়ার আগেই ইতিমধ্যে প্রায় ২১ লাখ পাখির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি শরতে এই পাখিগুলো ইউরোপ এবং আফ্রিকার মধ্যে ভ্রমণ করে।
সমীক্ষায় আরও জানানো হয়—উঁচু ভবন বিশেষ করে কাচ ও আয়নাযুক্ত ভবনগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর ৯৮ কোটি ৮০ লাখ পাখি মারা যায়।
পাখিদের সমস্যা সৃষ্টির বিষয়ে নিওম শহরের একজন মুখপাত্র টাইমসকে জানিয়েছেন, পশু ও পাখির অভিবাসনের ধরনগুলো বোঝার জন্য এবং কীভাবে তাদের ক্ষতি প্রশমিত করা যায়—সেই বিষয়ে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে তারা যৌথ গবেষণা পরিচালনা করছেন। এ ক্ষেত্রে শহরের মধ্য দিয়েই পশুপাখির চলাফেরার জন্য কিছু ক্রসিং পয়েন্ট রাখার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।