১০ বছর ধরে টানা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শামীম ওসমান। এর আগে ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদেও তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন।
১০ বছরের ব্যবধানে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন তিনি। বেড়েছে আয়, কিনেছেন দুটি গাড়ি ও জমি।
কিন্তু ১০ বছরেও শোধ করেননি প্রবাসী বন্ধুর ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ টাকার দেনা।
২০১৪ সালে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল একটি; বর্তমানে তিনি পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক
দশম, একাদশ ও আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া শামীম ওসমানের হলফনামা বিশ্লেষণে এই তথ্য জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একই আসনে প্রার্থী হয়েছেন রাজধানী লাগোয়া নারায়ণগঞ্জের এই প্রভাবশালী নেতা।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৪ সালে শামীম ওসমানের দেনা ছিল ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ টাকা। এর মধ্যে প্রবাসী বন্ধু অনুপ কুমার সাহা তার কাছে পেতেন ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ টাকা এবং তার স্ত্রীর আপন বড়ভাই শামীম আহমেদ পেতেন ৬০ লাখ টাকা।
২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, স্ত্রীর বড়ভাইয়ের দেনা শোধ করলেও বন্ধুর দেনা শোধ করেননি শামীম ওসমান। বন্ধুর দেনার সঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ব্যাংক ঋণও যুক্ত হয় শামীম ওসমানের নামে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তার ঋণ ছিল ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৭ হাজার ৮১৭ টাকা। বর্তমানে তার ঋণ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৭৬ টাকা। এর মধ্যে বন্ধু অনুপ কুমারের ২৬ লাখ টাকাও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত আমরা খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আর ও (অনুপ) পুরোপুরি প্রবাসীও না। বাংলাদেশেও থাকে, বিদেশেও থাকে। আমরা যেহেতু খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ওরও টাকার প্রয়োজন হয়নি, তাই নেয়নি। এইটা আমাদের মধ্যে নতুন কিছু না।
বিগত সময়ের তুলনায় ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার মূলত শিপিং বিজনেস। ব্যাংক লোন নিয়ে জাহাজ তৈরি করা হয় আমার প্রতিষ্ঠানে। কোভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সংকটে পড়তে হয়েছে। ফলে বাড়ি বন্ধক রেখে লোন নিতে হয়েছে। এই সংকট শুধু আমার নয়; অন্য ব্যবসায়ীদেরও একই পরিস্থিতি।”
হলফনামা অনুযায়ী, ২০১৪ সালে শামীম ওসমানের বাড়িভাড়া, ব্যবসা, সঞ্চয়পত্র বা আমানতের সুদসহ বিভিন্ন খাতে আয় ছিল ২৭ লাখ ৪৩ হাজার ৮২৭ টাকা। ২০১৮ সালে একইখাতে (সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানিভাতা যুক্ত) আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ লাখ ৩ হাজার ৬৭০ টাকা। ২০২৩ সালে এই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯ লাখ ৭ হাজার ৪৯৩ টাকা।
১০ বছর আগে শামীম ওসমানের স্থাবর সম্পত্তি ছিল ৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯২ টাকা। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ৫ বছর পর ২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৯ টাকায়।
যদিও ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৭ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে শামীম ওসমানের অস্থাবর সম্পদ কমেছে।
২০১৪ সালে শামীম ওসমানের কোনো গাড়ি ছিল না। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ডকুজার নামে একটি গাড়ি কেনেন তিনি। এটি ২০১৮ সালের হলফনামায় উল্লেখ করেন তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ৮১ লাখ ৭৬ হাজার টাকার একই মডেলের আরেকটি গাড়ি কেনেন তিনি।
১০ বছর আগে শামীম ওসমানের স্থাবর সম্পদের তালিকায় ১০ শতাংশ জমি, ১৬ শতাংশ জমির ওপর দোতলা আবাসিক বাড়ি, হেবাসূত্রে ৯ কাঠা জমি ছিল। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, সোনারগাঁয়ের বারদী ইউনিয়নে ১২৩ শতাংশ এবং পূর্বাচল নিউ টাউনে ১০ কাঠা জমি কেনেন তিনি। তবে গত ৫ বছরে স্থাবর সম্পত্তির তালিকায় নতুন কোনো জমির পরিমাণ যুক্ত হয়নি।
বর্তমানে কয়েক কোটি টাকা ঋণগ্রস্ত হলেও শামীম ওসমানের গত দশ বছরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৪ সালে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল একটি। ২০১৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় চারটিতে। বর্তমানে তিনি পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক।
তার মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হল- জ্বালানি তেল আমদানি, পরিবহন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেড এন করপোরেশন, শিপিং (পণ্য এবং জ্বালানি পরিবহন) প্রতিষ্ঠান জেড এন শিপিং লাইন্স লিমিটেড, শিপিং (জ্বালানি পরিবহন) প্রতিষ্ঠান মাইশা এন্টারপ্রাইজ, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেড এবং উইসডম নিটিং মিলস্ লিমিটেড।
খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেড এবং উইসডম নিটিং মিলস্ লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান দুটি তার নামে নতুন যুক্ত হওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দাখিল করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় এ দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল না।
ওই সময় শীতল এসি ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ থাকলেও এবার তিনি সেটি উল্লেখ করেননি।
সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম