দেশে চাঁদাবাজির প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজি দৃশ্যমানভাবে বাড়তে শুরু করেছে, যা এখন ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাধারণ জনগণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া এই সংকট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আগে যেখানে এক টাকা চাঁদা নেওয়া হতো, এখন সেখানে দেড় বা দুই টাকা নেওয়া হচ্ছে। আগে যারা যুক্ত ছিল না, তারাও এখন যুক্ত হচ্ছে, এমনকি ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যরাও।”
চাঁদাবাজির কারণে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। সরকার এখনো ‘একে ধরো, ওকে ধরো’ নীতিতে যাচ্ছে না।”
চাঁদাবাজির পাশাপাশি ড. সালেহউদ্দিন অর্থপাচার ইস্যুতেও আশার কথা জানান। তিনি বলেন, “টাকা যারা পাচার করেছে তারা খুব কৌশলী। তবে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কিছু অর্থ ফেরত আসবে। বাকি অর্থ ফেরাতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তথ্য সংগ্রহ করছে এবং ইতোমধ্যে কিছু বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। তবে মোট কত অর্থ পাচার হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ভালোভাবে জানাতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আগামী ডিসেম্বরেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা রাশিয়াকে আগেই জানিয়ে দিয়েছি। ইতোমধ্যে জ্বালানি এসে গেছে, আইএইএ-এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে।”
তবে কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম এখনো নির্ধারণ হয়নি বলেও জানান তিনি।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন, “আগামী সরকারে মন্ত্রী হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। আমি ব্র্যাকে পড়াতাম, এখনও তারা আমার জন্য অফিস-গাড়ি রেখেছে। ড্রাইভার মাঝেমধ্যে ফোন করে জিজ্ঞেস করে—‘স্যার গাড়ি আনব?’ এটাই আমার জন্য বড় স্বস্তি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি সবসময় সততার সঙ্গে কাজ করেছি। সব সরকারের আমলেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি—বার্ড, পিকেএসএফ, এনজিও ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে।”
বাংলাদেশে এখনো শিশু ও নারীদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা। বিবিএস-এর তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশে প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে ৩টি পরিবার এখনো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিশেষ ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ ও জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও খাদ্যাভ্যাস এখনো সুষম নয়।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষের আমিষ গ্রহণের হার কমে গেছে। ডিমের মতো সাধারণ আমিষও অনেকেই কিনতে পারছে না।”