ইরানে হিজাববিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিযোগে মেহরান বাহরামিয়ান নামে এক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) কার্যকর করা হয়। দেশটির বিচার বিভাগীয় বার্তা সংস্থা ‘মিজান’ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইস্ফাহান প্রদেশের সেমিরোম এলাকায় চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের একটি গাড়ির দিকে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে মেহরানের বিরুদ্ধে। এতে মোহসিন রেজাই নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন এবং আহত হন আরও কয়েকজন। ঘটনার পর তাকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর আদালত তার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করে, যা আজ সকালের দিকে কার্যকর করা হয়।
এই ঘটনায় শুধু মেহরান নয়, তার পুরো পরিবারই চরম মূল্য দিচ্ছে। তার আরেক ভাই ফাজেল বাহরামিয়ানকেও একই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা এখনো কার্যকর হয়নি। আর তাঁদের ছোট ভাই মোরাদ বাহরামিয়ান ২০২২ সালের সেই বিক্ষোভেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন। একটি পরিবার—তিন ভাই; একজনের ফাঁসি, একজন মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায়, আর একজন বিক্ষোভেই প্রাণ হারিয়েছেন।
মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ইরানজুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভে অংশগ্রহণের দায়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরানি সরকার। এসব ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ইরানে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নাগরিকদের জোর করে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়—যার পেছনে থাকে মারধর, মানসিক নির্যাতন এবং পরিবারের সদস্যদের হুমকির মতো ভয়ংকর পন্থা। এসব স্বীকারোক্তিই পরবর্তীতে আদালতে ‘প্রমাণ’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের পরিপন্থী বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনি ‘হিজাব সঠিকভাবে না পরা’র অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুই ছিল দেশজুড়ে ব্যাপক গণবিক্ষোভের সূচনা—যেখানে নারীর অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।