7:46 pm, Saturday, 6 September 2025

নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, কবর থেকে লাশ তুলে আগুন

নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, কবর থেকে লাশ তুলে আগুন। ছবি: সংগৃহীত

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবিকারী নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র কবর ভেঙে উত্তেজিত জনতা তার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার জুরান মোল্লাপাড়া এলাকায় এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান জানান, ঘটনার সময় একদল তৌহিদি জনতা সংগঠিত হয়ে প্রথমে দরবার শরিফ ও নুরুল হকের বাড়িতে হামলা চালায়। শুরু হয় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই দরবারের অনুসারী।

এ সময় ইউএনওর গাড়ি ও পুলিশের দুটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ও র‍্যাব মোতায়েনের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নুরুল হক সম্প্রতি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করলে তাকে গোয়ালন্দ দরবারে মাটি থেকে উঁচু স্থানে, কাবা শরিফের আদলে নির্মিত এক কাঠামোর ভেতরে দাফন করা হয়। এ ব্যতিক্রমী দাফন পদ্ধতি ঘিরে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন আলোচনা করে একটি কমিটি গঠন করে এবং নুরুল হকের পরিবারকে কবর সংস্কারের জন্য সময়ও দেয়। কিন্তু শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হওয়া তৌহিদি জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে এবং পরে দরবারে হামলা চালায়।

প্রথম দফার হামলার পর দ্বিতীয় দফায় তারা বাড়িতে গিয়ে কবর খুঁড়ে মরদেহ উত্তোলন করে। পরে সেটি মহাসড়কের মোড়ে এনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, নুরুল হক নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ এমনকি ‘খোদা’ দাবি করতেন, যা তারা শরিয়তবিরোধী ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, কবর ধ্বংস ও মরদেহ পোড়ানোর মাধ্যমে ‘ভণ্ডামির অবসান’ হয়েছে।

অন্যদিকে, নুরুল হকের ছেলে মেহেদী নূর জিলানী দাবি করেন, “আমার বাবাকে শরিয়ত মোতাবেক ও তার ওছিয়ত অনুযায়ী দাফন করা হয়েছিল। কবরটি মাত্র ৩-৪ ফুট উঁচু ছিল, ১২ ফুট নয়।” তিনি বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে।”

এ ঘটনায় গোয়ালন্দ থানায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি, তবে পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, আশির দশকে নুরুল হক নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন। তখন তিনি এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও পরে ফিরে এসে ‘দরবার শরিফ’ গড়ে তোলেন।

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat

নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, কবর থেকে লাশ তুলে আগুন

Update Time : 10:44:58 am, Saturday, 6 September 2025

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবিকারী নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র কবর ভেঙে উত্তেজিত জনতা তার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার জুরান মোল্লাপাড়া এলাকায় এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান জানান, ঘটনার সময় একদল তৌহিদি জনতা সংগঠিত হয়ে প্রথমে দরবার শরিফ ও নুরুল হকের বাড়িতে হামলা চালায়। শুরু হয় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই দরবারের অনুসারী।

এ সময় ইউএনওর গাড়ি ও পুলিশের দুটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ও র‍্যাব মোতায়েনের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নুরুল হক সম্প্রতি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করলে তাকে গোয়ালন্দ দরবারে মাটি থেকে উঁচু স্থানে, কাবা শরিফের আদলে নির্মিত এক কাঠামোর ভেতরে দাফন করা হয়। এ ব্যতিক্রমী দাফন পদ্ধতি ঘিরে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন আলোচনা করে একটি কমিটি গঠন করে এবং নুরুল হকের পরিবারকে কবর সংস্কারের জন্য সময়ও দেয়। কিন্তু শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হওয়া তৌহিদি জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে এবং পরে দরবারে হামলা চালায়।

প্রথম দফার হামলার পর দ্বিতীয় দফায় তারা বাড়িতে গিয়ে কবর খুঁড়ে মরদেহ উত্তোলন করে। পরে সেটি মহাসড়কের মোড়ে এনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, নুরুল হক নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ এমনকি ‘খোদা’ দাবি করতেন, যা তারা শরিয়তবিরোধী ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, কবর ধ্বংস ও মরদেহ পোড়ানোর মাধ্যমে ‘ভণ্ডামির অবসান’ হয়েছে।

অন্যদিকে, নুরুল হকের ছেলে মেহেদী নূর জিলানী দাবি করেন, “আমার বাবাকে শরিয়ত মোতাবেক ও তার ওছিয়ত অনুযায়ী দাফন করা হয়েছিল। কবরটি মাত্র ৩-৪ ফুট উঁচু ছিল, ১২ ফুট নয়।” তিনি বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে।”

এ ঘটনায় গোয়ালন্দ থানায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি, তবে পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, আশির দশকে নুরুল হক নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন। তখন তিনি এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও পরে ফিরে এসে ‘দরবার শরিফ’ গড়ে তোলেন।