10:38 am, Thursday, 28 August 2025

দিল্লিতে হাসিনা-এস আলমের গোপন বৈঠক, দেশবিরোধী নতুন ষড়যন্ত্র!

দিল্লিতে হাসিনা-এস আলমের গোপন বৈঠক, দেশবিরোধী নতুন ষড়যন্ত্র!। ছবি: সংগৃহীত

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন। তবে দেশের বাইরে থেকেও ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় ফেরাতে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দিল্লিতে গোপন বৈঠকে মিলিত হন শেখ হাসিনা ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। বৈঠকে তারা আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফেরানোর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনাকে ২৫০০ কোটি টাকা হস্তান্তর করেছেন এবং আরো দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন এস আলম। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার হটাতে তৈরি করা হচ্ছে ভয়াবহ নাশকতার ছক। বিভিন্ন দেশে পলাতক মুজিববাদী নেতাকর্মী এবং আমলা, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাদের দিয়ে আঁটা হচ্ছে কূটকৌশল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলীয় ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

ভারতে বসে এ নীলনকশা প্রস্তুত করছেন শেখ হাসিনা।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, পবিত্র উমরাহ পালন করার দোহাই দিলেও সাইফুল আলম মাসুদের মক্কায় যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি সেখানে যান মূলত দেশ থেকে পালানো আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। মক্কার ফেয়ারমন্ট হোটেলে বসে তিনি পলাতক আওয়ামী নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের বিনিময়ে মক্কায় একটি বিলাসবহুল হোটেল কেনার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও জরুরি মিটিং করেন এস আলম। মক্কায় পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেশবিরোধী বিভিন্ন পরিকল্পনা সাজানো শেষে ৪ আগস্ট এস আলম মদিনায় চলে যান এবং ‘ইলাফ আল তাকওয়া’ হোটেলে উঠেন। সেখানে তিনি চট্টগ্রামের কিছু চিহ্নিত আওয়ামী ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। দুই দিন সেখানে অবস্থান শেষে ৬ আগস্ট তিনি দুবাইতে চলে যান।

আরব আমিরাতের দুবাইতে কোনো রকম বিলম্ব না করে ৬ আগস্ট বিশেষ ফ্লাইটে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে পৌঁছান এস আলম।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, দিল্লি সফরে তার সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তাদের ছোট ছেলে ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক একজন চেয়ারম্যান। দিল্লিতে নেমে তারা ওঠেন ভারতের বিখ্যাত পাঁচ তারকা হোটেল দি ওবেরেই নিউ দিল্লিতে আর সেখান থেকে শুরু হয় এস আলমের এই সফরের মূল অ্যাজেন্ডা।

এ সময় তার সাথে দেখা করেন পলাতক সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ অনেকে। মূলত দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক আলোচনা হয় তাদের মধ্যে। এস আলমের দিল্লি সফরের সবচেয়ে বড় অ্যাজেন্ডা ছিল স্বয়ং শেখ হাসিনার সাথে গোপন মিটিং। ৮ আগস্ট দুপুরে হোটেলে এস আলম তার সব ফোন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস রেখে একটি নম্বরপ্লেটহীন গাড়িতে রওনা করেন, আর পথে দুই-দুইবার পরিবর্তন করা হয় তাকে বহন করা গাড়ি। অবশেষে তাকে বহনকারী গাড়িটি পৌঁছায় Lutyens Bungalwo Zone-LBZ-এ অবস্থিত হাসিনার বাসভবনে। সেখানে এস আলম বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করেন।

এই দীর্ঘ সময়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত আলাপ হয় এস আলমের। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই সময়ে ভারতের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা ও ক্ষমতায় ফিরে আসতে তার দীর্ঘদিনের সহযোগী এস আলমের কাছে চার হাজার পাঁচশত কোটি টাকা চান এবং এস আলম এই পরিমাণ টাকা তাকে দিতে সম্মত হন। এই অর্থ নির্দিষ্ট কিছু খাতে ব্যয় করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

যার মধ্যে রয়েছে- প্রথমত. ইন্ট্যারন্যাশনাল লবি ও বিভিন্ন দেশের পলিসি মেকারদের আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করার জন্য ম্যানেজ করা; দ্বিতীয়ত. আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দেশজুড়ে নাশকতা সৃষ্টি করে এমন এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হয়; তৃতীয়ত. সরকারি আমলা, পুলিশ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কিনে ফেলা; চতুর্থত. আওয়ামী নেতাকর্মীদের জামিনের লক্ষ্যে খরচ করা এবং পঞ্চমত. এস আলমের সুগার রিফাইনারিসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগঠন করা।

আর এ অর্থ গ্রহণ, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত তিনজনের কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন— আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

সূত্র : আমার দেশ।

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat

দিল্লিতে হাসিনা-এস আলমের গোপন বৈঠক, দেশবিরোধী নতুন ষড়যন্ত্র!

Update Time : 10:08:26 am, Thursday, 28 August 2025

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন। তবে দেশের বাইরে থেকেও ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় ফেরাতে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দিল্লিতে গোপন বৈঠকে মিলিত হন শেখ হাসিনা ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। বৈঠকে তারা আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফেরানোর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনাকে ২৫০০ কোটি টাকা হস্তান্তর করেছেন এবং আরো দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন এস আলম। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার হটাতে তৈরি করা হচ্ছে ভয়াবহ নাশকতার ছক। বিভিন্ন দেশে পলাতক মুজিববাদী নেতাকর্মী এবং আমলা, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাদের দিয়ে আঁটা হচ্ছে কূটকৌশল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলীয় ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

ভারতে বসে এ নীলনকশা প্রস্তুত করছেন শেখ হাসিনা।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, পবিত্র উমরাহ পালন করার দোহাই দিলেও সাইফুল আলম মাসুদের মক্কায় যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি সেখানে যান মূলত দেশ থেকে পালানো আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। মক্কার ফেয়ারমন্ট হোটেলে বসে তিনি পলাতক আওয়ামী নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের বিনিময়ে মক্কায় একটি বিলাসবহুল হোটেল কেনার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও জরুরি মিটিং করেন এস আলম। মক্কায় পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেশবিরোধী বিভিন্ন পরিকল্পনা সাজানো শেষে ৪ আগস্ট এস আলম মদিনায় চলে যান এবং ‘ইলাফ আল তাকওয়া’ হোটেলে উঠেন। সেখানে তিনি চট্টগ্রামের কিছু চিহ্নিত আওয়ামী ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। দুই দিন সেখানে অবস্থান শেষে ৬ আগস্ট তিনি দুবাইতে চলে যান।

আরব আমিরাতের দুবাইতে কোনো রকম বিলম্ব না করে ৬ আগস্ট বিশেষ ফ্লাইটে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে পৌঁছান এস আলম।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, দিল্লি সফরে তার সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তাদের ছোট ছেলে ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক একজন চেয়ারম্যান। দিল্লিতে নেমে তারা ওঠেন ভারতের বিখ্যাত পাঁচ তারকা হোটেল দি ওবেরেই নিউ দিল্লিতে আর সেখান থেকে শুরু হয় এস আলমের এই সফরের মূল অ্যাজেন্ডা।

এ সময় তার সাথে দেখা করেন পলাতক সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ অনেকে। মূলত দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক আলোচনা হয় তাদের মধ্যে। এস আলমের দিল্লি সফরের সবচেয়ে বড় অ্যাজেন্ডা ছিল স্বয়ং শেখ হাসিনার সাথে গোপন মিটিং। ৮ আগস্ট দুপুরে হোটেলে এস আলম তার সব ফোন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস রেখে একটি নম্বরপ্লেটহীন গাড়িতে রওনা করেন, আর পথে দুই-দুইবার পরিবর্তন করা হয় তাকে বহন করা গাড়ি। অবশেষে তাকে বহনকারী গাড়িটি পৌঁছায় Lutyens Bungalwo Zone-LBZ-এ অবস্থিত হাসিনার বাসভবনে। সেখানে এস আলম বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করেন।

এই দীর্ঘ সময়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত আলাপ হয় এস আলমের। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই সময়ে ভারতের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা ও ক্ষমতায় ফিরে আসতে তার দীর্ঘদিনের সহযোগী এস আলমের কাছে চার হাজার পাঁচশত কোটি টাকা চান এবং এস আলম এই পরিমাণ টাকা তাকে দিতে সম্মত হন। এই অর্থ নির্দিষ্ট কিছু খাতে ব্যয় করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

যার মধ্যে রয়েছে- প্রথমত. ইন্ট্যারন্যাশনাল লবি ও বিভিন্ন দেশের পলিসি মেকারদের আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করার জন্য ম্যানেজ করা; দ্বিতীয়ত. আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দেশজুড়ে নাশকতা সৃষ্টি করে এমন এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হয়; তৃতীয়ত. সরকারি আমলা, পুলিশ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কিনে ফেলা; চতুর্থত. আওয়ামী নেতাকর্মীদের জামিনের লক্ষ্যে খরচ করা এবং পঞ্চমত. এস আলমের সুগার রিফাইনারিসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগঠন করা।

আর এ অর্থ গ্রহণ, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত তিনজনের কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন— আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

সূত্র : আমার দেশ।