বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জাতীয় পর্যায়ের গবেষণা বলছে, এখন দেশের প্রতি ১০ জন মানুষের একজন চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, আরও প্রায় ১৮ শতাংশ মানুষ আছেন এমন এক অবস্থায়, যেখান থেকে তারা যেকোনো সময় গরিব হয়ে যেতে পারেন। অর্থাৎ দেশের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষ এখন দারিদ্র্যের সরাসরি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এই তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)-এর এক জরিপ থেকে। ২০২৫ সালের মে মাসে পরিচালিত এই গবেষণায় দেশের ৮ হাজার ৬৭টি পরিবারের ৩৩ হাজার ২০৭ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। গবেষণাটি অর্থায়ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিইডি মিলনায়তনে এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু সাধারণ দারিদ্র্য নয়, অতি দারিদ্র্যও বিগত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২২ সালে সরকারি হিসাবে অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে। এ তথ্য দেশজুড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের দুরবস্থার একটি বড় ইঙ্গিত দেয়।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, বর্তমানে অনেক পরিবার রয়েছে যারা স্থায়ীভাবে গরিব না হলেও একটি দুর্ঘটনা, অসুস্থতা কিংবা আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে দ্রুত দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যেতে পারে। এই ‘ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণি’ বর্তমানে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে। আয় কমে যাওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার খরচ বেড়ে যাওয়া এবং সামাজিক নিরাপত্তার ঘাটতি—সব মিলিয়ে দেশের অনেক পরিবার আজ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে।
এই বাস্তবতায় গবেষকরা মনে করছেন, এখনই প্রয়োজন দারিদ্র্য মোকাবেলায় টেকসই ও লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া। সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা, কর্মসংস্থান তৈরি এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সহায়ক নীতি গ্রহণ ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।