এখন আমাদের জীবনের প্রায় সব জায়গায় জড়িত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। অনলাইন কেনাকাটা, ব্যাংকিং, চিকিৎসা থেকে শুরু করে আড্ডা-গল্প—সব জায়গায় যেন এআই’র ছোঁয়া। কিন্তু এই সুবিধার মাঝেই লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর ঝুঁকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই ব্যবহারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এক নতুন মানসিক রোগে—‘এআই সাইকোসিস’ নামে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এমন এক মানসিক সমস্যা যেখানে কোনো ব্যক্তি এআই সম্পর্কিত ভ্রান্ত বিশ্বাস, অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা বা চরম ভয়ের মধ্যে ডুবে থাকে। আক্রান্তের মনে হতে পারে এআই তার উপর নজরদারি করছে, চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করছে, এমনকি তার জীবনের সিদ্ধান্তও প্রভাবিত করছে। আবার কখনও এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি বাস্তব মানুষের চেয়ে এআই-এর ভার্চুয়াল সংলাপকেই বেশি বাস্তবসম্মত এবং বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে শুরু করে।
উপসর্গ-
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এআই সাইকোসিসের লক্ষণ হঠাৎ করে নয়, বরং ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে ভ্রান্ত বিশ্বাস তৈরি হতে পারে। যেমন এআই সিস্টেম তার উপর নজরদারি করছে।
অতিরিক্ত যোগাযোগ-
ঘণ্টার পর ঘণ্টা এআই চ্যাটবট বা ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গে কথা বলা, কিন্তু বাস্তব মানুষের সঙ্গে মেলামেশা এড়িয়ে চলাও এই রোগের লক্ষণ।
বাস্তবতা নিয়ে বিভ্রান্তি-
আসল ও ডিজিটাল জগতের সীমারেখা ঝাপসা হয়ে যায় রোগীর কাছে। তিনি বুঝতে পারেন না কোনটা সত্যি, যেটা বাস্তবে তার সামনে ঘটছে না এআই তাকে যা বোঝাচ্ছে।
প্রযুক্তি-ভীতি-
এমন ভয় তৈরি হওয়া যে মোবাইল, কম্পিউটার, এমনকি স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করতেও আতঙ্গে লাগে।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা-
বন্ধু-পরিজন থেকে দূরে থাকা, অনলাইনেই একাকী সময় কাটানো।
কারণ-
এই রোগের পেছনে একাধিক কারণ আছে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনে আটকে থাকা, ভার্চুয়াল জগতে অতিমাত্রায় ডুবে থাকা, প্রযুক্তি নিয়ে ভুল তথ্য বা গুজব শোনা এর প্রধান কারণ। কখনও কখনও আগে থাকা মানসিক সমস্যা থেকেও এমন রোগ দেখা দিতে পারে। একাকীত্ব, অনিদ্রা, দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগও এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।
চিকিৎসা-
* চিকিৎসার প্রথম ধাপ হল রোগীর বাস্তবতা বোধ ফিরিয়ে আনা।
* কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যকর।
* প্রয়োজনে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
* নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রযুক্তি থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা।
* বন্ধু, পরিবার, শখ ও সামাজিক কার্যকলাপে সক্রিয় অংশগ্রহণ।
* প্রযুক্তির সীমা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, প্রতিদিনের জীবনে প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়মিত সময়সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং বাস্তব জীবনের সম্পর্ক বজায় রাখা, এসবই এআই সাইকোসিসের ঝুঁকি কমায়। একই সঙ্গে শিশুরা কতটা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তার উপরে বাবা মায়ের নজরদারি অপরিহার্য।