ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে আইসিসির চার কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার (২০ আগস্ট) মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের অধীনস্থ অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (OFAC) এই সিদ্ধান্ত নেয়। এর মাধ্যমে বিচারপতি নিকোলাস ইয়ান গুইলু, উপ-প্রসিকিউটর নাজহাত শামীম খান, মামে মানদিয়ায় নিয়াং এবং কিম্বারলি প্রোস্টকে ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত নাগরিকদের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, আইসিসির বিচারপতি গুইলুর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদনের সিদ্ধান্তে যুক্ত থাকার কারণে। অপরদিকে, কিম্বারলি প্রোস্টকে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্ত অনুমোদনের কারণে। উপ-প্রসিকিউটর খান ও নিয়াংকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আদালতের ‘অবৈধ পদক্ষেপ’ সমর্থনের অভিযোগে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এই কর্মকর্তারা আমেরিকান এবং মিত্র দেশ ইসরায়েলের সম্মতি ছাড়াই তাদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাই ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার ১৪২০৩’-এর আওতায় এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় গৃহীত এক ধরনের আইনি কাঠামো।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে সংশ্লিষ্ট আইসিসি কর্মকর্তাদের যেকোনো সম্পদ বা আর্থিক লেনদেন অবরুদ্ধ হয়ে যাবে। এমনকি, তারা যেসব প্রতিষ্ঠানে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার ধারণ করেন, সেসব প্রতিষ্ঠানও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র ও আইসিসির মধ্যে এ ধরনের বিরোধ নতুন নয়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও আইসিসির কিছু কর্মকর্তা, বিশেষ করে প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, একই অভিযোগে— যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে ‘অবৈধ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত’ তদন্ত পরিচালনার চেষ্টা।
অন্যদিকে, ইসরায়েল বর্তমানে আন্তর্জাতিক আদালতগুলোর নজরদারিতে রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চালানো সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এবং জনসংখ্যার বড় একটি অংশ দুর্ভিক্ষের মুখে। এসব ঘটনার জেরে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি।