পাকিস্তানের গিলগিট-বালতিস্তান, আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার একাধিক এলাকায় প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস। এতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, পাহাড়ি এলাকায় আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
গিলগিট-বালতিস্তানের ঘিজার জেলার খালথি উপত্যকায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে একাধিক বাড়ি, এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত তিনজন। একই জেলার ডায়াম এলাকায় ভয়াবহ বন্যায় ভাইবোন ভেসে গেছে স্রোতে, আর বাবুসর সড়কে ভূমিধসে গুরুতর আহত হয়েছে এক শিশু।
ঘিজারের ইয়াসিন থোই এলাকায় আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ি-ঘর, বিদ্যালয়, পানির ট্যাংক ও কৃষিজমি। ভূমিধসে বালতিস্তান ও সাদপাড়া সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোহিস্তানে করাকোরাম মহাসড়কের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় গিলগিট-বালতিস্তান ও দেশের অন্যান্য অংশের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
গিলগিট-বালতিস্তান সরকার ইতিমধ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে রেসকিউ ১১২২ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।
সরকারের মুখপাত্র ফায়জুল্লাহ ফারাক বলেন, “এটি গিলগিট-বালতিস্তানের জন্য এক কঠিন সময়। আমরা সমস্ত সরকারি সম্পদ কাজে লাগিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করছি।”
আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতিও একইভাবে ভয়াবহ। মুজাফফরাবাদের নাসিরাবাদ তেহসিলে মেঘভাঙা বৃষ্টির (ক্লাউডবার্স্ট) ঘটনায় একই পরিবারের ছয়জন নিহত হয়েছেন। নদী-উপনদীগুলো উপচে পড়েছে, হুমকির মুখে রয়েছে নদীর তীরবর্তী জনপদ।
বাগ জেলায় প্রবল বর্ষণে নদীর পানি উপচে একটি পর্যটকবাহী গাড়ি ভেসে গেলেও, ভাগ্যক্রমে গাড়িতে থাকা সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
নীলম ভ্যালি, ঝেলাম, হাত্তিয়ান বালা ও সামাহনির মতো এলাকায় পানির প্রবাহ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আজাদ কাশ্মীরের সব স্কুল ১৬ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আজাদ কাশ্মীরের তথ্যমন্ত্রী মাজহার সাঈদ জানিয়েছেন, পর্যটনকেন্দ্র রাত্তি গালিতে প্রায় ৭০০ পর্যটক আটকা পড়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ৩০০ জন নারী ও শিশু। উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী আনোয়ার উল হক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা, গৃহহীনদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় জরুরি চেকপোস্ট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।