11:31 pm, Monday, 12 May 2025

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করতে চায় নির্বাচন কমিশন

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন ও ইসির সঙ্গে দলটির সব কার্যক্রম ও যোগাযোগ স্থগিত করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য সরকারের প্রজ্ঞাপনের দিকে তাকিয়ে কমিশন। আজ সোমবার সরকারের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারি করার কথা রয়েছে। এরপরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, নিবন্ধন পদ্ধতি চালুর পর রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করলে শুধু কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘটনা এটাই প্রথম। সরকার কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে ওই দলের নিবন্ধন বাতিল হবে—এমন বিধান আরপিওতে রয়েছে। দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে, ওই দলের নিবন্ধন থাকবে কি না—সেই বিষয়ে আইনে স্পষ্ট বিধান নেই। এমন পরিস্থিতিতে দলটির নিবন্ধন স্থগিতের বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে যেসব বিষয় উল্লেখ থাকবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে কমিশন।

তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা জানান, জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ, দলের বিচারের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সংশোধনী এনেছে সরকার। এখন দলটির নিবন্ধন রাখবে কি না এবং আরপিওতে সংশোধনী চাইবে কি না—এসব বিষয়ে ইসিকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বহাল রাখা হলে এবং ওই সুযোগ নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলটির নেতারা অংশগ্রহণ করলে এবং নির্বাচনি প্রচারণা চালালে তখন পরিস্থিতি কী হবে—সেটাও ভাবতে হবে ইসিকে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার হিসাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে সরকার। যেই দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, সেই দলের নিবন্ধন থাকবে কীভাবে? এজন্য অন্যান্য আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনবে নাকি অন্য কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না—সেই বিষয়ে কমিশন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই ক্ষমতা কমিশনের রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বহাল থাকলে দলটিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। ওই সুযোগ নিয়ে দলটির কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হলে ইসি কী করবে, তাও ইসিকেই ভাবতে হবে।

ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত দুই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়ে থাকে। প্রথমত, আইন (আরপিও) অনুযায়ী এবং দ্বিতীয়ত, আদালতের রায় অনুযায়ী। তারা উদাহরণ টেনে বলেন, হাইকোর্টের একটি আদেশ অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছিল তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। আপিল বিভাগে আবেদন নিষ্পত্তির আগেই ইসি ওই পদক্ষেপ নেয়। আইনি লড়াই শেষ না হওয়ায় দলটি এখনো নিবন্ধন ফিরে পায়নি।

ওই কর্মকর্তারা জানান, আইনিভাবে নিবন্ধন বাতিল করার বিষয়টি আরপিওর ৯০জ উপধারায় উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলকে সরকার নিষিদ্ধ করলে ওই দলের নিবন্ধন ইসি বাতিল করবে। তারা বলেন, সরকার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করেনি, দলটির সব কার্যক্রম বাতিল করেছে। এ বিষয়ে আরপিওতে স্পষ্ট বিধান নেই। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে চাইলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধনীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব করতে পারে। অথবা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে ইসির। এক্ষেত্রে দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা হতে পারে। সেটা হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসন্ন সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাবে না।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার যুগান্তরকে বলেন, সরকার কীভাবে আদেশ বা প্রজ্ঞাপন জারি করে, সেখানে কী কী শর্ত ও বিষয়বস্তু উল্লেখ করবে, সেগুলো দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি সোমবার সরকারের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারব। এরপরই সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক করব। প্রজ্ঞাপন না দেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

বিদ্যমান আরপিও অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের সুযোগ নেই বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী। তিনি বলেন, দল হিসাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করায় ইসি নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে না। তবে যেহেতু আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেহেতু নিবন্ধন স্থগিত করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, নিবন্ধন স্থগিত করা হলে দলটি নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া, ওই প্রার্থীদের জন্য ইসির প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া এবং কমিশন থেকে ভোটার তালিকা সরবরাহের মতো সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট

Bangladesh Diplomat | বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট | A Popular News Portal Of Bangladesh.

কনক্রিট হল ব্লক- বাড়ির শক্ত ভিতের জন্য সেরা পছন্দ

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করতে চায় নির্বাচন কমিশন

Update Time : 10:11:46 am, Monday, 12 May 2025

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন ও ইসির সঙ্গে দলটির সব কার্যক্রম ও যোগাযোগ স্থগিত করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য সরকারের প্রজ্ঞাপনের দিকে তাকিয়ে কমিশন। আজ সোমবার সরকারের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারি করার কথা রয়েছে। এরপরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, নিবন্ধন পদ্ধতি চালুর পর রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করলে শুধু কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘটনা এটাই প্রথম। সরকার কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে ওই দলের নিবন্ধন বাতিল হবে—এমন বিধান আরপিওতে রয়েছে। দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে, ওই দলের নিবন্ধন থাকবে কি না—সেই বিষয়ে আইনে স্পষ্ট বিধান নেই। এমন পরিস্থিতিতে দলটির নিবন্ধন স্থগিতের বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে যেসব বিষয় উল্লেখ থাকবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে কমিশন।

তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা জানান, জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ, দলের বিচারের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সংশোধনী এনেছে সরকার। এখন দলটির নিবন্ধন রাখবে কি না এবং আরপিওতে সংশোধনী চাইবে কি না—এসব বিষয়ে ইসিকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বহাল রাখা হলে এবং ওই সুযোগ নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলটির নেতারা অংশগ্রহণ করলে এবং নির্বাচনি প্রচারণা চালালে তখন পরিস্থিতি কী হবে—সেটাও ভাবতে হবে ইসিকে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার হিসাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে সরকার। যেই দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, সেই দলের নিবন্ধন থাকবে কীভাবে? এজন্য অন্যান্য আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনবে নাকি অন্য কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না—সেই বিষয়ে কমিশন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই ক্ষমতা কমিশনের রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বহাল থাকলে দলটিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। ওই সুযোগ নিয়ে দলটির কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হলে ইসি কী করবে, তাও ইসিকেই ভাবতে হবে।

ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত দুই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়ে থাকে। প্রথমত, আইন (আরপিও) অনুযায়ী এবং দ্বিতীয়ত, আদালতের রায় অনুযায়ী। তারা উদাহরণ টেনে বলেন, হাইকোর্টের একটি আদেশ অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছিল তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। আপিল বিভাগে আবেদন নিষ্পত্তির আগেই ইসি ওই পদক্ষেপ নেয়। আইনি লড়াই শেষ না হওয়ায় দলটি এখনো নিবন্ধন ফিরে পায়নি।

ওই কর্মকর্তারা জানান, আইনিভাবে নিবন্ধন বাতিল করার বিষয়টি আরপিওর ৯০জ উপধারায় উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলকে সরকার নিষিদ্ধ করলে ওই দলের নিবন্ধন ইসি বাতিল করবে। তারা বলেন, সরকার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করেনি, দলটির সব কার্যক্রম বাতিল করেছে। এ বিষয়ে আরপিওতে স্পষ্ট বিধান নেই। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে চাইলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধনীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব করতে পারে। অথবা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে ইসির। এক্ষেত্রে দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা হতে পারে। সেটা হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসন্ন সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাবে না।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার যুগান্তরকে বলেন, সরকার কীভাবে আদেশ বা প্রজ্ঞাপন জারি করে, সেখানে কী কী শর্ত ও বিষয়বস্তু উল্লেখ করবে, সেগুলো দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি সোমবার সরকারের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারব। এরপরই সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক করব। প্রজ্ঞাপন না দেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

বিদ্যমান আরপিও অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের সুযোগ নেই বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী। তিনি বলেন, দল হিসাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করায় ইসি নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে না। তবে যেহেতু আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেহেতু নিবন্ধন স্থগিত করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, নিবন্ধন স্থগিত করা হলে দলটি নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া, ওই প্রার্থীদের জন্য ইসির প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া এবং কমিশন থেকে ভোটার তালিকা সরবরাহের মতো সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।