9:49 pm, Saturday, 21 December 2024

আওয়ামী লীগ দেশটাকে গোরস্থানে পরিণত করেছিল: জামায়াত আমির

  • Akram
  • Update Time : 05:45:22 pm, Saturday, 21 December 2024
  • 21

আওয়ামী লীগ দেশটাকে গোরস্থানে পরিণত করেছিল: জামায়াত আমির

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশটাকে গোরস্তানে পরিণত করেছিল। তাদেরকে বিদায় করতে সাড়ে ১৫ বছর আমরা দফায় দফায় অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারিনি। স্বৈরাচারকে আমরা তাড়াতে পারিনি, বিদায় করতে পারিনি।

তিনি বলেন, আমি গর্বিত, আমাদের সন্তানেরা সেই কাজটি করেছে। আমি আমাদের সন্তানদেরকে ভালোবাসা উপহার দিচ্ছি। শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জাতির পক্ষ থেকে তাদেরকে স্যালুট জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে তারা অসাধ্য সাধন করেছে। এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। ইনশাআল্লাহ আগামীর বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতেই তুলে দেবো।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা শাখার আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী, সহকারী সেক্রেটারি হারুনুর রশিদ যৌথভাবে এই সম্মেলন পরিচালনা করেন।

বক্তব্যের শুরুতেই জামায়াত আমির জুলাই আন্দোলনের বীর সৈনিকদের একটি স্লোগান উচ্চারণ করে বলেন, বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। তাদের ক্ষোভটা ছিল সাড়ে ১৫টা বছর। এ সময়টায় তারা জাতির ঘাড়ে বসে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। দেশটাকে শ্মশান কিংবা গোরস্তানে পরিণত করেছিল। এরা মাঝে মাঝে বলতো দেশে নাকি অনাবিল শান্তি বিরাজ করছে। আমরা বলতাম শান্তি তোমরা কায়েম করেছো কবরের মতো। যেখান থেকে হাসি কিংবা কান্নার শব্দ শোনা যায় না। কবরস্থানে কোনো মানুষ থাকে না। হাসি কান্নার আওয়াজ শোনা যায় না। ২৮ অক্টোবর তারা লাশের ওপর নর্দন করেছে। তখনই তারা জানান দিয়েছিল যে ক্ষমতায় এসে খুন-গুমের রাজ্য কায়েম করবে। আমরা সেদিন আমাদের বুকের কান্না বাংলাদেশের মানুষের কাছে হয়তো বা পৌঁছাতে পারিনি। এরপর পেছনে বোঝাপড়া করে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং একটি জঘন্য সরকারে হাত ধরে করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তারা জয়লাভ করেছিল। ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসে খুনের নেশা বাস্তবায়নের কর্মসূচি হাতে নেয়।

তিনি বলেন, প্রথমে তারা খুন করে সেনাবাহিনীর চৌকস ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাকে পিলখানায়। ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি মাস না যেতেই তারা খুনের রাজত্ব কায়েম করে। সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়। বিডিআর বাহিনী ধ্বংস করে সেই বাহিনীর সাড়ে ১৭ হাজার সদস্যকে চাকরিচ্যুত করলো। সাড়ে ৮ হাজারকে জেলে দিলো। আমাদের গর্বের বাহিনী ধ্বংস হলো। ক্ষমতায় যাওয়ার শেষ সিঁড়ি হিসেবে এদের ব্যবহার করে চক্রান্ত করে ধ্বংস করে দিলো। বাহিনীর নাম বদলে বিজিবি রাখা হয়েছে। আগে নাম ছিল বাংলাদেশ রাইফেলস। আর এখন নাম দিয়েছে বর্ডারের চৌকিদার। লোগো বদলিয়েছে, ড্রেস বদলিয়েছে। নাম বদলিয়ে ফেলেছে। কারা হত্যাকারী ছিল জাতিকে জানতে দেওয়া হলো না। লুকোচুরি করা হলো। রাতের অন্ধকারে বিদ্যুতের আলো কেড়ে নিয়ে, অন্ধকার করে খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলো। একটা বিশেষ দেশের প্লেন কেন এসেছিল ঢাকায়? এরপর হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল কীভাবে। তার জবাব স্বৈরাচারী সরকাররা না দিলেও একদিন তাদেরকে দিতে হবে। আমরা সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এরপর শুরু হলো তাদের তাণ্ডব। তাদের প্রথম লক্ষ্যবস্তু করলো জামায়াতে ইসলামীকে; যারা পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক। তারা তাদের সততায় দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছিল। দক্ষতার সাক্ষর রেখেছিলেন। দায়িত্বের পরতে পরতে সেই সমস্ত নেতৃবৃন্দকে ঠান্ডা মাথায়, মিথ্যা অভিযোগ সাজানো কোর্ট, পাতানো সাক্ষী এবং ব্রাসেলস থেকে রায় এনে সেই সমস্ত নেতৃবৃন্দকে খুন করা হলো। ফাঁসি দেওয়া হলো। কাউকে কাউকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হলো, জেলের ভেতর মৃত্যু করলেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা তখন আমাদের বন্ধু সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠনকে বলেছিলাম, এটি জামায়াতের ওপর আঘাত নয়। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের এই বিশাল দেওয়াল ভেঙে দিলে বাকিরা সবাই ভেসে যাবেন, কেউ টিকতে পারবেন না। আমাদের পাশে দাঁড়ান। ফ্যাসিজমকে সম্মিলিতভাবে আমরা মোকাবিলা করি। আমরা কথাগুলো বুঝাইতে পারি নাই। সবাই মিলে একসঙ্গে সেই যুদ্ধটা করতে পারলাম না। তার পরের ইতিহাস আপনাদের সামনে পরিষ্কার। তারা আর কাউকে ছাড়লো না। এক এক করে সবাইকে ধরলো। বিএনপিকে ধরলো, হেফাজককে ধরলো, আলেম ওলামাকে ধরলো, অন্যান্য দলকে ধরলো। কাউকে তারা ছাড় দিলো না। এমনকি এইযে সাংবাদিক বন্ধুরা আজকে এসেছে নিউজ কাভার করতে; তাদেরকের ধরলো। তাদেরকে খুন করলো, তাদেরকে আমাদের সঙ্গে গুম করলো। তাদের আয়নাঘরে পাঠালো। কাউকে কাউকে ভারতের ওপাড়ে বর্ডারে নিয়ে ফেলে দিলো। এভাবে তারা সারাটা দেশকে নরকে পরিণত করেছিল।

তিনি উল্লেখ করেন, আজকে যুবকরা বলতেছে আমাদের ভোট চুরি করেছিল। তিনটা নির্বাচন আজ যাদের বয়স ৩০-৩২ বছর; তারা একটা ভোটও দিতে পারেনি। তাদের সমস্ত ভোটকে জেনোসাইড করেছিল, গণহত্যা করেছিল। ভোটের গণহত্যা। এদের নৈতিক সাহস ছিল না দেশে থাকার। এজন্য দেশ থেকে পালিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, জাতিকে এরা ৫৩ বছর বিভিন্ন কায়দায় ফ্যাসিজমের মাধ্যমে দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, মেজরিটি শক্তি, মাইনোরিটি শক্তি, কতভাবে যে ভাগ করেছে এরা। কারণ একটা জাতিকে যখন টুকরা টুকরা করা যায়, তখন তাদের গোলাম বানানো সম্ভব। এরা ধরে নিয়েছিল তারা দেশের মালিক, আমরা সবাই ভাড়াটিয়া। হ্যাঁ মালিকরাই দেশে আছে ভাড়াটিয়ারা পালিয়ে গেছে।

তিনি ভারতের উদ্দেশে বলেন, প্রতিদেশী দেশকে বলতে চাই, আপনারা শান্তিতে থাকেন। আমাদেরকেও শান্তিতে থাকতে দেন। আপনাদের পাকঘরে কী পাকাবেন আমরা জিজ্ঞেস করি না। আমাদের পাকঘরে উঁকি মারার চেষ্টা করবেন না। নিজেরা আয়নায় চেহারা দেখুন। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবক দিতে হবে না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অ্যাগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কেন? মৌলভীবাজার কী অপরাধ করেছে? সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন এই জেলার কৃতিসন্তান একজন কৃতি অর্থনীতিবিদ ছিলেন। তিনি সারা দেশকে সমান চোখে দেখতেন। আগামীবার একনেকে যেন মৌলভীবাজারে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বরাদ্দ দিয়ে অন্য কোনো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেই দাবি জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মৌলভীবাজারে সবচেয়ে বেশি চা বাগান। রাষ্ট্রীয় যথাযথ পর্যবেক্ষণ না থাকায় চা শিল্প ধ্বংস হওয়ার পথে। মালিক পক্ষ চায়ের যথাযথ মূল্য পান না। শ্রমিকরাও পারিশ্রমিক পান না। তিনি নেতাকর্মীদের চারটি বিষয় তুলে ধরেন। এর মধ্যে নিয়ত সহি করে জ্ঞানের রাজ্যে এগিয়ে গিয়ে সাহসী হয়ে কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান করেন। সব শেষ তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

Tag :

Write Your Comment

About Author Information

Akram

কনক্রিট হল ব্লক- বাড়ির শক্ত ভিতের জন্য সেরা পছন্দ

আওয়ামী লীগ দেশটাকে গোরস্থানে পরিণত করেছিল: জামায়াত আমির

Update Time : 05:45:22 pm, Saturday, 21 December 2024

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশটাকে গোরস্তানে পরিণত করেছিল। তাদেরকে বিদায় করতে সাড়ে ১৫ বছর আমরা দফায় দফায় অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারিনি। স্বৈরাচারকে আমরা তাড়াতে পারিনি, বিদায় করতে পারিনি।

তিনি বলেন, আমি গর্বিত, আমাদের সন্তানেরা সেই কাজটি করেছে। আমি আমাদের সন্তানদেরকে ভালোবাসা উপহার দিচ্ছি। শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জাতির পক্ষ থেকে তাদেরকে স্যালুট জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে তারা অসাধ্য সাধন করেছে। এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। ইনশাআল্লাহ আগামীর বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতেই তুলে দেবো।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা শাখার আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী, সহকারী সেক্রেটারি হারুনুর রশিদ যৌথভাবে এই সম্মেলন পরিচালনা করেন।

বক্তব্যের শুরুতেই জামায়াত আমির জুলাই আন্দোলনের বীর সৈনিকদের একটি স্লোগান উচ্চারণ করে বলেন, বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। তাদের ক্ষোভটা ছিল সাড়ে ১৫টা বছর। এ সময়টায় তারা জাতির ঘাড়ে বসে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। দেশটাকে শ্মশান কিংবা গোরস্তানে পরিণত করেছিল। এরা মাঝে মাঝে বলতো দেশে নাকি অনাবিল শান্তি বিরাজ করছে। আমরা বলতাম শান্তি তোমরা কায়েম করেছো কবরের মতো। যেখান থেকে হাসি কিংবা কান্নার শব্দ শোনা যায় না। কবরস্থানে কোনো মানুষ থাকে না। হাসি কান্নার আওয়াজ শোনা যায় না। ২৮ অক্টোবর তারা লাশের ওপর নর্দন করেছে। তখনই তারা জানান দিয়েছিল যে ক্ষমতায় এসে খুন-গুমের রাজ্য কায়েম করবে। আমরা সেদিন আমাদের বুকের কান্না বাংলাদেশের মানুষের কাছে হয়তো বা পৌঁছাতে পারিনি। এরপর পেছনে বোঝাপড়া করে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং একটি জঘন্য সরকারে হাত ধরে করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তারা জয়লাভ করেছিল। ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসে খুনের নেশা বাস্তবায়নের কর্মসূচি হাতে নেয়।

তিনি বলেন, প্রথমে তারা খুন করে সেনাবাহিনীর চৌকস ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাকে পিলখানায়। ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি মাস না যেতেই তারা খুনের রাজত্ব কায়েম করে। সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়। বিডিআর বাহিনী ধ্বংস করে সেই বাহিনীর সাড়ে ১৭ হাজার সদস্যকে চাকরিচ্যুত করলো। সাড়ে ৮ হাজারকে জেলে দিলো। আমাদের গর্বের বাহিনী ধ্বংস হলো। ক্ষমতায় যাওয়ার শেষ সিঁড়ি হিসেবে এদের ব্যবহার করে চক্রান্ত করে ধ্বংস করে দিলো। বাহিনীর নাম বদলে বিজিবি রাখা হয়েছে। আগে নাম ছিল বাংলাদেশ রাইফেলস। আর এখন নাম দিয়েছে বর্ডারের চৌকিদার। লোগো বদলিয়েছে, ড্রেস বদলিয়েছে। নাম বদলিয়ে ফেলেছে। কারা হত্যাকারী ছিল জাতিকে জানতে দেওয়া হলো না। লুকোচুরি করা হলো। রাতের অন্ধকারে বিদ্যুতের আলো কেড়ে নিয়ে, অন্ধকার করে খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলো। একটা বিশেষ দেশের প্লেন কেন এসেছিল ঢাকায়? এরপর হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল কীভাবে। তার জবাব স্বৈরাচারী সরকাররা না দিলেও একদিন তাদেরকে দিতে হবে। আমরা সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এরপর শুরু হলো তাদের তাণ্ডব। তাদের প্রথম লক্ষ্যবস্তু করলো জামায়াতে ইসলামীকে; যারা পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক। তারা তাদের সততায় দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছিল। দক্ষতার সাক্ষর রেখেছিলেন। দায়িত্বের পরতে পরতে সেই সমস্ত নেতৃবৃন্দকে ঠান্ডা মাথায়, মিথ্যা অভিযোগ সাজানো কোর্ট, পাতানো সাক্ষী এবং ব্রাসেলস থেকে রায় এনে সেই সমস্ত নেতৃবৃন্দকে খুন করা হলো। ফাঁসি দেওয়া হলো। কাউকে কাউকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হলো, জেলের ভেতর মৃত্যু করলেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা তখন আমাদের বন্ধু সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠনকে বলেছিলাম, এটি জামায়াতের ওপর আঘাত নয়। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের এই বিশাল দেওয়াল ভেঙে দিলে বাকিরা সবাই ভেসে যাবেন, কেউ টিকতে পারবেন না। আমাদের পাশে দাঁড়ান। ফ্যাসিজমকে সম্মিলিতভাবে আমরা মোকাবিলা করি। আমরা কথাগুলো বুঝাইতে পারি নাই। সবাই মিলে একসঙ্গে সেই যুদ্ধটা করতে পারলাম না। তার পরের ইতিহাস আপনাদের সামনে পরিষ্কার। তারা আর কাউকে ছাড়লো না। এক এক করে সবাইকে ধরলো। বিএনপিকে ধরলো, হেফাজককে ধরলো, আলেম ওলামাকে ধরলো, অন্যান্য দলকে ধরলো। কাউকে তারা ছাড় দিলো না। এমনকি এইযে সাংবাদিক বন্ধুরা আজকে এসেছে নিউজ কাভার করতে; তাদেরকের ধরলো। তাদেরকে খুন করলো, তাদেরকে আমাদের সঙ্গে গুম করলো। তাদের আয়নাঘরে পাঠালো। কাউকে কাউকে ভারতের ওপাড়ে বর্ডারে নিয়ে ফেলে দিলো। এভাবে তারা সারাটা দেশকে নরকে পরিণত করেছিল।

তিনি উল্লেখ করেন, আজকে যুবকরা বলতেছে আমাদের ভোট চুরি করেছিল। তিনটা নির্বাচন আজ যাদের বয়স ৩০-৩২ বছর; তারা একটা ভোটও দিতে পারেনি। তাদের সমস্ত ভোটকে জেনোসাইড করেছিল, গণহত্যা করেছিল। ভোটের গণহত্যা। এদের নৈতিক সাহস ছিল না দেশে থাকার। এজন্য দেশ থেকে পালিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, জাতিকে এরা ৫৩ বছর বিভিন্ন কায়দায় ফ্যাসিজমের মাধ্যমে দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, মেজরিটি শক্তি, মাইনোরিটি শক্তি, কতভাবে যে ভাগ করেছে এরা। কারণ একটা জাতিকে যখন টুকরা টুকরা করা যায়, তখন তাদের গোলাম বানানো সম্ভব। এরা ধরে নিয়েছিল তারা দেশের মালিক, আমরা সবাই ভাড়াটিয়া। হ্যাঁ মালিকরাই দেশে আছে ভাড়াটিয়ারা পালিয়ে গেছে।

তিনি ভারতের উদ্দেশে বলেন, প্রতিদেশী দেশকে বলতে চাই, আপনারা শান্তিতে থাকেন। আমাদেরকেও শান্তিতে থাকতে দেন। আপনাদের পাকঘরে কী পাকাবেন আমরা জিজ্ঞেস করি না। আমাদের পাকঘরে উঁকি মারার চেষ্টা করবেন না। নিজেরা আয়নায় চেহারা দেখুন। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবক দিতে হবে না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অ্যাগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কেন? মৌলভীবাজার কী অপরাধ করেছে? সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন এই জেলার কৃতিসন্তান একজন কৃতি অর্থনীতিবিদ ছিলেন। তিনি সারা দেশকে সমান চোখে দেখতেন। আগামীবার একনেকে যেন মৌলভীবাজারে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বরাদ্দ দিয়ে অন্য কোনো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেই দাবি জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মৌলভীবাজারে সবচেয়ে বেশি চা বাগান। রাষ্ট্রীয় যথাযথ পর্যবেক্ষণ না থাকায় চা শিল্প ধ্বংস হওয়ার পথে। মালিক পক্ষ চায়ের যথাযথ মূল্য পান না। শ্রমিকরাও পারিশ্রমিক পান না। তিনি নেতাকর্মীদের চারটি বিষয় তুলে ধরেন। এর মধ্যে নিয়ত সহি করে জ্ঞানের রাজ্যে এগিয়ে গিয়ে সাহসী হয়ে কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান করেন। সব শেষ তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।