শুধু হুংকার না দিয়ে ভারতের ক্ষতিকর সব প্রকল্প বাতিলের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির নেতৃত্বে ‘৭১ থেকে ২৪ বিজয়ের লড়াই: ৫৩ বছরের সকল লড়াইয়ের স্মৃতি যাপনে পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরুর আগে এ আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাদের বলবো, ভারতের বিরুদ্ধে হুংকার দেওয়াই যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ভারতের সুনির্দিষ্ট যেসব প্রকল্প আছে, সেগুলো বাতিল করার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, অনেকে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যেটা বাংলাদেশের সর্বনাশ করছে; সেটা বাতিল করার কথা বলছেন না। আমরা সেটা বাতিল করার দাবি জানাই। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রাশিয়ার অর্থায়নে করা হলেও এটি ভারতের ব্যবস্থাপনায় তৈরি হচ্ছে। ভারতের আধিপত্য এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যেও আছে। ভয়ঙ্কর এই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানাই। সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি জানাই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানাই, দেশের কোনো সংখ্যালঘু বা কোনো মানুষ যেন নিপীড়নের শিকার না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি যারা মব ভায়োলেন্স, জোর জবরদস্তি করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ২০০৬ সালে পোশাক শ্রমিকরা তাদের মজুরির দাবিতে আন্দোলন করেছেন। ২০০৬ সালে কৃষকদের বিশাল আন্দোলনে ২০ জন শহিদ হন। ফুলবাড়ির গণঅভ্যুত্থানে তিনজন শহিদ হন। ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণের বিরুদ্ধে আন্দোলন তৈরি হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ক্ষমতা চিরস্থায়ীকরণের বাসনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এরপর ২০১৪ সাল থেকে একের পর এক আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
তিনি বলেন, এর মধ্যে জাতীয় সম্পদ তেল, গ্যাস, কয়লাসহ যেসব চুক্তি করা হতে থাকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়। সুন্দরবন রক্ষার জন্য আন্দোলন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষকে ব্যাপকভাবে ঐক্যবদ্ধ করে। পাশাপাশি গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, বাংলাদেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কৃষক-শ্রমিক-নারীদের আন্দোলন এই দেশে তৈরি হয়েছে। যে আন্দোলনের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে গত জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত একটা সরকারকে উৎখাত করা হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ আবারও প্রমাণ করেছে তাদের উপরে স্বৈরশাসনের আধিপত্য আছে কিন্তু জনগণের প্রতিরোধ ও শক্তি, সর্বজনের বাংলাদেশ গড়ার যে ঐক্য, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার যে আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষায় মানুষ কখনো হাল ছাড়েনি। সে লড়াই অব্যাহত আছে এবং সে লড়াই অব্যাহত রাখার বার্তা নিয়ে আমরা আজ এই পদযাত্রার আয়োজন করেছি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান যে কোনো বহিরাগত শাসকশ্রেণির সাম্রাজ্যবাদ যে নামেই ডাকি না কেন, কারও আধিপত্য এই দেশ গ্রহণ করবে না। আজ যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের বৈষম্যহীন বাংলাদেশের এই ক্ষেত্রগুলোতে যথাযথ ভূমিকা পালনের দাবি জানাবো। সরকার গঠনের দুই মাসের মধ্যে আমরা সরকারের আশু করণীয় কাজের তালিকা করে সরকারকে জানিয়েছি। তিন মাস পর তার পর্যালোচনা করেছি। ছয় মাস পরে আমরা আবারও পর্যালোচনা করবো।
পরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে বাহাদুর শাহ পার্কের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেয়।