সুসজ্জিত মঞ্চটি ঘিরে রয়েছে এক রহস্যময় পরিবেশ। মঞ্চের মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন কয়েকজন ব্যক্তি, সবার পরনে সাদা পায়জামা এবং মাথায় টুপি। মঞ্চের এক কোণে সুসজ্জিত একটি ডায়েস চোখে পড়ে। ডায়েসের দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছেন দুই ব্যক্তি, যাঁদের পোশাক এবং হাতে থাকা অস্ত্রসদৃশ বস্তু দেখে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের ভাব ফুটে ওঠে।
ডায়েসের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন আরবি ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন, মাঝে মাঝে সুর চড়িয়ে উচ্চারণ করছেন ‘আল্লাহু আকবার’। বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় উপস্থিত জনতার কণ্ঠে একই স্লোগান ধ্বনিত হচ্ছে, যা পরিবেশটিকে আরও বেশি তীব্র এবং গভীর করে তুলেছে।
আরবিতে বক্তব্য দেওয়া ৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা রাতে রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওটি যশোর সদর উপজেলার রামনগর রাজারহাট রামনগর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার। গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর মাদ্রাসাটির বার্ষিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নাটকটির মঞ্চায়ন হয়।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী বলেন, চলতি মাসের ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর মাদ্রাসাতে বার্ষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গজল, বাংলা, আরবি, হামদসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হয়। ওই অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনের মুসলমানের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য উপস্থাপন করেন মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের তিন শিক্ষার্থী। তাদের একজন ফিলিস্তিনি নেতা সেজে আরবিতে ভাষণও দেন। পাশে ককশিট ও কালো টেপ দিয়ে তৈরি ডামি অস্ত্র হাতে মুখবাঁধা দু’জন প্রহরায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এটা শুধুমাত্র অভিনয়।
এদিকে ভিডিওটি নিয়ে রীতিমতো ফেসবুকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নেটিজেনরা সমালোচনা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) নূর ই আলম সিদ্দিকী জানান, ভিডিওটি মাদ্রাসাটির বার্ষিক যেমন খুশি, তেমন সাজো অনুষ্ঠানের। ককশিট দিয়ে তারা নকল অস্ত্র বানিয়ে উপস্থাপন করেছে। ঘটনাটি ভাইরাল হবার পর পুলিশ রাতেই মাদ্রাসা পরিদর্শন ও ডামি অস্ত্রসহ অন্যান্য উপকরণ পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। ভিডিওটি নিয়ে বিভ্রান্ত না হবার পরামর্শ দেন তিনি।