বাশার আল-আসাদ এখন কোথায় অবস্থান করছেন তা সিরিয়ার কোনো সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আসাদ তার পদ ও দেশ ছেড়ে গিয়েছেন। আসাদের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করে মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়ার পর তিনি সিরিয়া ত্যাগ করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সিরিয়ান আরব প্রজাতন্ত্রে সংঘাতে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের সঙ্গে আলোচনার পর আসাদ প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়াও তিনি ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।”
রাশিয়া বাশারের প্রস্থানের বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেয়নি বলেও জানিয়েছে মস্কো। রাশিয়া আসাদের কট্টর মিত্র ছিল এবং গৃহযুদ্ধের সময় তাকে সমর্থন করার জন্য ২০১৫ সালে হস্তক্ষেপও করেছিল। কিন্তু রাশিয়ার সামরিক আয়োজন ইউক্রেনের যুদ্ধে কেন্দ্রীভূত হওয়ায়, সিরিয়ায় পরিস্থিতি প্রভাবিত করার ক্ষমতা অনেকটাই সীমিত হয়ে আসে।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের ডেপুটি চেয়ারম্যান কনস্টান্টিন কোসাচিভ বলেছেন, মস্কো সিরিয়ার জনগণকে সমর্থন করতে ইচ্ছুক, কিন্তু অতীতের মতো সামরিকভাবে আর জড়িয়ে পড়বে না। তিনি বলেন, “সিরিয়ার জনগণের যদি আমাদের সমর্থন প্রয়োজন হয়, তবে তা দেওয়া হবে।” তবে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সিরিয়ানদের নিজেদেরই মোকাবিলা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে:
সিরিয়ার বিদ্রোহী জোট জানিয়েছে, তারা একটি অন্তর্বর্তী শাসকগোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য কাজ করছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়াকে আবার সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া এড়াতে এমন ঘোষণা বিদ্রোহী নেতাদের পরিপক্বতার উদাহরণ।
সিরিয়ার সশস্ত্র বিরোধী কমান্ড জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা থেকে দামেস্কে কারফিউ জারি হবে। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৫টা পর্যন্ত এই কারফিউ বলবত থাকবে।
মিলিটারি অপারেশনস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন টেলিগ্রামে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে, তবে কারফিউ দেওয়ার কারণ জানানো হয়নি।
আসাদের হদিস জানা যায়নি:
বিদ্রোহীরা রাজধানী দখল করে নেওয়ার পর সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা বাশার আল-আসাদকে বহনকারী বিমান অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে দামেস্ক থেকে উড়ে গেছে বলে দুই জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ফ্লাইটরাডার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখলের সময় সিরিয়ান এয়ারের একটি বিমান দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছিল। আসাদ ওই ফ্লাইটে ছিলেন কি-না তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিমানটি প্রাথমিকভাবে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম দিকে উড়ে গিয়েছিল। আলাউইট সম্প্রদায়ের এই অঞ্চলটি ঐতিহ্যগতভাবে আসাদ সমর্থকদের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই উল্টো ঘুরে বিপরীত দিকে উড়ে যায় বিমানটি। এরপর এটি মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
কাতারের দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে আসাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, “ক্ষমতাচ্যুত নেতা সম্ভবত সিরিয়ার বাইরে রয়েছেন।” তবে তার সঠিক অবস্থান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি ফিদান।
উপসাগরীয় দেশটিতে আসাদ রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ করেছেন কি-না, তা নিশ্চিত বা অস্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ। সিরিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত গাইর পেডারসনও বলেছেন, আসাদের অবস্থান সম্পর্কে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।