০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতকে কাঁদিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়

Desk Report- Bangladesh Diplomat
  • No Update : ১১:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
  • / 1283

আজ (রোববার) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছিল নীলের মহাসমুদ্রে। নিজ দেশে এক যুগ পর বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরবেন রোহিত শর্মারা, এমন স্বপ্নেই বিভোর ছিলেন শত কোটি ভারতীয় সমর্থক। সেই কক্ষপথেই ছিল দলটি। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন ট্রাভিস হেড আর মার্নাস ল্যাবুশেন। শুরুতে ৩ উইকেট পড়ার পর এই দুজনই ধীরে ধীরে ভারতের কাছ থেকে ম্যাচটাকে নিয়ে যান অনেক দূরে। শেষ পর্যন্ত তারাই গড়ে দিলেন ব্যবধান। ভারতের দেওয়া ২৪১ রানের টার্গেট অস্ট্রেলিয়া ছুঁয়ে ফেলল ৪২ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে।

ফাইনালে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়েছিল ভারত। অবশ্য রোহিত শর্মার ইচ্ছাও ছিল টস জিতলে ব্যাটিং নেওয়ার। কিন্তু ব্যাট হাতে ভারতীয়দের সেই আত্মবিশ্বাস আজ দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের আগুনে বোলিংয়ের সামনে প্রত্যাশিত ব্যাটিং হয়নি ভারতের। ফাইনালের পিচও ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। অসমান বাউন্স দারুণ ভুগিয়েছে রোহিত শর্মাদের।

পুরো বিশ্বকাপে এদিনই প্রথম চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল ভারতের মিডলঅর্ডার। সেটাও তারা নিতে ব্যর্থ হলো। টপঅর্ডার ভালো করেনি, মিডল অর্ডারও তেমন কিছু করতে পারল না। ফলাফল- স্বল্প পুঁজি। পুরো ম্যাচে টানা বাউন্ডারি খরায় ভুগেছেন ভারতীয় ব্যাটাররা। দুই দফা মিলিয়ে ম্যাচের ৩৫টি ওভারে কোনো বাউন্ডারির দেখা পায়নি ভারত।

পাওয়ারপ্লেতে ৮০ রান তোলার পর হঠাৎ করেই যেন মিইয়ে যান ভারতীয় ব্যাটাররা। রোহিত শর্মা-শুভমান গিলরা ব্যর্থ হন বড় স্কোর করতে। বিরাট কোহলি আর লোকেশ রাহুল দলের হাল ধরলেও রান তোলার গতি কমে আসে অনেকখানি। পাওয়ার প্লে-তে ৮ এর কাছাকাছি থাকা রানরেট নেমে যায় ৩ এর ঘরে। ইনিংসের শেষ ২০ ওভারে ভারত বাউন্ডারি হাঁকিয়েছে মাত্র ১টি। সেটাও এসেছে সিরাজের ব্যাট থেকে।

ইনিংসে বড় স্কোর ছিল কেবল রাহুল আর কোহলির। দুজনেই পেয়েছেন পঞ্চাশের দেখা। কিন্তু রাহুল ফিরে যাওয়ার পর আর কেউ বড় স্কোর করতে না পারায় তাদের ইনিংস থেমে যায় ২৪০ রানে। অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে আটকানোর জন্য যা মোটেই যথেষ্ট ছিল না

যদিও ২৪১ রানের লক্ষ্যে বোলিং যেমন হওয়া দরকার ছিল শুরুতে ঠিক তেমনই বল করেছেন ভারতের বোলাররা। জাসপ্রিত বুমরাহ আর মোহাম্মদ শামিকে শুরুতে সামাল দিতে পারেনি অজি ব্যাটিং লাইন-আপ। ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ আর স্টিভেন স্মিথ তিনজনেই পরাস্ত হয়েছেন দুর্বল ফুটওয়ার্ক আর নিজেদের ভুলে। দ্রুত ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের শিরোপা স্বপ্নও তখন জ্বলজ্বল করছিল।

তবে ম্যাচে ভারতের সুখ টিকেছে ওই পর্যন্তই। এক প্রান্তে টিকে থাকা ওপেনার ট্রাভিস হেড এরপর থেকে ভারতের মাথাব্যথা ক্রমেই বাড়িয়েছেন আর আরেক প্রান্তে মার্নাস ল্যাবুশেন ছিলেন চীনের প্রাচীর হয়ে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে এ দুজন ম্যাচটাকে ছিনিয়ে নেন স্বাগতিকদের হাত থেকে। তাদের প্রায় অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আহমেদাবাদের গ্যালারিতে নামে শ্মশানের নীরবতা।

এর মাঝে গোটা ম্যাচে আর একবারই সুযোগ পেয়েছিল ভারত। বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউর আবেদন ছিল হেডের বিরুদ্ধে। সে আবেদন ফিরিয়ে দেন আম্পায়ার। পরে রিভিউতে দেখা গেল সেটি ছিল আম্পায়ার্স কল। অর্থাৎ আম্পায়ার আউট দিলে আউট হয়ে যেতেন ট্রাভিস হেড। তখনো জয় বেশ দূরেই ছিল।

এদিকে, লম্বা জুটি গড়ার পথে সেঞ্চুরিও পেয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ট্রাভিস হেড। ৯৫ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ব্যাটিং সহায়ক নয় এমন পিচে কী অসাধারণ ব্যাটিংই না করলেন হেড। চোখে লেগে থাকার মতো একটা ইনিংস খেলেছেন অজি ওপেনার। গোটা ইনিংসে ওই এলবিডব্লিউর আপিল ছাড়া কোনো সুযোগ দেননি তিনি। ম্যাচটা অবশ্য শেষ করা হয়নি ট্রাভিস হেডের। জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে মোহাম্মদ সিরাজের বলে আউট হয়েছেন তিনি। তবে এর আগেই খেলে ফেলেন ১৩৭ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস।

৯৯ বলে ধৈর্যশীল এক ইনিংস খেলে ওদিকে অর্ধশতকের দেখা পান ল্যাবুশেন। হেড-লাবুশেন দুজনের সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে ২০১৯ সালে হারিয়ে ফেলা বিশ্বকাপটা আজ আবারও ফিরছে অস্ট্রেলিয়াতে। এর আগে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। তারও আগে ২০১১ বাদ দিলে ২০০৭, ২০০৩, ১৯৯৯ তিনবারই শিরোপা ঘরে নিয়েছিল তাসমান সাগর পাড়ের দেশটি।

Tag : Bangladesh Diplomat, bd diplomat

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট

Bangladesh Diplomat | বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট | A Popular News Portal Of Bangladesh.

ভারতকে কাঁদিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়

No Update : ১১:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

আজ (রোববার) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছিল নীলের মহাসমুদ্রে। নিজ দেশে এক যুগ পর বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরবেন রোহিত শর্মারা, এমন স্বপ্নেই বিভোর ছিলেন শত কোটি ভারতীয় সমর্থক। সেই কক্ষপথেই ছিল দলটি। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন ট্রাভিস হেড আর মার্নাস ল্যাবুশেন। শুরুতে ৩ উইকেট পড়ার পর এই দুজনই ধীরে ধীরে ভারতের কাছ থেকে ম্যাচটাকে নিয়ে যান অনেক দূরে। শেষ পর্যন্ত তারাই গড়ে দিলেন ব্যবধান। ভারতের দেওয়া ২৪১ রানের টার্গেট অস্ট্রেলিয়া ছুঁয়ে ফেলল ৪২ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে।

ফাইনালে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়েছিল ভারত। অবশ্য রোহিত শর্মার ইচ্ছাও ছিল টস জিতলে ব্যাটিং নেওয়ার। কিন্তু ব্যাট হাতে ভারতীয়দের সেই আত্মবিশ্বাস আজ দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের আগুনে বোলিংয়ের সামনে প্রত্যাশিত ব্যাটিং হয়নি ভারতের। ফাইনালের পিচও ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। অসমান বাউন্স দারুণ ভুগিয়েছে রোহিত শর্মাদের।

পুরো বিশ্বকাপে এদিনই প্রথম চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল ভারতের মিডলঅর্ডার। সেটাও তারা নিতে ব্যর্থ হলো। টপঅর্ডার ভালো করেনি, মিডল অর্ডারও তেমন কিছু করতে পারল না। ফলাফল- স্বল্প পুঁজি। পুরো ম্যাচে টানা বাউন্ডারি খরায় ভুগেছেন ভারতীয় ব্যাটাররা। দুই দফা মিলিয়ে ম্যাচের ৩৫টি ওভারে কোনো বাউন্ডারির দেখা পায়নি ভারত।

পাওয়ারপ্লেতে ৮০ রান তোলার পর হঠাৎ করেই যেন মিইয়ে যান ভারতীয় ব্যাটাররা। রোহিত শর্মা-শুভমান গিলরা ব্যর্থ হন বড় স্কোর করতে। বিরাট কোহলি আর লোকেশ রাহুল দলের হাল ধরলেও রান তোলার গতি কমে আসে অনেকখানি। পাওয়ার প্লে-তে ৮ এর কাছাকাছি থাকা রানরেট নেমে যায় ৩ এর ঘরে। ইনিংসের শেষ ২০ ওভারে ভারত বাউন্ডারি হাঁকিয়েছে মাত্র ১টি। সেটাও এসেছে সিরাজের ব্যাট থেকে।

ইনিংসে বড় স্কোর ছিল কেবল রাহুল আর কোহলির। দুজনেই পেয়েছেন পঞ্চাশের দেখা। কিন্তু রাহুল ফিরে যাওয়ার পর আর কেউ বড় স্কোর করতে না পারায় তাদের ইনিংস থেমে যায় ২৪০ রানে। অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে আটকানোর জন্য যা মোটেই যথেষ্ট ছিল না

যদিও ২৪১ রানের লক্ষ্যে বোলিং যেমন হওয়া দরকার ছিল শুরুতে ঠিক তেমনই বল করেছেন ভারতের বোলাররা। জাসপ্রিত বুমরাহ আর মোহাম্মদ শামিকে শুরুতে সামাল দিতে পারেনি অজি ব্যাটিং লাইন-আপ। ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ আর স্টিভেন স্মিথ তিনজনেই পরাস্ত হয়েছেন দুর্বল ফুটওয়ার্ক আর নিজেদের ভুলে। দ্রুত ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের শিরোপা স্বপ্নও তখন জ্বলজ্বল করছিল।

তবে ম্যাচে ভারতের সুখ টিকেছে ওই পর্যন্তই। এক প্রান্তে টিকে থাকা ওপেনার ট্রাভিস হেড এরপর থেকে ভারতের মাথাব্যথা ক্রমেই বাড়িয়েছেন আর আরেক প্রান্তে মার্নাস ল্যাবুশেন ছিলেন চীনের প্রাচীর হয়ে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে এ দুজন ম্যাচটাকে ছিনিয়ে নেন স্বাগতিকদের হাত থেকে। তাদের প্রায় অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আহমেদাবাদের গ্যালারিতে নামে শ্মশানের নীরবতা।

এর মাঝে গোটা ম্যাচে আর একবারই সুযোগ পেয়েছিল ভারত। বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউর আবেদন ছিল হেডের বিরুদ্ধে। সে আবেদন ফিরিয়ে দেন আম্পায়ার। পরে রিভিউতে দেখা গেল সেটি ছিল আম্পায়ার্স কল। অর্থাৎ আম্পায়ার আউট দিলে আউট হয়ে যেতেন ট্রাভিস হেড। তখনো জয় বেশ দূরেই ছিল।

এদিকে, লম্বা জুটি গড়ার পথে সেঞ্চুরিও পেয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ট্রাভিস হেড। ৯৫ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ব্যাটিং সহায়ক নয় এমন পিচে কী অসাধারণ ব্যাটিংই না করলেন হেড। চোখে লেগে থাকার মতো একটা ইনিংস খেলেছেন অজি ওপেনার। গোটা ইনিংসে ওই এলবিডব্লিউর আপিল ছাড়া কোনো সুযোগ দেননি তিনি। ম্যাচটা অবশ্য শেষ করা হয়নি ট্রাভিস হেডের। জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে মোহাম্মদ সিরাজের বলে আউট হয়েছেন তিনি। তবে এর আগেই খেলে ফেলেন ১৩৭ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস।

৯৯ বলে ধৈর্যশীল এক ইনিংস খেলে ওদিকে অর্ধশতকের দেখা পান ল্যাবুশেন। হেড-লাবুশেন দুজনের সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে ২০১৯ সালে হারিয়ে ফেলা বিশ্বকাপটা আজ আবারও ফিরছে অস্ট্রেলিয়াতে। এর আগে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। তারও আগে ২০১১ বাদ দিলে ২০০৭, ২০০৩, ১৯৯৯ তিনবারই শিরোপা ঘরে নিয়েছিল তাসমান সাগর পাড়ের দেশটি।