4:06 am, Monday, 23 December 2024

শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ‘রণক্ষেত্র’ ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা

  • Akram
  • Update Time : 05:15:35 pm, Monday, 25 November 2024
  • 45

শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ‘রণক্ষেত্র’ ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

রাজধানীর ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে। এ সংঘর্ষে স্থানীয় বাসিন্দারাও জড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। সর্বশেষ দুপুর পৌনে ৩টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলমান।

প্রথমে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় লোকজন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডিএমআরসি কলেজ এলাকায় সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে ১০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আহতরা হলেন– সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইন্টার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাজীব (১৯), ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের শাহেদুল (২০), কবি নজরুল সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের অনুপম দাস (২৩), ইন্টার প্রথম বর্ষের রানা (২০), অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের সুমন (২২), ইন্টার প্রথম বর্ষের মারুফ (১৯), ইন্টার প্রথম বর্ষের হাসিনুর (১৯), ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের আরাফাত (১৯), ইম্পেরিয়াল কলেজ হাতিরঝিল শাখার ইন্টার প্রথম বর্ষের হুমায়ুন (২০), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার প্রথম বর্ষের রুমান (১৯)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সংঘর্ষ চলাকালে বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের লাঠিসোঁটা হাতে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা গেছে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় দুটি কলেজেই পরীক্ষা চলছিল। শিক্ষার্থীরা হামলা চালালে পরীক্ষার্থীরা ভয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকেন।

এদিকে, ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের ভূমিকা ছিল নীরব। লালবাগ জোনের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের বিষয়ে তারা অবগত নন। তবে স্থানীয়রা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সংঘর্ষ ও হামলায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ এবং ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী সদস্যরাও কাজ করছেন।’

এর আগে রবিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, কলেজে ভাঙচুরের প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সোমবার বিক্ষোভ মিছিল করবেন। এই ঘোষণার অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে তারা সড়কে অবস্থান নেন।

সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। অভিযোগ ওঠে, ওই হাসপাতালের চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর বিচার দাবি করে রবিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর থেকেই বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ঘেরাও করেন। এক পর্যায়ে এই বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নেয়। হাসপাতাল ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজেও ভাঙচুর চালানো হয়।

Write Your Comment

About Author Information

Akram

শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ‘রণক্ষেত্র’ ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা

Update Time : 05:15:35 pm, Monday, 25 November 2024

রাজধানীর ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে। এ সংঘর্ষে স্থানীয় বাসিন্দারাও জড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। সর্বশেষ দুপুর পৌনে ৩টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলমান।

প্রথমে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় লোকজন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডিএমআরসি কলেজ এলাকায় সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে ১০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আহতরা হলেন– সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইন্টার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাজীব (১৯), ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের শাহেদুল (২০), কবি নজরুল সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের অনুপম দাস (২৩), ইন্টার প্রথম বর্ষের রানা (২০), অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের সুমন (২২), ইন্টার প্রথম বর্ষের মারুফ (১৯), ইন্টার প্রথম বর্ষের হাসিনুর (১৯), ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের আরাফাত (১৯), ইম্পেরিয়াল কলেজ হাতিরঝিল শাখার ইন্টার প্রথম বর্ষের হুমায়ুন (২০), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার প্রথম বর্ষের রুমান (১৯)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সংঘর্ষ চলাকালে বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের লাঠিসোঁটা হাতে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা গেছে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় দুটি কলেজেই পরীক্ষা চলছিল। শিক্ষার্থীরা হামলা চালালে পরীক্ষার্থীরা ভয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকেন।

এদিকে, ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের ভূমিকা ছিল নীরব। লালবাগ জোনের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের বিষয়ে তারা অবগত নন। তবে স্থানীয়রা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সংঘর্ষ ও হামলায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ এবং ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী সদস্যরাও কাজ করছেন।’

এর আগে রবিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, কলেজে ভাঙচুরের প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সোমবার বিক্ষোভ মিছিল করবেন। এই ঘোষণার অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে তারা সড়কে অবস্থান নেন।

সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। অভিযোগ ওঠে, ওই হাসপাতালের চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর বিচার দাবি করে রবিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর থেকেই বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ঘেরাও করেন। এক পর্যায়ে এই বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নেয়। হাসপাতাল ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজেও ভাঙচুর চালানো হয়।