দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মাঠ পর্যায়ের সব শূন্যপদে দ্রুত জনবল চেয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ যথাসময়ে বরাদ্দ চেয়েছেন তারা। নির্বাচন কমিশনের নভেম্বর মাসের সমন্বয় সভায় এসব দাবি উঠে আসে।
গত ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের মাসিক সমন্বয় সভার কার্যবিবরণী আজ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন।
কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, সমন্বয় সভায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে মাঠ পর্যায়ের সব শূন্যপদে জনবল নিয়োগের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। একইসঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ যথাসময়ে বরাদ্দ প্রদানেরও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বিএমটিএফ বা ভাড়াকৃত গোডাউনের বাইরে সংরক্ষিত ইভিএমগুলো গোডাউনে সংরক্ষণের কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তারা।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী ভোটার হওয়ার উপযুক্ত না হলে তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। এ বিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রচারের লক্ষ্যে পোস্টারের নমুনা প্রস্তুত করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোস্টার মুদ্রণ করে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে প্রচারের কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভায় উল্লেখ করেন এ কর্মকর্তা।
সাধারণ সেবা শাখার উপসচিব রাশেদুল ইসলাম জানান, নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ব্যক্তিদের তাদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে এবং প্রদর্শন করে নির্বাচন ভবনে প্রবেশ করার বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা প্রয়োজন।
সভায় নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২ শাখার যুগ্মসচিব ফরহাদ আহম্মদ খান জানান, ব্যালট পেপারসহ মুদ্রণযোগ্য অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী মুদ্রণের জন্য বিজি প্রেসের সঙ্গে সভা করা হবে। নির্বাচনী সামগ্রী মুদ্রণ করে যথাসময়ে মাঠ পর্যায়ে পাঠাতে হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, চূড়ান্তকৃত ভোটার তালিকা মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। নির্বাচনকালীন মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে পুলিশ সুপার, আইজিপি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী মালামাল ঠিকাদারদের কাছ থেকে গুণগতমান যাচাইপূর্বক গ্রহণ করেছে রিসিভিং কমিটি।
তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রদানের জন্য জেলা পর্যায় থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমাদান এবং মনোনয়নপত্রের হার্ড কপি গ্রহণের বিষয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এনআইডি মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এ কে এম হুমায়ূন কবীর জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্তকৃত ভোটার তালিকার পিডিএফ কপি মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই তালিকা সঠিক আছে বলে আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন সংগ্রহপূর্বক কমিশনকে অবহিত করতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই সে ভোটার নয়— সভায় বিষয়টি উল্লেখ করে এ নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। পাঠানো নমুনা অনুযায়ী সব জেলা থেকে পোস্টার ছাপিয়ে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোনো এলাকায় দ্বৈত ভোটার সংক্রান্ত জটিলতা থাকলে এ সমস্যা দ্রুত দূর করে নির্বাচনে ব্যবহার উপযোগী করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সভার সভাপতি ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বিভিন্ন পদে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ২ দিনের অফিস পরিচালনার বিষয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। অমোচনীয় কালির কলম এবং স্ট্যাম্প প্যাড ব্যতীত অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই অমোচনীয় কালির কলম এবং স্ট্যাম্প প্যাডও পাঠানো হবে।
তিনি জানান, নির্বাচনী সব মালামাল জেলা পর্যায়ে ট্রেজারিতে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইন, বিধি-বিধান এবং প্রস্তুতকৃত চেকলিষ্ট মোতাবেক সব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সর্বশেষ আয়কর বিবরণী এবং টিআইএন দাখিলের প্রমাণ সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনী বরাদ্দসহ বরাদ্দকৃত সব অর্থ খরচের ক্ষেত্রে আর্থিক বিধি-বিধান সঠিকভাবে প্রতিপালন করতে হবে।