সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যমান শূন্য পদগুলোতে লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ৩ মাসের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের চাহিদা চেয়ে তথ্য চেয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশের শূন্য পদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। সেজন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষে শূন্য পদের চাহিদা আহ্বান করা হয়েছে।
এনটিআরসিএ সূত্র বলছে, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ হতে পারে। কারণ, পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির প্রায় ৯৭ হাজার পদের মধ্যে মাত্র সাড়ে ১৯ হাজার পদ পূরণ হয়েছে। আরও ৭৭ হাজার ৫০০ পদ ফাঁকা রয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর ২০ থেকে ২৫ হাজার পদ অবসরের কারণে শূন্য হয়েছে। আর এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে আগামী তিন মাসের মধ্যে।
এনটিআরসিএর নিয়োগ নিয়ে কাজ করেন একজন কর্মকর্তা বলেন, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির জন্য সব কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্য পদের সংখ্যা লাখেরও বেশি হবে। এবার বেশি শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে। কারণ, ইতোমধ্যে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে যোগ্য প্রার্থীর সংকট কাটবে।
জানা যায়, গত ৩০ অক্টোবর এনটিআরসিএ অনলাইনে শিক্ষকদের শূন্য পদের চাহিদা আহ্বান করে, যা ই-রিকুইজিশন নামে পরিচিত। এ কার্যক্রমে তথ্য দেওয়া যাবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। অনলাইনে চাহিদা ফি জমা দেয়া যাবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারই প্রথমবারের মতো আগামী তিন বছরের (৩১ ডিসেম্বর ২০২৭ পর্যন্ত) সম্ভাব্য শূন্য পদের চাহিদা পাঠাতে বলা হয়েছে। এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রম (ই-রেজিস্ট্রেশন) শেষ করে এনটিআরসিএ।
গত ৩১ মার্চ পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ। বিজ্ঞপ্তিতে শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৭৩৬টি। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের শূন্য পদ ছিল ৪৩ হাজার ২৮৬টি এবং মাদ্রাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ৫৩ হাজার ৪৫০টি। পরে গত ২১ আগস্ট প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ১৯ হাজার ৫৮৬ জন প্রার্থীকে নিয়োগে সম্মতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এনটিআরসিএ বলছে, এনটিআরসিএ ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ই-রেজিস্ট্রেশন শেষে শিক্ষকদের শূন্য পদের চাহিদা আহ্বান করেছে। শূন্য পদের চাহিদা পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই শেষে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়া হবে। অনুমোদন পেলে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক বলেন, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অংশ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষে শূন্য পদের চাহিদা আহ্বান করা হয়েছে। শূন্য পদের চাহিদা পেলে তা যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা সম্ভব হবে।
২০০৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে। তবে শুরুর ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়। এরপর পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ।