ক্রিকেট বোদ্ধারা সাকিব আল হাসানের বিকল্প হিসেবে অনেক আগেই মেহেদী হাসান মিরাজকে ভেবে আসছে। মিরাজও তার প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। চলতি দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ টেস্টের দিকে খেয়াল করলেই বুঝা যাবে ব্যাটিং ব্যর্থতার ষোল কলা যখন পূর্ণ হলো ঠিক তখনই আবারও ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন অলরাউন্ডার মিরাজ।
তার ব্যাটিং এ ভর করেই বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীরা জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। লিডটা যদি ১৫০ এর উপরে করা যায় তাহলে হয়তো বাংলাদেশের পক্ষেই ম্যাচটা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সামনে ২০২ রানের লিড। ব্যাটিংয়ে বিবর্ণ শুরু। দ্বিতীয় দিনই বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছিল পরাজয়। শেষ বিকেলে বাংলাদেশের আশার আলো দেখলেও সেটা মিলিয়ে যায় হতাশায়। এই হতাশার মাঝেই আরেকবার বীরত্ব দেখিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সতীর্থদের নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন ইনিংস পরাজের শঙ্কা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন লিড। তার দৃঢ়তায় চতুর্থ দিনে গড়াল ঢাকা টেস্ট।
আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) যেভাবে দিনের শুরু হয়েছিল তাতে বাংলাদেশের হার দেখা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সেটা হতে পারতো প্রথম সেশনেই। তবে জাকের আলি অনিক ও নাঈম হাসানকে নিয়ে বাংলাদেশকে সেই লজ্জা থেকে রক্ষা করেন মিরাজ।
টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশকে সাত উইকেটে ২৮৩ রানের সংগ্রহ এনে দেন মিরাজ। ৮১ রানের লিড নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার টেস্টের চতুর্থ দিন শুরু করবে বাংলাদেশ। আজই লিড আরও বাড়িয়ে নিতে পারতো বাংলাদেশ। তবে বৃষ্টি আর আলোরস্বল্পতার বাধায় সেটা আর হয়নি।
দিন শেষে উইকেটে ৮৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ। ১৭১ বলে তার ইনিংস সাজানো ছিল ৯ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায়। তার সঙ্গে ১৬ রানে ব্যাট করছিলেন নাঈম হাসান।
দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে ১০১ রানে পিছিয়ে থেকে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। উইকেটে ছিলেন মুশফিক ও জয়ের আগের দিনের ৪২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। কিন্তু থিতু হয়েও শুরুটা যেভাবে করলেন দুজন তা ছিল চরম হতাশার।
দিন শুরুর ১৩ মিনিটের মাথাতেই কাগিসো রাবাদার বলে উইকেট উপহার দেন দুজন। দিনের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে রাবাদাকে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন জয়। ৯২ বলে ৪০ রানে স্থায়ী হয় জয়ের ইনিংস। একই ওভারের তৃতীয় বলে মুশফিকও ফাঁদে পড়েন। রাবাদার ফুল লেন্থ ডেলিভারি ভুল লাইনে খেলতে গিয়ে স্টাম্প হন মুশফিক। ৩৯ বলে ৩৩ রানে থামে তার ইনিংস।
এরপর উইকেটে এসে টিকলেন না লিটন দাসও। কেশভ মাহারাজের ধীর গতির বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু বল টার্ন করে চলে যায় কিপার কাইল ভেরেনার হাতে। প্রথমে আউট দেননি আম্পায়ার। পরে রিভিউ নিয়ে লিটনের আউট নিশ্চিত করে প্রোটিয়ারা।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর আজ দিনের প্রথম সেশনেই বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছিল ইনিংস পরাজয়। জাকেরকে নিয়ে সেই শঙ্কা দূর করেন মিরাজ। প্রথম সেশনেই দক্ষিণ আফ্রিকার লিড টপকানোর কাছাকাছি চলে যান তিনি। এগিয়ে যাওয়ার পথে ৯৪ রানে তুলে নেন ক্যারিয়ারের নবম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি। এরপর লাঞ্চ থেকে ফিরে টপকে যান দক্ষিণ আফ্রিকার রান। দুজন মিলে বাংলাদেশকে নিয়ে যান লিডের পথে।
মাঝপথে জাকের আলিও ফিফটি তুলে নেন। চার মেরে ১০২ বলে ফিফটি ছোঁয়া পাওয়া জাকের অবশ্য এরপর আর লড়াই করতে পারেননি। ১১১ বলে মাহারাজের আর্ম বলে এলবিডব্লিউ হন জাকের। ১১১ বলে ৫৮ রানে থামে তার লড়াই।
জাকের ফেরার পর নাঈমকে নিয়ে দলকে টানেন মিরাজ। এর মাঝে বৃষ্টি নামলে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। বৃষ্টির বাধা কাটিয়ে খেলা গড়ানোর ১৬ মিনিটের মাথায় আলোর স্বল্পতায় বন্ধ হয়ে যায় খেলা। দুই দফায় বন্ধ হওয়ার পর শেষ তৃতীয় দিন বিকেল ৪টায় ইতি টানতে বাধ্য হন আম্পায়াররা।
গতকাল নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস বাংলাদেশ শেষ করে ২৭.১ ওভারে তিন উইকেটে ১০১ রান। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ ব্যাটাররা দ্বিতীয় ইনিংসেও নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। টপ অর্ডারে জয় ছাড়া সবাই দেখিয়েছেন ব্যর্থতার করুণ নমুনা।
এই টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩০৮ রানে থেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তার আগে টস জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিডি/জেডআর