ঢাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকা ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো দীর্ঘদিন থেকে অকোজো হয়ে পড়ে আছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শত শত কোটি টাকা খরচ করে সেগুলো বসানো হলেও তেমন সুফল মেলেনি। এখন সেই অকোজো সিগন্যালগুলো সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এজন্য তারা দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে বুয়েটকে কাজে লাগাচ্ছেন। এ নিয়ে বুয়েটের একটি গবেষক টিম কাজ শুরু করেছেন। আগামী দু-এক মাসের মধ্যে সিগন্যাল বাতিগুলো বসানোর কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে ঢাকার মোট ২৯টি পয়েন্টে সিগন্যাল বাতিগুলো বসানো হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকার দুই সিটির চার পয়েন্টে সিগন্যাল বাতি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। এই চার পয়েন্টে পরীক্ষামূলক চলবে। তারপর সফলতা মিললে পর্যায়ক্রমে ২৫ পয়েন্টে বসানো হবে বাকিগুলো।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকার ১১০টি পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যালগুলো অকোজো হয়ে পড়ে আছে। সেগুলো কোন কাজ করে না। ফলে এখন হাত দিয়েই যানজট নিরসনে কাজ করতে হয় ট্রাফিক সদস্যদের। কিন্তু সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে খুব শিগগিরই।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তৈরি ট্রাফিক সিগন্যাল বসছে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ চারটি মোড়ে। হাইকোর্ট মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে এসব ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হবে।
সম্প্রতি বুয়েটের গবেষক টিমের দুই সদস্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় সিগন্যাল বাতি বানানোর প্রস্তাব পেলে তারা সম্মত হন। এরপর সেগুলো তৈরীতে হাত দেন।
গত ১৬ অক্টোবর সেগুলো তৈরীর পর ১৬ সেপ্টেম্বর টেস্টও করা হয়েছে। তাতে তারা সফল হয়েছেন। পুরোপুরি দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগুলো তৈরি করা হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর আবারও একটি মিটিং হবে বুয়েটের গবেষক দলের সঙ্গে। সেখানে তারা জানাবেন, সিগন্যালগুলো চূড়ান্ত হয়েছে কিনা। তারপর বসানো হবে সেগুলো।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, পাইলট প্রজেক্টের অংশ হিসেবে প্রথমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অংশ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের মোড় ও বাংলামোটর মোড় এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের অংশ কারওয়ান বাজার মোড় ও ফার্মগেট মোড়ে চারটি ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হবে।
জানা গেছে, প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যাল তৈরি ও বসানোর জন্য খরচ হবে সাড়ে ১০ লাখ টাকা। আর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে লাগবে দেড় লাখ টাকা। প্রতিটি সিগন্যালের সঙ্গে যুক্ত থাকবে রিমোট। সিগন্যালের পাশে থাকবে আলাদা কাউন্টার। তবে এতে খরচ কিছুটা বাড়বে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার নাজমুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশীয় প্রযুক্তিতে এই সিগন্যালগুলো চলবে। আপাতত দুই সিটির চার পয়েন্টে বসানো হচ্ছে। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এগুলো বসবে। সফল হলে পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোতে বসানো হবে।
কোথায় কোথায় বসবে নতুন সিগন্যাল বাতি?
প্রাথমিক ধাপে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট মোড়ে লাগানো হবে এই সিগন্যাল বাতি।
পরবর্তীতে শিক্ষা ভবন মোড়, কদম ফোয়ারা ও মৎস্য ভবন মোড়, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড় হয়ে মিন্টো রোডের মোড়ে বসবে। পরে বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর হয়ে আবদুল্লাহপুর মোড় পর্যন্ত বসানো হবে।
ড. হাদিউজ্জামান বলেন, পাইলট প্রকল্পের আওতায় মোট ২২ জায়গায় এই সিগন্যাল বাতি লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রথম ধাপে একসঙ্গে সব জায়গায় বসানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আপাতত টেস্টিংয়ের জন্য আমরা চারটি মোড়ে লাগাব।