ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সোমবার হাইফার কাছাকাছি বিন্যামিনা অঞ্চলের একটি প্রশিক্ষণ শিবির লক্ষ্য করেও আরও একটি রকেট হামলার চেষ্টা নস্যাৎ করা হয়। রবিবারের ড্রোন হামলায় চার সেনা নিহত ও ডজনেরও বেশি আহত হয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি বিন্যামিনা প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শন করে বলেন, আমরা এখন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রয়েছি। এই ধরনের হামলার ফলাফল খুবই বেদনাদায়ক।
ইসরায়েলের স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধার সংস্থা ইউনাইটেড হাতজালাহ জানিয়েছে, বিন্যামিনায় তাদের টিমগুলো ৬০ জনেরও বেশি আহত ব্যক্তিকে সহায়তা করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুতর আহত।
২৩ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল যখন লেবাননে বিমান হামলা তীব্র করে এবং এক সপ্তাহ পর স্থল অভিযান শুরু করে, তখন থেকেই ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ইসরায়েল নিজের উত্তর সীমান্ত সুরক্ষিত করার ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে প্রায় এক বছর ধরে হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। হিজবুল্লাহ দাবি করছে, তাদের হামলা মূলত ফিলিস্তিনি মিত্র হামাসের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের অংশ।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলমান যুদ্ধ ও সাম্প্রতিক ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গত রবিবার হিজবুল্লাহ হুমকি দেয়, ইসরায়েল যদি তার হামলা অব্যাহত রাখে তবে তাদের প্রতিক্রিয়া আরও গুরুতর হবে।
লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলা মূলত হিজবুল্লাহর ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে তীব্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। সোমবার হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি গ্রামে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর মর্টারশেল নিক্ষেপ করেছে। লেবাননের জাতীয় বার্তা সংস্থা জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী রবিবার দক্ষিণ লেবাননের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিমান হামলা তীব্র করেছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৬ জন মাইসরা নামক গ্রামে নিহত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই হামলা তাদের জন্য অত্যন্ত মর্মান্তিক। একজন স্থানীয় বাসিন্দা তারেক সাদাকা বলেন, নাবাতিয়েহ আমাদের মা। আমি এখান থেকে যাবো না। এখানে মানুষের জীবিকা ধ্বংস হয়ে গেছে।
অনেকে অবশ্য এই শহর ছেড়ে পালিয়েছেন। যুদ্ধের ফলে দশ লাখের বেশি লেবানিজ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে।
১৯৭৮ সালের ইসরায়েলি আক্রমণের পর থেকে লেবাননে মোতায়েনকৃত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) আবারও হামলার মুখে পড়েছে। ইসরায়েল বারবার শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আসছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, শান্তিরক্ষীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে হিজবুল্লাহ।
ইউএনআইএফআইএল সম্প্রতি অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের একটি দফতরে প্রবেশ করেছে। এ ঘটনায় পাঁচ জন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, শান্তিরক্ষীদের ওপর আক্রমণ যুদ্ধাপরাধ হতে পারে।
লেবাননে চলমান যুদ্ধ শুরু হয় হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আক্রমণের প্রায় এক বছর পর। হামাসের ওই হামলায় ১ হাজার ২০৬ জন নিহত হন। জবাবে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ২৮৯ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, রবিবার আল-মুফতি স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা এই ঘটনাটি তদন্ত করছে।
লেবানন ও গাজায় চলমান যুদ্ধে তীব্র আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে ইরান কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। হিজবুল্লাহ ও হামাসকে সমর্থন প্রদানকারী ইরান ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপ করে লেবানন ও গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন ঘোষণা করেছে, ইরানের সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলায় ইসরায়েলে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রায় ১০০ সেনা পাঠাবে।
সূত্র: আল মনিটর
বিডি/জেডআর