পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্কুলপর্যায়ে বিতর্কিত কারিকুলাম প্রণয়নে হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। শুধু পাঠ্যবই মুদ্রণেই নয়; বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত, টেন্ডার প্রক্রিয়া, বই সম্পাদনা, বই সংরক্ষণ, মান নিয়ন্ত্রণ, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বই পৌঁছানো থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণসহ প্রতিটি স্তরে স্তরে সরকারের আর্থিক অপচয় ও অর্থ লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে কারিকুলাম তৈরির আগে যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেখানেও টাকার লেনদেন হয়েছে। এসব বিষয়ে তদন্ত বা অনুসন্ধান করতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। তারা পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ এবং কারিকুলাম প্রণয়নের বিভিন্ন সেক্টরে সেসব অনিয়ম হয়েছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান করবে।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানান, বিগত সরকরারের আমলে বিতর্কিত কারিকুলামের আড়ালে কত টাকার অনিয়ম হয়েছে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে এই কমিটি হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে বিতর্কিত কারিকুলাম নিয়েই যেহেতু সবার মধ্যে আপত্তি ছিল কাজেই এ বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও আমাদের (এনসিটিবি) কাছে যেকোনো সময়ে আর্থিক বিষয়ে জানতে চাইতে পারে। আমরা সেই জন্যই নিজেদের মধ্য থেকেই পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি।
এখানে একজনকে প্রধান করে কমিটিতে আরো চারজনকে সদস্য করা হয়েছে। তারা নিজেরাই ঠিক করে কাজের সুবিধামতো প্রতিবেদন তৈরি করবে। এ দিকে এনসিটিবির একটি সূত্র জানায়, বিগত সরকারের সময়ে বিতর্কিত কারিকুলাম তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন সেই সময়ের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান।
কারিকুলাম তৈরিতে তিনি নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়ে সরকারের বড় অঙ্কের টাকা লোপাটে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। অপর দিকে এনসিটিবির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাস দায়িত্বে থাকার পরেও সরকারের আজ্ঞাবহ অনেক ব্যক্তির আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে তিনি নিজেও শেষ পর্যন্ত অন্যায় আর আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে শামিল হয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয় নতুন শিক্ষাক্রম (বিতর্কিত) বাস্তবায়নযোগ্য নয়। ২০২৬ সাল থেকে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে পড়ানো হবে। প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম ও মূল্যায়নসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা প্রশাসক এবং সুশীলসমাজ ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হবে। এটি ২০২৬ সালে থেকে পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করা হবে। শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও মূল্যায়ন শিক্ষাক্রম ২০১২-এর আলোকে করারও ঘোষণা দেয়া হয় প্রজ্ঞাপনে।
বিডি/জেডআর