10:40 pm, Saturday, 21 December 2024

পাহাড়িদের সমাবেশের পর সংঘর্ষ

  • Zuel Rana
  • Update Time : 01:19:10 pm, Saturday, 28 September 2024
  • 129

ছবিঃ সংগৃহিত

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই সংঘাতের সমাধান কি? কেনই বা সরকার বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে। এর পিছনে রহস্য কি? কেন আমরা যারা বাংলাদেশি সব সময় আতঙ্কে থাকি পাহাড়কে ঘীরে!

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পাহাড়ি ছাত্রদের আন্দোলন কর্মসূচি ও সমাবেশের পরই খাগড়াছড়িতে সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। শুধু মোটরসাইকেল চুরি ও বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে এই সংঘাত হয়নি বলে মনে করেন স্থানীয়দের অনেকে।

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে ৮ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন স্তিমিত করার জন্য তৃতীয় কোনো পক্ষ সংঘর্ষ বাধিয়ে ফায়দা লুটতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরে পিটুনিতে মামুনের মৃত্যু হয়। পরদিন বিকেলে শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালা উপজেলা সদরে মামুন হত্যার প্রতিবাদে বাঙালিরা মিছিল বের করেন। তখন পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। নিহত হন ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি। আগুন দেওয়া হয় লারমা স্কয়ারে দোকানপাটে। একই দিন রাতে শহরের স্বনির্ভর এলাকায় গুলিতে রুবেল ত্রিপুরা ও জুনান চাকমা নামের দুই তরুণ মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পাশের জেলা রাঙামাটিতে। সেখানেও অনিক চাকমা নামের এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সংঘর্ষের পর তিন উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করেছেন। এ সময় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ পাহাড়ে সম্প্রীতি নষ্ট করার পেছনে বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। একই সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম জানিয়েছেন, পাহাড়ের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নূরুল্লাহ নূরী। দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।

জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মজিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ইস্যু তৈরি করে পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।

আন্দোলনকারীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাহাড়িদের ন্যায্য দাবি আদায়ের যে আন্দোলন, সেটাকে দমাতে পরিকল্পিতভাবে এই সংঘর্ষ বাধানো হয়েছে। একটি চুরির ঘটনাকে ইস্যু করা হয়।

১৬ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে ‌‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে ‘মার্চ ফর আইডেনটিটি’ শীর্ষক মিছিল, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে বাসে করে ছাত্রছাত্রীরা যোগ দেন। প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর এই মিছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। গত দুই দশকে পাহাড়ে এত বড় জমায়েত দেখা যায়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিমত। এই মিছিলের দুই দিনের মাথায় উত্তেজনা দেখা দেয় পাহাড়ি-বাঙালি দুই পক্ষে, বাধে সংঘর্ষ।

আন্দোলনকারীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাহাড়িদের ন্যায্য দাবি আদায়ের যে আন্দোলন, সেটাকে দমাতে পরিকল্পিতভাবে এই সংঘর্ষ বাধানো হয়েছে। একটি চুরির ঘটনাকে ইস্যু করা হয়।

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বোধিস্বত্ব দেওয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ থাকত, তাহলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটত না।

বিডি/জেডআর

Write Your Comment

About Author Information

Zuel Rana

কনক্রিট হল ব্লক- বাড়ির শক্ত ভিতের জন্য সেরা পছন্দ

পাহাড়িদের সমাবেশের পর সংঘর্ষ

Update Time : 01:19:10 pm, Saturday, 28 September 2024

পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই সংঘাতের সমাধান কি? কেনই বা সরকার বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে। এর পিছনে রহস্য কি? কেন আমরা যারা বাংলাদেশি সব সময় আতঙ্কে থাকি পাহাড়কে ঘীরে!

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পাহাড়ি ছাত্রদের আন্দোলন কর্মসূচি ও সমাবেশের পরই খাগড়াছড়িতে সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। শুধু মোটরসাইকেল চুরি ও বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে এই সংঘাত হয়নি বলে মনে করেন স্থানীয়দের অনেকে।

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে ৮ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন স্তিমিত করার জন্য তৃতীয় কোনো পক্ষ সংঘর্ষ বাধিয়ে ফায়দা লুটতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরে পিটুনিতে মামুনের মৃত্যু হয়। পরদিন বিকেলে শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালা উপজেলা সদরে মামুন হত্যার প্রতিবাদে বাঙালিরা মিছিল বের করেন। তখন পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। নিহত হন ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি। আগুন দেওয়া হয় লারমা স্কয়ারে দোকানপাটে। একই দিন রাতে শহরের স্বনির্ভর এলাকায় গুলিতে রুবেল ত্রিপুরা ও জুনান চাকমা নামের দুই তরুণ মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পাশের জেলা রাঙামাটিতে। সেখানেও অনিক চাকমা নামের এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সংঘর্ষের পর তিন উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করেছেন। এ সময় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ পাহাড়ে সম্প্রীতি নষ্ট করার পেছনে বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। একই সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম জানিয়েছেন, পাহাড়ের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নূরুল্লাহ নূরী। দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।

জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মজিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ইস্যু তৈরি করে পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।

আন্দোলনকারীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাহাড়িদের ন্যায্য দাবি আদায়ের যে আন্দোলন, সেটাকে দমাতে পরিকল্পিতভাবে এই সংঘর্ষ বাধানো হয়েছে। একটি চুরির ঘটনাকে ইস্যু করা হয়।

১৬ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে ‌‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে ‘মার্চ ফর আইডেনটিটি’ শীর্ষক মিছিল, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে বাসে করে ছাত্রছাত্রীরা যোগ দেন। প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর এই মিছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। গত দুই দশকে পাহাড়ে এত বড় জমায়েত দেখা যায়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিমত। এই মিছিলের দুই দিনের মাথায় উত্তেজনা দেখা দেয় পাহাড়ি-বাঙালি দুই পক্ষে, বাধে সংঘর্ষ।

আন্দোলনকারীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাহাড়িদের ন্যায্য দাবি আদায়ের যে আন্দোলন, সেটাকে দমাতে পরিকল্পিতভাবে এই সংঘর্ষ বাধানো হয়েছে। একটি চুরির ঘটনাকে ইস্যু করা হয়।

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বোধিস্বত্ব দেওয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ থাকত, তাহলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটত না।

বিডি/জেডআর