5:09 pm, Sunday, 6 October 2024

পাট চাষে উৎপাদন খরচ না ওঠায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা

  • SK Farid
  • Update Time : 04:40:18 pm, Saturday, 21 September 2024
  • 35

উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে ফরিদপুরের চাষিদের। ছবি: প্রতিবেদক

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech
পাট চাষে উৎপাদন খরচ না ওঠায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা

ফরিদপুরে পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। এ বছর উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে লোকসান। এদিকে ভরা মৌসুমেও হাট-বাজারগুলোতে তেমন পাট নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলা সদরসহ নয়টি উপজেলায় ৮৬ হাজার ৫শ’ ২৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৬১ মেট্রিক টন।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন হাট-বাজার ও পাটের আড়তগুলোতে ভালো মানের এক মণ পাট সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর প্রখর খরার কারণে পাট গাছ বড় ও মোটা হতে পারেনি। এতে পাটের আশ কম হওয়ায় ফলনও অনেক কম হয়েছে। এছাড়া সার, বীজ, তেল, কীটনাশক ও মজুরির খরচ বেড়েছে কিন্তু এই দামে পাট বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।
জেলার বিভিন্ন পাটের হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাট বেচাকেনায় মন্দাভাব। অথচ এ মৌসুমের সময় পাট বাজার থাকতো রমরমা। পাট বিক্রি করতে কেউ ভ্যানে করে, আবার কেউ মাথায় করে বাজারে এনেছেন। তবে তাদের সংখ্যা কম। এ অঞ্চলে পাটের গুণগত মান ভালো হওয়ার পরও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা।
বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা স্থানীয় কৃষক আব্দুল আলিম জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও লোকসানের শঙ্কা নিয়েই নিজেদের সবটুকু জমিতে পাট বুনেছেন তারা। এবার পুরো বর্ষাকাল ছিল অনাবৃষ্টি। সে সময় ডিজেল পুড়িয়ে ক্ষেতে সেচ দিতে হয়েছে। যার কারণে খরচ বেড়েছে। ফলন মোটামুটি হলেও বাজারে পাটের দাম নেই।
সালথা উপজেলার পাট চাষি আকতার হোসেন বলেন, এ বছর পাট কাটার পর আশপাশের খাল-বিল ও নালায় পানি না থাকায় জাগ দিতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। মাথায় ও ভ্যানে করে দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। পাট গাছের আঁটি ও জাগ দেয়ার পর শ্রমিক দিয়ে আঁশ ছাড়ানো ও শুকনোর জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে, সেটা ধান বা মৌসুমের অন্য যেকোনো ফসলের জন্য করলে অনেক লাভবান হতাম।
সহস্রাইল বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা সাধন বিশ্বাস বলেন, এবার খরচ বেশী হয়েছে। ফলন তেমন ভালো হয়নি। এখন বাজারে যে দরে পাট বিক্রি হচ্ছে, এতে লোকসান হচ্ছে। লাভ তো দূরে থাক খরচই উঠছে না। দাম না বাড়লে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
বড়গাঁ বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা পাট চাষি সুইট মন্ডল বলেন, ভালো মানের এক মণ পাট সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ দামে পাট বিক্রি করে লাভের বদলে লোকসান হচ্ছে। শ্রমের দামও উঠছে না।
কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী আনন্দ সাহা জানান, এখন পাটের ভরা মৌসুম। তারপরও বাজারে পাটের আমদানি অনেক কম। হাটের দিন যেখানে একজন ব্যবসায়ী পাঁচ থেকে সাত ট্রাক পাট ক্রয় করতেন, সেখানে দুই থেকে তিন ট্রাকও পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, এ বছর ফরিদপুরে পাটের উৎপাদন কম হলেও পাটের গুণগতমান অনেক ভালো। বর্তমানে মণপ্রতি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেড়েছে এটা ঠিক। তবুও পাট আবাদে চাষিদের আগ্রহ আছে। সরকার পাট চাষিদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে আসছে। আমরা সব সময় চাষিদের পাশে আছি।

Write Your Comment

About Author Information

SK Farid

পাট চাষে উৎপাদন খরচ না ওঠায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা

Update Time : 04:40:18 pm, Saturday, 21 September 2024
পাট চাষে উৎপাদন খরচ না ওঠায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা

ফরিদপুরে পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। এ বছর উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে লোকসান। এদিকে ভরা মৌসুমেও হাট-বাজারগুলোতে তেমন পাট নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলা সদরসহ নয়টি উপজেলায় ৮৬ হাজার ৫শ’ ২৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৬১ মেট্রিক টন।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন হাট-বাজার ও পাটের আড়তগুলোতে ভালো মানের এক মণ পাট সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর প্রখর খরার কারণে পাট গাছ বড় ও মোটা হতে পারেনি। এতে পাটের আশ কম হওয়ায় ফলনও অনেক কম হয়েছে। এছাড়া সার, বীজ, তেল, কীটনাশক ও মজুরির খরচ বেড়েছে কিন্তু এই দামে পাট বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।
জেলার বিভিন্ন পাটের হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাট বেচাকেনায় মন্দাভাব। অথচ এ মৌসুমের সময় পাট বাজার থাকতো রমরমা। পাট বিক্রি করতে কেউ ভ্যানে করে, আবার কেউ মাথায় করে বাজারে এনেছেন। তবে তাদের সংখ্যা কম। এ অঞ্চলে পাটের গুণগত মান ভালো হওয়ার পরও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা।
বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা স্থানীয় কৃষক আব্দুল আলিম জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও লোকসানের শঙ্কা নিয়েই নিজেদের সবটুকু জমিতে পাট বুনেছেন তারা। এবার পুরো বর্ষাকাল ছিল অনাবৃষ্টি। সে সময় ডিজেল পুড়িয়ে ক্ষেতে সেচ দিতে হয়েছে। যার কারণে খরচ বেড়েছে। ফলন মোটামুটি হলেও বাজারে পাটের দাম নেই।
সালথা উপজেলার পাট চাষি আকতার হোসেন বলেন, এ বছর পাট কাটার পর আশপাশের খাল-বিল ও নালায় পানি না থাকায় জাগ দিতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। মাথায় ও ভ্যানে করে দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। পাট গাছের আঁটি ও জাগ দেয়ার পর শ্রমিক দিয়ে আঁশ ছাড়ানো ও শুকনোর জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে, সেটা ধান বা মৌসুমের অন্য যেকোনো ফসলের জন্য করলে অনেক লাভবান হতাম।
সহস্রাইল বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা সাধন বিশ্বাস বলেন, এবার খরচ বেশী হয়েছে। ফলন তেমন ভালো হয়নি। এখন বাজারে যে দরে পাট বিক্রি হচ্ছে, এতে লোকসান হচ্ছে। লাভ তো দূরে থাক খরচই উঠছে না। দাম না বাড়লে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
বড়গাঁ বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা পাট চাষি সুইট মন্ডল বলেন, ভালো মানের এক মণ পাট সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ দামে পাট বিক্রি করে লাভের বদলে লোকসান হচ্ছে। শ্রমের দামও উঠছে না।
কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী আনন্দ সাহা জানান, এখন পাটের ভরা মৌসুম। তারপরও বাজারে পাটের আমদানি অনেক কম। হাটের দিন যেখানে একজন ব্যবসায়ী পাঁচ থেকে সাত ট্রাক পাট ক্রয় করতেন, সেখানে দুই থেকে তিন ট্রাকও পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, এ বছর ফরিদপুরে পাটের উৎপাদন কম হলেও পাটের গুণগতমান অনেক ভালো। বর্তমানে মণপ্রতি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেড়েছে এটা ঠিক। তবুও পাট আবাদে চাষিদের আগ্রহ আছে। সরকার পাট চাষিদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে আসছে। আমরা সব সময় চাষিদের পাশে আছি।