কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৫৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ‘প্রকল্প বিলাস’ বলে অভিহিত করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বিগত সরকার অসংখ্য মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যেগুলো বিলাসী প্রকল্প। যা এখন জনগণের সরাসরি উপকারে আসছে না। জনগণ সরাসরি উপকৃত হয় না- এ রকম প্রকল্প গ্রহণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকা পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার হিল ডাউন সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দেশের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য যথাসময়ে কয়লা আমদানি করা হবে উপদেষ্টা বলেন, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে যে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে- তা একটি বিলাসী প্রকল্প। প্রকল্প গ্রহণকালে প্রথমে ৩৬ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে তা ৫৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। অথচ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মাত্র ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি প্ল্যান্ট করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নকালে মেগা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগগুলো তদন্ত করা হবে।ইতোমধ্যে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের এমডি আবুল কালাম আজাদকে প্রকল্প থেকে বাদ দিয়ে নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদনের জন্য মাত্র ৩০ দিনের কয়লা মজুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে শনিবার দুপুরে উপদেষ্টা কক্সবাজার থেকে সড়কপথে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গিয়ে পৌঁছান। পরে তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর ঘুরে দেখেন। পরিদর্শন শেষে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা কেন্দ্রের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাব্য কয়লা সংকট কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়- তা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। পরিদর্শনকালে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের চেয়ারম্যানসহ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে মাতারবাড়ীর ১ হাজার ৬০০ একরের পরিত্যক্ত লবণ মাঠে নির্মাণ হচ্ছে দেশের বৃহৎ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা দিচ্ছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা, বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। আগামী ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে।