হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ
রোববার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যে প্রাণঘাতী সহিংসতা চালানো হয়েছিল, তার বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনাকে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে যে প্রাণঘাতী সহিংসতা চালানো হয়েছিল, তার বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
টানা কয়েক সপ্তাহের আন্দোলন এবং কর্তৃপক্ষের নির্মম দমন-পীড়নের পর, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট সামরিক হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে ভারতের নয়াদিল্লির কাছে একটি বিমানঘাঁটিতে আশ্রয় নেন।
ভারতে হাসিনার উপস্থিতি ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশ যখন উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন একটি কূটনৈতিক বিরোধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটর জানান, ১৫ বছর ধরে কঠোর হাতে দেশ শাসনের অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে আন্দোলনের সময় “গণহত্যা” পরিচালনার দায়ে বিচারের জন্য ফেরত আনা হবে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধান অপরাধী যেহেতু দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, আমরা তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করব।”
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, “শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১৩ সালে ভারতের সাথে বাংলাদেশের একটি অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “যেহেতু তাকে বাংলাদেশে গণহত্যার প্রধান আসামি করা হয়েছে, আমরা তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আইনিভাবে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।”
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত ও বিচারের জন্য শেখ হাসিনা ২০১০ সালে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেছিলেন।
কূটনৈতিক উত্তেজনা
বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের গণহারে আটক এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার সরকার টানা কয়েক সপ্তাহের ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়।
প্রাথমিকভাবে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির আগে কয়েক সপ্তাহের সহিংসতায় ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যা ‘সম্ভবত প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম’ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে ভারতে পালানোর পর থেকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। ঢাকা তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির একটি ধারা অনুসারে, অপরাধের “রাজনৈতিক চরিত্র” থাকলে প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে।
তবে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ক্ষমতাচ্যুত নেত্রীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ঢাকা দৃঢ়ভাবে চাপ দেবে।
হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সপ্তাহে ভারতের সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “যদি ভারত তাকে রাখতে চায় তবে শর্ত হলো– তাকে নীরব থাকতে হবে, যতক্ষণ না বাংলাদেশ তাকে ফেরত চায়।”
হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের জনসাধারণ একদিকে ড. ইউনূসের সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করছে এবং অন্যদিকে তাদের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বাংলাদেশে এনে বিচার করতে হবে।
এই চাপের ফলে ভারত একটি জটিল অবস্থায় পড়েছে এবং দিল্লি ও ঢাকার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।