পরিবেশবাদী সংগঠনের উদ্যোগে মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে মাঠের চারপাশে ৮৫টি গাছের চারা রোপণ করেছিলেন একদল তরুণ। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে এসব চারার গোড়া ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ তরুণেরা শুকিয়ে যাওয়া চারাগুলোয় প্রতিবাদমূলক বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হরিরামপুর শ্যামল নিসর্গ নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন প্রায় আড়াই মাস আগে জেলা শহরে সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠের চারপাশে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন দুর্লভ ঔষধি গাছের চারাগুলো রোপণ করে। এর মধ্যে ছিল আমলকী, নিম, হরীতকী, বহেরা, রুদ্র পলাশ, তমাল, বকুল, হলুদ শিমুল, অর্জুন, তেঁতুল, ডেউয়া, দেবদারুগাছের চারা। সংগঠনের সদস্যদের নিয়মিত পরিচর্যা ও যত্নে গাছের চারাগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। কিন্তু গতকাল বুধবার বিকেলে সংগঠনের সদস্যরা মাঠে গিয়ে চারাগুলো গোড়া থেকে ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের চারপাশে লাগানো প্রতিটি চারা গোড়া থেকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা হাত দিয়ে এসব চারার গোড়া মুচড়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। ফলে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে আটকানো চারাগুলো মরে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা মৃত গাছের চারার সঙ্গে বিভিন্ন লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দেন। প্ল্যাকার্ডে লেখাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘অক্সিজেন কি অপরাধ?’, ‘মানুষের সন্তান গাছ হত্যা করতে পারে না’, ‘গাছের প্রতি বর্বরতা কেন?’, ‘সবুজ মাঠে অবুঝ মানুষের প্রবেশ বন্ধ হোক’, ‘গাছের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ হোক’, ‘গাছখুনিদের বিচার চাই’ ইত্যাদি।
এ ঘটনায় সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হবে জানিয়ে সংগঠনের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘গাছ হচ্ছে পৃথিবীর ফুসফুস। আমরা তরুণদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে ওই সব চারা রোপণ করেছিলাম। কিন্তু গাছের সঙ্গে কেন এই বর্বরতা? আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। নতুন করে আবার সেখানে গাছ লাগাতে চাই।’
মানিকগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবাদী আন্দোলন করে আসছেন দীপক কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশবিরোধী চক্র পরিকল্পিতভাবে এসব গাছের চারা হত্যা করেছে। এ কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
গাছের সঙ্গে এই নিষ্ঠুরতায় হতবাক মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মাকসুদা ইয়াসমিনও। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেবেন তিনি। কারা এই গাছের চারা হত্যা করেছে, তা জানার চেষ্টা করবেন।