7:34 pm, Sunday, 22 December 2024
প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন

বাংলা বসন্তের হাওয়া লাগলো এবার ইন্দোনেশিয়ায়

জোকো ইউদোদো। ছবি: সংগৃহীত

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

বাংলা বসন্তের হাওয়া লাগলো এবার ইন্দোনেশিয়ায়। সরকার পতনের আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে হাজারো নাগরিক। তাহলে শ্রীলংকা, বাংলাদেশের পর ইন্দোনেশিয়াও একই পথে হাঁটছে ?

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় বেশ উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সে দেশের হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। অন্যদিকে, জোকো ইউদোদো নিরুত্তাপ। ‘জোট সরকারের গুরু’ হিসেবেই তাকে বিশ্ব চেনে। কিন্তু কেন হঠাৎ এ রকমভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি?

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের পদে জোকো বসেন ২০১৪ সালে। সে দেশের সংবিধান অনুযায়ী কোনও রাষ্ট্রনেতা ১০ বছরের বেশি প্রেসিডেন্টের পদে থাকতে পারেন না। তাই নিয়ম অনুযায়ী, জোকোকে এবার গদি ছাড়তেই হবে। কিন্তু অভিযোগ, কিছুতেই নাকি গদি ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না জোকো। গদি বাঁচাতে আইনি আটঘাট বাঁধতেও তৈরি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তাঁর দলই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে ভারত: জয়শঙ্কর
অবশেষে, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সেনাকর্তা প্রবোও সুবিয়ান্তোর নাম মনোনীত করেন জোকো। গত ফেব্রুয়ারির ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হন প্রবোও। অক্টোবরে জোকো পদ ছাড়ার পরেই তিনি বসবেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের পদে।

অভিযোগ, নিজে আর প্রেসিডেন্টের পদে থাকতে না পারলেও দুই ছেলেই যাতে দেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন তার জন্য ঘুঁটি সাজিয়েছেন জোকো। জোকোর ছোট ছেলে কাইসাং পাঙ্গরেপ ইন্দোনেশিয়ার একজন জনপ্রিয় ভ্লগার। জোকো চান জাকার্তার গভর্নরের পদে বসুন ২৯ বছরের পাঙ্গরেপ। কিন্তু সে দেশের আইন এত দিন বলত ৩০ বছর বয়স না হলে গভর্নরের আসনে বসা যায় না।

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাব খাটিয়ে জোকো এমন আইন এনেছেন যে, গর্ভনর পদপ্রার্থী কেউ ৩০-এর কম বয়সেও মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। তবে শপথগ্রহণের সময়ে তার বয়স ৩০ হতেই হবে।

ফলত, বয়সের নিরিখে অনায়াসেই গর্ভনর পদের জন্য যোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছেন পাঙ্গরেপ। হিসাব কষে দেখা গিয়েছে, নভেম্বরে ভোটের সময় ৩০ বছর না হলেও পাঙ্গরেপ যদি জাকার্তার গভর্নর হন, তা হলে শপথগ্রহণের সময় তার বয়স ৩০ বছর হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই জাকার্তার গর্ভনর হওয়ার জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন পাঙ্গরেপ।

ইতিমধ্যে বড়ো ছেলে, জিবরান রাকাবুমিং রাকেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করে ফেলেছেন জোকো। তিনিও বয়সের জাঁতাকলে আটকে গিয়েছিলেন।

ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে ন্যূনতম ৪০ বছর বয়স হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু জিবরানের বয়স বর্তমানে ৩৬। অভিযোগ, বড় ছেলের বয়সের বাধা কাটাতে সে দেশের শীর্ষ আদালত থেকে আদেশ পাশ করিয়েছেন জোকো। যার ফলে অনায়াসে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়েছেন জিবরান। ইন্দোনেশিয়ার সুপ্রিম কোর্টের যে বিচারপতি এই রায় দিয়েছেন, তিনি আবার সম্পর্কে জোকোর শ্যালক। জিবরানের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি একাধিক অভিযোগ। সেই ছেলেকেই ভাইস প্রেসিডেন্টর পদে বসাচ্ছেন জোকো।

গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রচুর ভোটে জিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়া পাকা করে ফেলেছেন জিবরান। পদে বসা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। অভিযোগ উঠেছে, ইন্দোনেশিয়ায় নিজের প্রভাব ধরে রাখতে চালাকি করে প্রবোহকে প্রেসিডেন্ট এবং পুত্রকে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে বসাচ্ছেন জোকো। তবে এ নিয়ে নিজের সরকারেরই বিরোধিতা করে বসেছেন জোকো। জোকোর পরে সরকারের ক্ষমতায় আসা নিয়ে আশাবাদী ছিলেন তারই দল পিডিপি-আই নেত্রী তথা প্রাক্তন প্রেসিডন্ট সুকর্ণের কন্যা মেঘাবতী সুকর্ণপুত্রী। কিন্তু জোকো কাছের লোকেদেরই সরকারে রাখার ব্যবস্থা প্রায় পাকা করে ফেলেছেন।

ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে জোকোর রাজনৈতিক বুদ্ধি এবং প্রভাব পরিচিত ‘জোকোই ইফেক্ট’ নামে। ২০২৪ সালের ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বন্ধু প্রবোহ এবং পুত্র জিবরানের জয়ের নেপথ্যেও তা রয়েছে বলেই কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

তবে দেশের বাসিন্দাদের একাংশ আবার জোকোর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ এবং কর্তৃত্ববাদের অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমেছেন। আর তার জেরেই অশান্ত ইন্দোনেশিয়া।

তবে জোকোর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদের নেপথ্যে মেঘাবতী এবং তার ঘনিষ্ঠরা কলকাঠি নাড়ছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।

সূত্র: আনন্দবাজার।

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat

কনক্রিট হল ব্লক- বাড়ির শক্ত ভিতের জন্য সেরা পছন্দ

প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন

বাংলা বসন্তের হাওয়া লাগলো এবার ইন্দোনেশিয়ায়

Update Time : 07:50:01 pm, Friday, 30 August 2024

বাংলা বসন্তের হাওয়া লাগলো এবার ইন্দোনেশিয়ায়। সরকার পতনের আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে হাজারো নাগরিক। তাহলে শ্রীলংকা, বাংলাদেশের পর ইন্দোনেশিয়াও একই পথে হাঁটছে ?

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় বেশ উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সে দেশের হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। অন্যদিকে, জোকো ইউদোদো নিরুত্তাপ। ‘জোট সরকারের গুরু’ হিসেবেই তাকে বিশ্ব চেনে। কিন্তু কেন হঠাৎ এ রকমভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি?

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের পদে জোকো বসেন ২০১৪ সালে। সে দেশের সংবিধান অনুযায়ী কোনও রাষ্ট্রনেতা ১০ বছরের বেশি প্রেসিডেন্টের পদে থাকতে পারেন না। তাই নিয়ম অনুযায়ী, জোকোকে এবার গদি ছাড়তেই হবে। কিন্তু অভিযোগ, কিছুতেই নাকি গদি ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না জোকো। গদি বাঁচাতে আইনি আটঘাট বাঁধতেও তৈরি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তাঁর দলই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে ভারত: জয়শঙ্কর
অবশেষে, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সেনাকর্তা প্রবোও সুবিয়ান্তোর নাম মনোনীত করেন জোকো। গত ফেব্রুয়ারির ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হন প্রবোও। অক্টোবরে জোকো পদ ছাড়ার পরেই তিনি বসবেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের পদে।

অভিযোগ, নিজে আর প্রেসিডেন্টের পদে থাকতে না পারলেও দুই ছেলেই যাতে দেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন তার জন্য ঘুঁটি সাজিয়েছেন জোকো। জোকোর ছোট ছেলে কাইসাং পাঙ্গরেপ ইন্দোনেশিয়ার একজন জনপ্রিয় ভ্লগার। জোকো চান জাকার্তার গভর্নরের পদে বসুন ২৯ বছরের পাঙ্গরেপ। কিন্তু সে দেশের আইন এত দিন বলত ৩০ বছর বয়স না হলে গভর্নরের আসনে বসা যায় না।

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাব খাটিয়ে জোকো এমন আইন এনেছেন যে, গর্ভনর পদপ্রার্থী কেউ ৩০-এর কম বয়সেও মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। তবে শপথগ্রহণের সময়ে তার বয়স ৩০ হতেই হবে।

ফলত, বয়সের নিরিখে অনায়াসেই গর্ভনর পদের জন্য যোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছেন পাঙ্গরেপ। হিসাব কষে দেখা গিয়েছে, নভেম্বরে ভোটের সময় ৩০ বছর না হলেও পাঙ্গরেপ যদি জাকার্তার গভর্নর হন, তা হলে শপথগ্রহণের সময় তার বয়স ৩০ বছর হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই জাকার্তার গর্ভনর হওয়ার জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন পাঙ্গরেপ।

ইতিমধ্যে বড়ো ছেলে, জিবরান রাকাবুমিং রাকেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করে ফেলেছেন জোকো। তিনিও বয়সের জাঁতাকলে আটকে গিয়েছিলেন।

ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে ন্যূনতম ৪০ বছর বয়স হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু জিবরানের বয়স বর্তমানে ৩৬। অভিযোগ, বড় ছেলের বয়সের বাধা কাটাতে সে দেশের শীর্ষ আদালত থেকে আদেশ পাশ করিয়েছেন জোকো। যার ফলে অনায়াসে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়েছেন জিবরান। ইন্দোনেশিয়ার সুপ্রিম কোর্টের যে বিচারপতি এই রায় দিয়েছেন, তিনি আবার সম্পর্কে জোকোর শ্যালক। জিবরানের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি একাধিক অভিযোগ। সেই ছেলেকেই ভাইস প্রেসিডেন্টর পদে বসাচ্ছেন জোকো।

গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রচুর ভোটে জিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়া পাকা করে ফেলেছেন জিবরান। পদে বসা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। অভিযোগ উঠেছে, ইন্দোনেশিয়ায় নিজের প্রভাব ধরে রাখতে চালাকি করে প্রবোহকে প্রেসিডেন্ট এবং পুত্রকে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে বসাচ্ছেন জোকো। তবে এ নিয়ে নিজের সরকারেরই বিরোধিতা করে বসেছেন জোকো। জোকোর পরে সরকারের ক্ষমতায় আসা নিয়ে আশাবাদী ছিলেন তারই দল পিডিপি-আই নেত্রী তথা প্রাক্তন প্রেসিডন্ট সুকর্ণের কন্যা মেঘাবতী সুকর্ণপুত্রী। কিন্তু জোকো কাছের লোকেদেরই সরকারে রাখার ব্যবস্থা প্রায় পাকা করে ফেলেছেন।

ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে জোকোর রাজনৈতিক বুদ্ধি এবং প্রভাব পরিচিত ‘জোকোই ইফেক্ট’ নামে। ২০২৪ সালের ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বন্ধু প্রবোহ এবং পুত্র জিবরানের জয়ের নেপথ্যেও তা রয়েছে বলেই কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

তবে দেশের বাসিন্দাদের একাংশ আবার জোকোর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ এবং কর্তৃত্ববাদের অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমেছেন। আর তার জেরেই অশান্ত ইন্দোনেশিয়া।

তবে জোকোর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদের নেপথ্যে মেঘাবতী এবং তার ঘনিষ্ঠরা কলকাঠি নাড়ছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।

সূত্র: আনন্দবাজার।