তৈরি পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা। তবে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন। অর্থাৎ শ্রমিকদের প্রস্তাবের প্রায় অর্ধেক মজুরি প্রস্তাব করেছে মালিকপক্ষ।
আজ রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা তাঁদের মতামত জানান। মজুরি বোর্ডের সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে সিরাজুল ইসলাম ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মো. সিদ্দিকুর রহমান তাঁদের প্রস্তাব দেন। সভা শেষে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
উভয় পক্ষের প্রস্তাব বিষয়ে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা জানান, ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে উভয় প্রস্তাব নিয়ে তাঁরা আরও আলোচনা করবেন। ন্যূনতম মাসিক মজুরি চূড়ান্ত করতে আগামী ১ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে দেশে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ নিয়ে আজকের সভা চলার পুরো সময়ে পোশাক খাতের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ের বাইরে স্লোগান দিয়েছেন। এ সময় মালিকদের প্রস্তাবিত ১০ হাজার ৪০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তাঁরা।
মজুরি বোর্ডের কাছে দেওয়া লিখিত প্রস্তাবে শ্রমিকপক্ষের সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমান নিত্যপণ্যের বাড়তি বাজারদর ছাড়াও আবাসন, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব খাতে খরচ বহুগুণ বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ২০১৫ সালে প্রায় ১২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির হার মাত্র ৫১ শতাংশ। অন্যদিকে ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়াসহ পোশাক খাতে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি অনেক কম। এসব বিবেচনায় পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন শ্রমিকেরা।
অন্যদিকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মো. সিদ্দিকুর রহমান তাঁর লিখিত প্রস্তাবে বলেন, ‘দেশের তৈরি পোশাক খাত করোনার ফলে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামালসহ অন্যান্য উৎপাদন খরচ যেভাবে বেড়েছে, সে তুলনায় আমাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি ও সুদহার বৃদ্ধির কারণে উন্নত দেশগুলোতে পোশাকের চাহিদা ও বিক্রি কমেছে। এসব কারণে নিকট ভবিষ্যতে পণ্যের মূল্যভিত্তিক প্রতিযোগিতায় আমাদের বাড়তি চাপে থাকতে হবে।’
দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে শ্রমিকদের স্বস্তি দিতে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির বিকল্প নেই উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, তবে এই মজুরি বৃদ্ধি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামর্থ্যের মধ্যে থাকতে হবে।