7:03 am, Sunday, 8 September 2024

যে দুই কারণে পোশাকশ্রমিকদের অসন্তোষ ও ক্ষোভ

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech
যে দুই কারণে পোশাকশ্রমিকদের অসন্তোষ ও ক্ষোভ

আধা পাকা বাসায় দুটি ছোট্ট কক্ষে স্বামী, দুই ছেলে-মেয়ে আর শাশুড়িকে নিয়ে থাকেন পোশাকশ্রমিক মোসাম্মত ফারজানা। তিনি একটি পোশাক কারখানায় বেশ কয়েক বছর ধরে অপারেটর পদে কাজ করছেন। গত মাসে ওভারটাইমসহ বেতন পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। তাঁর স্বামী ভ্যান চালান।

মোসাম্মত ফারজানা বলেন, দুই কক্ষের ভাড়া দিতে হয় তিন হাজার করে ছয় হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল আছে ৩০০ টাকা। ছেলে ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ আছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সংসার চালানোই কঠিন। এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা। আলু ৬০-৭০ টাকা। এক হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গেলেও বাজার করা যায় না। প্রতি মাসে মুদিদোকানে বাকি থাকছে।

ফারজানার মতো অধিকাংশ পোশাকশ্রমিকই বর্তমান মজুরিতে সংসার চালাতে পারছেন না। নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ২৩-২৫ হাজার টাকা মজুরি দাবি ও নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠনে আশাবাদী হয়েছিলেন পোশাকশ্রমিকেরা। কিন্তু মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি প্রস্তাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তাঁরা।

‘মজুরি বাড়ানো নিয়ে মজুরি বোর্ডে আলোচনা হচ্ছে। সেই আলোচনার পর সরকার মজুরি চূড়ান্ত করার পর তা না মেনে আন্দোলন হলে একটি যুক্তি ছিল। কিন্তু বর্তমান আন্দোলনের কারণ আমরা বুঝতে পারছি না।’
ফারুক হাসান, বিজিএমইএর সভাপতি

ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার বেশ কয়েকজন পোশাকশ্রমিক ও শ্রমিকনেতার সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের ক্ষোভের দুটি কারণই মূলত জানা গেছে। একটি বাজারে নিত্যপণ্যের চড়া দাম, অন্যটি মজুরি বোর্ডে মালিকদের কম মজুরি প্রস্তাব। তাঁরা বলছেন, বাজারে নিত্যপণ্যের যে দাম, তাতে বর্তমানে কোনোরকমে খেয়ে–পরে বেঁচে থাকতেই কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা মজুরি দরকার।

গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দেন। বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক মজুরির প্রস্তাব দেয়। তাতে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে শ্রমিকেরা আন্দোলন নামেন। সেই অসন্তোষ ছড়িয়েছে আশুলিয়া-সাভারেও। গত সোমবার দুজন পোশাকশ্রমিক নিহত হন। এরপর গতকাল আন্দোলন আরও সহিংস হয়ে ওঠে। গাজীপুরের বেশ কিছু কারখানা অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে।

এদিকে শ্রমিক আন্দোলন দমাতে চলতি সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা। শ্রম প্রতিমন্ত্রী শ্রমিকদের গুজবে কান না দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। নিম্নতম মজুরি বোর্ড সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, মজুরি হার চূড়ান্ত হয়নি, আলোচনা চলমান রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট

Bangladesh Diplomat | বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট | A Popular News Portal Of Bangladesh.
Popular Post

যে দুই কারণে পোশাকশ্রমিকদের অসন্তোষ ও ক্ষোভ

Update Time : 11:18:51 pm, Thursday, 2 November 2023
যে দুই কারণে পোশাকশ্রমিকদের অসন্তোষ ও ক্ষোভ

আধা পাকা বাসায় দুটি ছোট্ট কক্ষে স্বামী, দুই ছেলে-মেয়ে আর শাশুড়িকে নিয়ে থাকেন পোশাকশ্রমিক মোসাম্মত ফারজানা। তিনি একটি পোশাক কারখানায় বেশ কয়েক বছর ধরে অপারেটর পদে কাজ করছেন। গত মাসে ওভারটাইমসহ বেতন পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। তাঁর স্বামী ভ্যান চালান।

মোসাম্মত ফারজানা বলেন, দুই কক্ষের ভাড়া দিতে হয় তিন হাজার করে ছয় হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল আছে ৩০০ টাকা। ছেলে ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ আছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সংসার চালানোই কঠিন। এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা। আলু ৬০-৭০ টাকা। এক হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গেলেও বাজার করা যায় না। প্রতি মাসে মুদিদোকানে বাকি থাকছে।

ফারজানার মতো অধিকাংশ পোশাকশ্রমিকই বর্তমান মজুরিতে সংসার চালাতে পারছেন না। নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ২৩-২৫ হাজার টাকা মজুরি দাবি ও নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠনে আশাবাদী হয়েছিলেন পোশাকশ্রমিকেরা। কিন্তু মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি প্রস্তাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তাঁরা।

‘মজুরি বাড়ানো নিয়ে মজুরি বোর্ডে আলোচনা হচ্ছে। সেই আলোচনার পর সরকার মজুরি চূড়ান্ত করার পর তা না মেনে আন্দোলন হলে একটি যুক্তি ছিল। কিন্তু বর্তমান আন্দোলনের কারণ আমরা বুঝতে পারছি না।’
ফারুক হাসান, বিজিএমইএর সভাপতি

ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার বেশ কয়েকজন পোশাকশ্রমিক ও শ্রমিকনেতার সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের ক্ষোভের দুটি কারণই মূলত জানা গেছে। একটি বাজারে নিত্যপণ্যের চড়া দাম, অন্যটি মজুরি বোর্ডে মালিকদের কম মজুরি প্রস্তাব। তাঁরা বলছেন, বাজারে নিত্যপণ্যের যে দাম, তাতে বর্তমানে কোনোরকমে খেয়ে–পরে বেঁচে থাকতেই কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা মজুরি দরকার।

গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দেন। বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক মজুরির প্রস্তাব দেয়। তাতে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে শ্রমিকেরা আন্দোলন নামেন। সেই অসন্তোষ ছড়িয়েছে আশুলিয়া-সাভারেও। গত সোমবার দুজন পোশাকশ্রমিক নিহত হন। এরপর গতকাল আন্দোলন আরও সহিংস হয়ে ওঠে। গাজীপুরের বেশ কিছু কারখানা অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে।

এদিকে শ্রমিক আন্দোলন দমাতে চলতি সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা। শ্রম প্রতিমন্ত্রী শ্রমিকদের গুজবে কান না দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। নিম্নতম মজুরি বোর্ড সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, মজুরি হার চূড়ান্ত হয়নি, আলোচনা চলমান রয়েছে।