রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন জেগে উঠল পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা ভারত। বাড়তে থাকে ভিড়। বুধবার রাতে রাস্তার দখল নিতে শুরু করে মেয়েরা। যাদবপুর, অ্যাকাডেমি, কলেজ স্ট্রিট তো বটেই শহরের প্রতিটি কোণা, জেলায় জেলায় চলল জমায়েত। এমনকি রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে দিল্লি, মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুও রাত জাগছে আরজি করের নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের দাবিতে। রাত দখলে নেমেছে সুদূর স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরাও।
কলকাতা থেকে কুচবিহার, বনগাঁ থেকে বেহালা, সর্বত্রই রাতের রাজপথ চলে গেছে মেয়েদের দখলে। ব্যানার, ফেস্টুন হাতে পথে নেমে পড়েছে শত শত নারী। তাদের সঙ্গ দিচ্ছেন পুরুষরাও। কারও হাতে মশাল, কেউ জ্বেলেছেন মোবাইলের টর্চ। প্রত্যেকের দাবি একটাই, আরজি করকাণ্ডে সুবিচার চাই। সবার মুখে গর্জে উঠছে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। কেবলমাত্র কলকাতা নয়, সার্বিকভাবে গোটা রাজ্যের চিত্রটা একইরকম। এক কথায় বলা চলে, স্বতস্ফূর্ত গণজাগরণ।
আরজি কর হাসপাতালের সামনে জমায়েতে দেখা যাচ্ছে মশাল হাতে নারীদের মিছিল। কেউ জাতীয় পতাকা হাতে, কেউ মুখে কালো কাপড় বেঁধে রাতের শহর দখলের জমায়েতে হাজির।
রাত ৯টার আগে থেকেই যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে ভিড় বাড়তে শুরু করে। অ্যাকাডেমিতেও ভিড় আট থেকে আশি সব বয়সের নারীদের।
মশাল হাতে রাত দখলের আন্দোলনে ঝাড়গ্রামের নারীরা। আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে গর্জে উঠছে স্লোগান। হাওড়ায় বিভিন্ন রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। তাদের একটাই স্লোগান ‘ইনসাফ চাই’।
বাঁকুড়া জেলার নারীরাও ‘অস্থির হওনা শুধু প্রস্তুত হও, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানকে সামনে রেখে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘রাত দখল’-এর লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন।
বুধবার রাত ৯টা থেকে মেদিনীপুর শহরের পঞ্চুরচক রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশ থেকে মশাল জ্বেলে শুরু হয় মিছিল। বিক্ষোভ কর্মসূচি সোনাগাছিতেও। রাত দখলের কর্মসূচিতে পোস্টার-ব্যানার হাতে পথে যৌনকর্মীরাও।
বর্ধমানের কার্জনগেটের সামনে জড়ো হন বিপুল সংখ্যক মানুষ। রানির মূর্তির পাশে জমায়েত হয়। ভাতার,গুসকরা, মেমারি সব জায়গাতেই মিছিল বের হয়।
এদিকে, মিছিলে শ্যামবাজার অবরুদ্ধ। সিঁথিমোড়ের অবস্থাও তাই। অসংখ্য নারী, শিশুদের কোলে নিয়ে মিছিলে পা মিলিয়েছেন। রাজনৈতিক রং, দলমত নির্বিশেষে চলছে জমায়েত। লক্ষ্যণীয় ভিড় লক্ষ্য করা গেছে অল্পবয়সী মেয়েদের। সবটাই স্বতস্ফূর্ত।
গত ১০ আগস্ট রাতে ফেসবুকে পোস্ট করে মেয়েদের রাত দখলের আহ্বান জানিয়েছিলেন নারী নেত্রী রিমঝিম সিংহ। ক্রমে ক্রমে তা আন্দোলনের রূপ নেয়। প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার জন্য সকল নারীকে আহ্বান জানান তিনি। তবে তার আহ্বানে নারীদের পাশাপাশি সাড়া দেন অনেক পুরুষও। এ প্রসঙ্গে রিমঝিম বলেন, ‘‘এই বিপুল সাড়া প্রমাণ করে যে, আমাদের সকলের মধ্যেই ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই আমরা জড়ো হয়েছি। বিচার তো আমরা অবশ্যই চাইব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। মূলে গিয়ে শোষণের প্রত্যেকটা কারণকে তুলে ধরা দরকার।’’
প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ১৩৮ বছরের পুরোনো আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা ঘিরে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশ থেকে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিলোপের লক্ষ্যে বুধবার ভারতের স্বাধীনতা দিবসের রাতে রাস্তায় নেমে ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ নামের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি ভারতজুড়ে পালন করার ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা। ইতোমধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই আন্দোলনের সমর্থনে নারীরা রাত দখলের কর্মসূচি পালন করেছে।
সূত্র: আনন্দবাজার, এই সময়