০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জান্তার এক হাজার দিন পর যে অবস্থায় মিয়ানমার

Reporter Name
  • Update Time : ১১:০১:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৯১২ Time View

মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের এক হাজার দিন পার হলো। তিন মাস পর তাদের তিন বছর পূর্ণ হবে। তবে এত দিন টিকে থাকলেও চলতি সময়টা তাদের জন্য তৃপ্তিদায়ক হচ্ছে না। তাদের ভূরাজনৈতিক অভিভাবক গণচীনের জন্যও নয়। বিশেষ করে গত সপ্তাহ থেকে দেখা যাচ্ছে, জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ চীন সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে, যা চলতি গৃহযুদ্ধে প্রথমবার ঘটল এবং ঘটনা হিসেবে এটা বেশ বিস্ময়কর।

বর্ষা শেষে উত্তপ্ত শীতের প্রস্তুতি
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী জনগণের নির্বাচনী রায় বানচাল করে দেশের শাসনক্ষমতা নেয়। নিজেদের নাম রাখে তারা ‘স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল’। প্রায় তিন বছর ধরে গণতন্ত্রপন্থীরা এই কাউন্সিলের বিরুদ্ধে লড়ছে। ইতিমধ্যে এই সংগ্রামে প্রায় ১৪ হাজার রাজনৈতিক কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে।

প্রথম বছর এই প্রতিবাদ নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে কাজ করতে দেওয়ার দাবিতে অহিংস চরিত্রের মিছিল-সমাবেশে সীমিত ছিল। ২০২১ সালের শেষ দিক থেকে আন্দোলন পুরোদস্তুর সশস্ত্র রূপ নিয়েছে। মিয়ানমারে আগে থেকেই শান, কারেন, চিন, কাচিন, আরাকানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বিভিন্ন জাতিসত্তার সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে।

২০২২ সাল থেকে খোদ মূল জনগোষ্ঠী বামার তরুণেরাও অস্ত্র হাতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নামলে এখন প্রায় সব অঞ্চলে গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছিল, তখন কাকতালীয়ভাবে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে এক অভিনব ঘটনা ঘটে। দুই-তিন দিনের লড়াইয়ে শান এলাকায় জান্তা অনেক সৈন্য ও অস্ত্র হারায়। গেরিলাদের সেই অভিযান এই লেখা (৩১ অক্টোবর) পর্যন্ত চলছিল।

অক্টোবরে বর্ষা শেষ হয়ে নভেম্বরে শীত শুরু হয় মিয়ানমারে। মনে হচ্ছে, এবার জান্তার তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে তীব্র শীতের মধ্যেও সেখানে গোলাবারুদের বেশ উত্তাপ থাকবে।

এক অভিযানে ৪০টি সীমান্তচৌকি হারাল টাটমা-ড
মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শান প্রদেশ, এটি চীনসংলগ্ন। রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক—সব অর্থে এ অঞ্চলে চীনের খুব প্রভাব। এখানকার মানুষ মুঠোফোনে চীনের সিম কার্ড ব্যবহার করে। অর্থনৈতিক লেনদেনে ব্যবহৃত হয় চীনের মুদ্রা।

শান প্রদেশ উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ—তিন ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে উত্তর শানের কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় গেরিলা দল ওয়া আর্মি। এরা মূলত চীন প্রভাবিত। গত দুই বছর মিয়ানমারজুড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ চললেও শান প্রদেশ তুলনামূলক শান্ত ছিল। এর বড় কারণ ওয়ারা জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায়নি। জান্তার সৈন্যরাও ওয়া এলাকায় সচরাচর খবরদারি করতে যায় না। চীনের প্রভাবেই এই ‘সমঝোতা’ চলছে।

Tag : Bangladesh Diplomat, bd diplomat

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Bangladesh Diplomat | বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট

Bangladesh Diplomat | বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট | A Popular News Portal Of Bangladesh.

জান্তার এক হাজার দিন পর যে অবস্থায় মিয়ানমার

Update Time : ১১:০১:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩

মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের এক হাজার দিন পার হলো। তিন মাস পর তাদের তিন বছর পূর্ণ হবে। তবে এত দিন টিকে থাকলেও চলতি সময়টা তাদের জন্য তৃপ্তিদায়ক হচ্ছে না। তাদের ভূরাজনৈতিক অভিভাবক গণচীনের জন্যও নয়। বিশেষ করে গত সপ্তাহ থেকে দেখা যাচ্ছে, জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ চীন সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে, যা চলতি গৃহযুদ্ধে প্রথমবার ঘটল এবং ঘটনা হিসেবে এটা বেশ বিস্ময়কর।

বর্ষা শেষে উত্তপ্ত শীতের প্রস্তুতি
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী জনগণের নির্বাচনী রায় বানচাল করে দেশের শাসনক্ষমতা নেয়। নিজেদের নাম রাখে তারা ‘স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল’। প্রায় তিন বছর ধরে গণতন্ত্রপন্থীরা এই কাউন্সিলের বিরুদ্ধে লড়ছে। ইতিমধ্যে এই সংগ্রামে প্রায় ১৪ হাজার রাজনৈতিক কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে।

প্রথম বছর এই প্রতিবাদ নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে কাজ করতে দেওয়ার দাবিতে অহিংস চরিত্রের মিছিল-সমাবেশে সীমিত ছিল। ২০২১ সালের শেষ দিক থেকে আন্দোলন পুরোদস্তুর সশস্ত্র রূপ নিয়েছে। মিয়ানমারে আগে থেকেই শান, কারেন, চিন, কাচিন, আরাকানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বিভিন্ন জাতিসত্তার সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে।

২০২২ সাল থেকে খোদ মূল জনগোষ্ঠী বামার তরুণেরাও অস্ত্র হাতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নামলে এখন প্রায় সব অঞ্চলে গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছিল, তখন কাকতালীয়ভাবে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে এক অভিনব ঘটনা ঘটে। দুই-তিন দিনের লড়াইয়ে শান এলাকায় জান্তা অনেক সৈন্য ও অস্ত্র হারায়। গেরিলাদের সেই অভিযান এই লেখা (৩১ অক্টোবর) পর্যন্ত চলছিল।

অক্টোবরে বর্ষা শেষ হয়ে নভেম্বরে শীত শুরু হয় মিয়ানমারে। মনে হচ্ছে, এবার জান্তার তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে তীব্র শীতের মধ্যেও সেখানে গোলাবারুদের বেশ উত্তাপ থাকবে।

এক অভিযানে ৪০টি সীমান্তচৌকি হারাল টাটমা-ড
মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শান প্রদেশ, এটি চীনসংলগ্ন। রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক—সব অর্থে এ অঞ্চলে চীনের খুব প্রভাব। এখানকার মানুষ মুঠোফোনে চীনের সিম কার্ড ব্যবহার করে। অর্থনৈতিক লেনদেনে ব্যবহৃত হয় চীনের মুদ্রা।

শান প্রদেশ উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ—তিন ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে উত্তর শানের কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় গেরিলা দল ওয়া আর্মি। এরা মূলত চীন প্রভাবিত। গত দুই বছর মিয়ানমারজুড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ চললেও শান প্রদেশ তুলনামূলক শান্ত ছিল। এর বড় কারণ ওয়ারা জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায়নি। জান্তার সৈন্যরাও ওয়া এলাকায় সচরাচর খবরদারি করতে যায় না। চীনের প্রভাবেই এই ‘সমঝোতা’ চলছে।