বলা বাহুল্য, ইতিপূর্বে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে ইসরায়েল যে বড় চারটি হামলা চালিয়েছে, সে সময় আরব দেশগুলো যে রকম দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল কিংবা অনেক ক্ষেত্রে নির্লিপ্ত ছিল, এবারও তাদের মধ্যে সে ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে ইসরায়েল এবার আগের হামলাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক তৎপরতা নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলের এই নগ্ন গণহত্যা যদি এখনই বন্ধ না হয়, তাহলে তা আরব বিশ্বে ভয়ংকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
সাধারণত আরব দেশগুলোর সাধারণ মানুষ যখন অবরুদ্ধ ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির ওপর ইসরায়েলি হামলার জের ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তখনই আরব নেতারা নড়েচড়ে বসেন। যদিও ফিলিস্তিনই আরবদের প্রধান ইস্যু ছিল এবং আছে, তথাপি আরব নেতারা এই বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যে কিছু গরম বক্তব্য দেওয়া বা বকবক করাকেই যথেষ্ট বলে মনে করে থাকেন।
আরও পড়ুন
এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যা করছে, যা করতে পারে
গত ১১ অক্টোবর কায়রোয় অনুষ্ঠিত আরব লিগের বৈঠকে আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ‘উভয় পক্ষের’ হামলা ও বেসামরিক মানুষ হতাহত করার বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা দখলদারির শিকার এবং দখলদার—উভয়কেই এক কাতারে নিয়ে এসেছেন।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে একটি সর্বাধুনিক সমরসজ্জায় সমৃদ্ধ নৃশংস রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে এক পাল্লায় মেপেছেন। ভয়াবহ গণহত্যা শুরু করার মধ্য দিয়ে ১৯৪৮ সালের নাকবার (ফিলিস্তিনিদের মহাদুর্যোগ) পুনরাবৃত্তি করে ইসরায়েল যখন গাজাবাসীকে তাড়া করা শুরু করেছে, তখনো তাঁরা শান্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মিনমিন করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
তবে গত ১৭ অক্টোবর গাজার আল-আহলি হাসপাতালে বোমা মেরে প্রায় ৪৭০ জন সাধারণ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করার পর আরব ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের মানুষ যে মাত্রায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তা আরব দেশগুলোকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছুটা শক্ত অবস্থান নিতে বাধ্য করেছে। এর কয়েক দিন পরই আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার নিন্দা জানাতে এবং ইসরায়েলি হামলা বন্ধে প্রস্তাব পাস করতে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোকে অনুরোধ করতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন
গাজার যুদ্ধ সেই হাসান তেহরানির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে
এই প্রস্তাবের পক্ষে বেশির ভাগ দেশের অকুণ্ঠ সমর্থন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসরায়েলের বিচ্ছিন্নতাকে প্রকাশ করে দিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল সে প্রস্তাবকে সামান্যতম পাত্তা দেয়নি। তারা ‘বিশ্বের যা বলার আছে তা বলবে আর ইসরায়েলের যা করার আছে তা করবে’ নীতি অনুসরণ করছে। তারা কোনো আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে গাজায় স্থল অভিযান চালাতে থাকে এবং ৩৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ রেখে সেখানে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করে।
ইসরায়েল বিশ্বাস করে, আরব দেশগুলোর নেতারা নিজের স্বার্থ নিয়ে নিজেদের মধ্যে এতটাই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছেন যে ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাঁদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দুঃখের বিষয়, তাদের সেই ধারণা বা বিশ্বাস মিথ্যা নয়।
ফিলিস্তিনের প্রতি আরবদের সমর্থন বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭৯ সালে মিসরের তৎকালীন আনোয়ার সাদাতের সরকারের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তি হওয়ার পরই সেই সমর্থন হ্রাসের শুরু হয়েছিল। এর তিন বছর পর ইসরায়েল লেবাননে দখলাভিযান চালায়। সে সময় কোনো আরব দেশ লেবাননের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। ওই সময় লেবানন পিএলওকে (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) তাদের ভূখণ্ড থেকে বহিষ্কার করে। এর সূত্র ধরেই লেবাননে হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনে হামাসের উত্থান ঘটে।
আরও পড়ুন