12:59 am, Tuesday, 17 September 2024

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে থার্ড ক্লাস পাওয়া চবি ভিসির পদত্যাগ

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও উপাচার্য ড. আবু তাহের

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে থার্ড ক্লাস পাওয়া চবি ভিসির পদত্যাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্যেই ফাঁস হলো উপাচার্য ড. আবু তাহেরের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ। তার এসএসসি, এইচএসসি ও পিএইচডি সনদ গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। সনদ অনুযায়ী চবি উপাচার্যের উচ্চ মাধ্যমিকে (এইচএসসি) ফলাফল ছিল ‘থার্ড ক্লাস!’

একাধিক সনদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭৯ সালে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি। সেসময় পরীক্ষয়া টেনেটুনে থার্ড ক্লাস তুলতে সক্ষম হন। এর আগে ১৯৭৭ সালে মাধ্যমিকে (এসএসসি) পান সেকেন্ড ক্লাস। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সনদ নেন তিনি।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে থার্ড ক্লাস পাওয়া কেউ যেখানে শিক্ষার্থী হওয়ার যোগ্যতাই রাখে না, সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কীভাবে হলেন, সেই প্রশ্নই এখন উঠেছে। এমন রেজাল্টধারীকে আওয়ামী লীগ সরকার দুই বার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য করেছে। সবশেষ চবি উপাচার্যের চেয়ারেও বসিয়ে দিয়েছে। আবু তাহের পিএইচডিও করেছেন চবি থেকেই!

রোববার (১১ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ড. আবু তাহের। তবে পদত্যাগপত্রটি প্রকাশ্যে আসে সোমবার।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা দলীয়করণ হলে সরকার থার্ড ক্লাস পাওয়া একজনকে দেশের শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতের অনেক শিক্ষকেরও ফার্স্টক্লাস রেজাল্টের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার জন্য তারা গেছেন হার্ভাড, ক্যাম্ব্রিজ, অক্সফোর্ড, ডারহামসহ বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের কিন্তু সরকার উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, উপাচার্য পদ পেতে আবু তাহেরকে সদ্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করতে হয়েছে। বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে নওফেলদের মালিকানা পাইয়ে দিতে তিনিই ম্যানেজারি করেছেন। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে তাকে দুই বার সদস্য করা হয়। এই পদে থেকেই নওফেলের হয়ে কাজ করেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর ২০১০ সাল থেকেই আবু তাহের সরকারি পদ-পদবি নিয়েই চলছেন। গত ১৪ বছরে একদিনের জন্যও তাকে পদ ছাড়া থাকতে হয়নি। শুরুতেই ঢাকার নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে তাকে নিয়োগ দেয় সরকার। সেখানে আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় চার বছর মেয়াদ পূর্তির আগেই তাকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করে ট্রাস্টি বোর্ড। সেখান থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর শাস্তির বদলে তাকে দলীয় বিবেচনায় পুরস্কার দেওয়া হয়। তাকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েও বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে তাকে কিছুদিনের মাথায় বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এরপর যেকোনো উপায়ে এই থার্ড ক্লাসধারী শিক্ষক বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য হয়ে যান। নিয়ম অনুযায়ী— একবারের বেশি কেউ সদস্য পদে থাকতে না পারলেও তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে নওফেল ইউজিসির সদস্য বানায়। ইউজিসি সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে নওফেলের হাতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় তুলে দেওয়ার ম্যাকানিজম তৈরি করার পুরস্কারস্বরূপ থার্ড ক্লাসধারী প্রফেসর আবু তাহেরকে দেশের শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়।

উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েই নিজেকে সাধু হিসেবে পরিচয় ঘটাতে তিনি খড়্‌গহস্ত হয়ে উঠেন। কোটা সংস্কার ইস্যুতে তিনিই প্রথম সরকারকে শিক্ষার্থীদের উপর বল প্রয়োগের পরামর্শ দেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে দেড় মাস সময়ের মধ্যে ৪ থেকে ৫ দিনও উপাচার্য চট্টগ্রামে থাকেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ফেলে তিনি ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন।

আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলসহ উপাচার্য আবু তাহেরের আমেরিকা সফরের দিনক্ষণও ঠিকঠাক ছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় বিমান টিকিটও বুকিং করা হয়। কিন্তু আন্দোলনের কারণে নওফেল যেতে অপারগতা প্রকাশ করায়, আবু তাহেরের আর মন্ত্রীর সঙ্গে ভ্রমণবিলাস করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

ইউজিসির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মকে বৈধতা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে। সেই টাকা থেকে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে ম্যানেজ করে এবং নওফেলকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় দখলের সুযোগ দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি ভাগিয়ে নেন।

অভিযোগ রয়েছে, কোটা আন্দোলনের শুরুতেই ছাত্রদের ওপর বলপ্রয়োগ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডিকে ব্যবহারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছে আবু তাহের। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের রাতারাতি হল থেকে বের করে দিতে প্রক্টরিয়াল বডিকে চাপ দেয় আবু তাহের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মিছিল করায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশনাও দেন।

শেখ হাসিনার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রভোস্টদের পদত্যাগের দাবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডি ও তিন হলের প্রভোস্ট পদত্যাগপত্র জমা দেন উপাচার্যকে। কিন্তু আবু তাহের পদত্যাগপত্র দিতে গড়িমসি করে। তবে শেষমেশ শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পদত্যাগকারী উপাচার্য আবু তাহেরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস হতে হবে। শিক্ষাজীবনে তৃতীয় বিভাগ (শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ/জিপিএ) গ্রহণযোগ্য হবে না।

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat

Popular Post

ভারতকে বাংলাদেশের ব্যাপারে সাবধান করলেন কিংবদন্তি ব্যাটার সুনীল গাভাস্কার

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে থার্ড ক্লাস পাওয়া চবি ভিসির পদত্যাগ

Update Time : 07:44:51 am, Tuesday, 13 August 2024
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে থার্ড ক্লাস পাওয়া চবি ভিসির পদত্যাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্যেই ফাঁস হলো উপাচার্য ড. আবু তাহেরের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ। তার এসএসসি, এইচএসসি ও পিএইচডি সনদ গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। সনদ অনুযায়ী চবি উপাচার্যের উচ্চ মাধ্যমিকে (এইচএসসি) ফলাফল ছিল ‘থার্ড ক্লাস!’

একাধিক সনদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭৯ সালে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি। সেসময় পরীক্ষয়া টেনেটুনে থার্ড ক্লাস তুলতে সক্ষম হন। এর আগে ১৯৭৭ সালে মাধ্যমিকে (এসএসসি) পান সেকেন্ড ক্লাস। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সনদ নেন তিনি।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে থার্ড ক্লাস পাওয়া কেউ যেখানে শিক্ষার্থী হওয়ার যোগ্যতাই রাখে না, সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কীভাবে হলেন, সেই প্রশ্নই এখন উঠেছে। এমন রেজাল্টধারীকে আওয়ামী লীগ সরকার দুই বার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য করেছে। সবশেষ চবি উপাচার্যের চেয়ারেও বসিয়ে দিয়েছে। আবু তাহের পিএইচডিও করেছেন চবি থেকেই!

রোববার (১১ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ড. আবু তাহের। তবে পদত্যাগপত্রটি প্রকাশ্যে আসে সোমবার।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা দলীয়করণ হলে সরকার থার্ড ক্লাস পাওয়া একজনকে দেশের শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতের অনেক শিক্ষকেরও ফার্স্টক্লাস রেজাল্টের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার জন্য তারা গেছেন হার্ভাড, ক্যাম্ব্রিজ, অক্সফোর্ড, ডারহামসহ বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের কিন্তু সরকার উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, উপাচার্য পদ পেতে আবু তাহেরকে সদ্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করতে হয়েছে। বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে নওফেলদের মালিকানা পাইয়ে দিতে তিনিই ম্যানেজারি করেছেন। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে তাকে দুই বার সদস্য করা হয়। এই পদে থেকেই নওফেলের হয়ে কাজ করেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর ২০১০ সাল থেকেই আবু তাহের সরকারি পদ-পদবি নিয়েই চলছেন। গত ১৪ বছরে একদিনের জন্যও তাকে পদ ছাড়া থাকতে হয়নি। শুরুতেই ঢাকার নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে তাকে নিয়োগ দেয় সরকার। সেখানে আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় চার বছর মেয়াদ পূর্তির আগেই তাকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করে ট্রাস্টি বোর্ড। সেখান থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর শাস্তির বদলে তাকে দলীয় বিবেচনায় পুরস্কার দেওয়া হয়। তাকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েও বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে তাকে কিছুদিনের মাথায় বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এরপর যেকোনো উপায়ে এই থার্ড ক্লাসধারী শিক্ষক বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য হয়ে যান। নিয়ম অনুযায়ী— একবারের বেশি কেউ সদস্য পদে থাকতে না পারলেও তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে নওফেল ইউজিসির সদস্য বানায়। ইউজিসি সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে নওফেলের হাতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় তুলে দেওয়ার ম্যাকানিজম তৈরি করার পুরস্কারস্বরূপ থার্ড ক্লাসধারী প্রফেসর আবু তাহেরকে দেশের শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়।

উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েই নিজেকে সাধু হিসেবে পরিচয় ঘটাতে তিনি খড়্‌গহস্ত হয়ে উঠেন। কোটা সংস্কার ইস্যুতে তিনিই প্রথম সরকারকে শিক্ষার্থীদের উপর বল প্রয়োগের পরামর্শ দেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে দেড় মাস সময়ের মধ্যে ৪ থেকে ৫ দিনও উপাচার্য চট্টগ্রামে থাকেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ফেলে তিনি ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন।

আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলসহ উপাচার্য আবু তাহেরের আমেরিকা সফরের দিনক্ষণও ঠিকঠাক ছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় বিমান টিকিটও বুকিং করা হয়। কিন্তু আন্দোলনের কারণে নওফেল যেতে অপারগতা প্রকাশ করায়, আবু তাহেরের আর মন্ত্রীর সঙ্গে ভ্রমণবিলাস করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

ইউজিসির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মকে বৈধতা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে। সেই টাকা থেকে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে ম্যানেজ করে এবং নওফেলকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় দখলের সুযোগ দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি ভাগিয়ে নেন।

অভিযোগ রয়েছে, কোটা আন্দোলনের শুরুতেই ছাত্রদের ওপর বলপ্রয়োগ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডিকে ব্যবহারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছে আবু তাহের। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের রাতারাতি হল থেকে বের করে দিতে প্রক্টরিয়াল বডিকে চাপ দেয় আবু তাহের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মিছিল করায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশনাও দেন।

শেখ হাসিনার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রভোস্টদের পদত্যাগের দাবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডি ও তিন হলের প্রভোস্ট পদত্যাগপত্র জমা দেন উপাচার্যকে। কিন্তু আবু তাহের পদত্যাগপত্র দিতে গড়িমসি করে। তবে শেষমেশ শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পদত্যাগকারী উপাচার্য আবু তাহেরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস হতে হবে। শিক্ষাজীবনে তৃতীয় বিভাগ (শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ/জিপিএ) গ্রহণযোগ্য হবে না।