9:01 pm, Saturday, 21 December 2024

ইসলাম আতঙ্ক ছড়াতে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

 

ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের কেন্দ্র করে খবর প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। যেখানে তারা বাংলাদেশের ইসলামী সংগঠনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। সেসব গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে হাসিনার পতনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে এবং তাতে জড়িত রয়েছে দেশটির ইসলামপন্থী দলগুলো। ভারতীয় গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম জুড়ে বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তু সম্বলিত নিবন্ধ এবং ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।

টাইমস গ্রুপের মালিকানাধীন মিরর নাও এর ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। যার শিরোনাম বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা? ভিডিওতে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ জনতা হত্যাকা- সংঘটিত করেছে। ওই ভিডিওতে চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং সহিংসতার খবর দৃশ্যায়ন করেছে। ওই চার বাড়ির দু’টি মুসলিম মালিকানাধীন বলে চিন্থিত করা হয়েছে। ভিডিওটির শিরোনাম স্পষ্টতই বিভ্রান্তিকর। কেননা এই ঘটনায় কোনো গণহত্যার খবর পাওয়া যায় নি। স্থানীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে একটি বাড়ি বাংলাদেশের স্বাধীনাতর স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের। ওই ভিডিওতে জনতার হাতে ২৪টি জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার চিত্র দেখানো হয়েছে যা স্পষ্টতই বিভ্রান্তিকর। আল জাজিরা এ বিষয়গুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করেছে। যাতে ভারতীয় গণমাধ্যমের মিথ্যাচার প্রমাণিত হয়েছে। কেননা যে দুই হিন্দু এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে তাদের কাউকেই হিন্দু বলে নিহত করা হয় নি। ওই দুই হিন্দুর মধ্যে একজন ছিলেন পুলিশ এবং অন্যজন শেখ হাসিনার দলের নেতাকর্মী। যারা মূলত ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন। পক্ষান্তরে ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ এবং ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্বারা যে সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে তিন শতাধিক আন্দোলনকারী প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। এদের বেশির ভাগই ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সমর্থক। হিন্দু সমর্থকদের কারণে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের তুলনায় নিজেদের অতি ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কারণ বিরোধী জোটে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল রয়েছে।

হিন্দুদের ওপর হামলার অনেক খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। যেমন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক উচ্চ পর্যায়ের নেতা শুভেন্দুকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়েছে যে ‘এক কোটিরও বেশি শরণার্থী শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতে পারে।’ ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা হয়। সংবাদ সংস্থাটি ভারতীয় এক ছাত্র নেতাকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার আরেকটি উদ্ভট নিবন্ধে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল জামায়াতে ইসলামী শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। তবে গণমাধ্যমটির এ খবর বিভ্রান্তিকর। কেননা এবারের আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল যেহেতু তারা গত ১৫ বছর হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এবিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ইসলাম আতঙ্ক’ ছড়াতে এসব প্রতিবেদন করেছে। আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল তাতে সর্বস্তরের জনগণ সম্পৃক্ত ছিল। এটি বাংলাদেশের সর্বসম্মতভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি আন্দোলন। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যম কোনো না কোনোভাবে নিজেদের ইসলামফোবিক চোখের মাধ্যমে পুরো দৃশ্যপটকে ব্যাখ্যা করছে।

 

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat

কনক্রিট হল ব্লক- বাড়ির শক্ত ভিতের জন্য সেরা পছন্দ

ইসলাম আতঙ্ক ছড়াতে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর

Update Time : 09:24:10 pm, Saturday, 10 August 2024

 

ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের কেন্দ্র করে খবর প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। যেখানে তারা বাংলাদেশের ইসলামী সংগঠনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। সেসব গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে হাসিনার পতনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে এবং তাতে জড়িত রয়েছে দেশটির ইসলামপন্থী দলগুলো। ভারতীয় গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম জুড়ে বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তু সম্বলিত নিবন্ধ এবং ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।

টাইমস গ্রুপের মালিকানাধীন মিরর নাও এর ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। যার শিরোনাম বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা? ভিডিওতে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ জনতা হত্যাকা- সংঘটিত করেছে। ওই ভিডিওতে চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং সহিংসতার খবর দৃশ্যায়ন করেছে। ওই চার বাড়ির দু’টি মুসলিম মালিকানাধীন বলে চিন্থিত করা হয়েছে। ভিডিওটির শিরোনাম স্পষ্টতই বিভ্রান্তিকর। কেননা এই ঘটনায় কোনো গণহত্যার খবর পাওয়া যায় নি। স্থানীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে একটি বাড়ি বাংলাদেশের স্বাধীনাতর স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের। ওই ভিডিওতে জনতার হাতে ২৪টি জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার চিত্র দেখানো হয়েছে যা স্পষ্টতই বিভ্রান্তিকর। আল জাজিরা এ বিষয়গুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করেছে। যাতে ভারতীয় গণমাধ্যমের মিথ্যাচার প্রমাণিত হয়েছে। কেননা যে দুই হিন্দু এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে তাদের কাউকেই হিন্দু বলে নিহত করা হয় নি। ওই দুই হিন্দুর মধ্যে একজন ছিলেন পুলিশ এবং অন্যজন শেখ হাসিনার দলের নেতাকর্মী। যারা মূলত ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন। পক্ষান্তরে ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ এবং ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্বারা যে সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে তিন শতাধিক আন্দোলনকারী প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। এদের বেশির ভাগই ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সমর্থক। হিন্দু সমর্থকদের কারণে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের তুলনায় নিজেদের অতি ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কারণ বিরোধী জোটে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল রয়েছে।

হিন্দুদের ওপর হামলার অনেক খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। যেমন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক উচ্চ পর্যায়ের নেতা শুভেন্দুকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়েছে যে ‘এক কোটিরও বেশি শরণার্থী শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতে পারে।’ ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা হয়। সংবাদ সংস্থাটি ভারতীয় এক ছাত্র নেতাকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার আরেকটি উদ্ভট নিবন্ধে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল জামায়াতে ইসলামী শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। তবে গণমাধ্যমটির এ খবর বিভ্রান্তিকর। কেননা এবারের আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল যেহেতু তারা গত ১৫ বছর হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এবিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ইসলাম আতঙ্ক’ ছড়াতে এসব প্রতিবেদন করেছে। আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল তাতে সর্বস্তরের জনগণ সম্পৃক্ত ছিল। এটি বাংলাদেশের সর্বসম্মতভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি আন্দোলন। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যম কোনো না কোনোভাবে নিজেদের ইসলামফোবিক চোখের মাধ্যমে পুরো দৃশ্যপটকে ব্যাখ্যা করছে।