9:32 am, Wednesday, 30 October 2024

‘দেশের ব্যাংকগুলোতে টাকাও নেই, ডলারও নেই’

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

বাজেট বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। এখন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজানীয় টাকাও নেই, ডলারও নেই। কিভাবে বাস্তবায়ন হবে। তাই দেশের আর্থিক খাতের সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই বলেন মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

শনিবার (১৩ জুলাই) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, পর্যাপ্ত ডলার না থাকার কারণে জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন খাতের বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার।

যদি স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তাহলে ভার বহন করা যায় না। ব্যাংক খাতের দুর্বলতার কারণে এখন ব্যাংক ব্যক্তি খাতকেও ঋণ দিতে পারছে না। আবার সরকারকেও ঋণ দিতে পারছে না। এখন ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ। এ বছর যদি বাড়ে তাহলে সেটা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হতে পারে।

সেই হিসাবে এ বছর আমানত আসবে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা কিভাবে দিবে ব্যাংক? সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে ব্যক্তি খাত টাকা কোথায় পাবে? কিন্তু বাজেটে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ২৭ শতাংশ। কিন্তু এ পর্যন্ত ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরাফেরা করছে। যদি ব্যাংক খাতের আমানতের প্রবৃদ্ধি না বাড়ে, আবার সরকারকে ঋণ দিতে হয় তাহলে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিভাবে অর্জন হবে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার আনা হবে। কিন্তু ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এটা খুবই হতাশাজনক। দেশের স্বার্থেই এখন ব্যাংক খাতের সংস্কার খুবই জরুরি। আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে সেটা ভালো। কিন্তু নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সংস্কার দরকার। আমরা তো আমানত খেয়ে ফেলেছি। এভাবে ব্যাংক কতদিন চলবে? ব্যাংক খাত নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার। সেটা করতে হবে সরকারকেই। বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে নয়। ব্যাংক খাতে আজকে যে এই অবস্থা হলো তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

ঋণ আদায় না ক‌রে ঋণের সুদকে আয় দে‌খি‌য়ে মুনাফা দেখা‌চ্ছে ব্যাংক। সেই মুনাফার অর্থ থে‌কে লভ্যাংশ দি‌চ্ছে। সরকার‌কে ট্যাক্সও দি‌চ্ছে। আস‌লে কো‌নো আয়-ই হয়‌নি। আমান‌তের অর্থ লু‌টে খা‌চ্ছে কয়েকটি গোষ্ঠী। সরকারের সহযোগিতায় তারা পুষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের কারণেই এখন আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে কার্পেটের নিচে ময়লা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটা সময় তাতো দুর্গন্ধ ছড়াবেই।

লক্ষ্য করা যাচ্ছে এতো সমস্যার মধ্যেও লভ্যাংশ দিচ্ছে অনেক ব্যাংক। আসলে ঘ‌রের থালাবাসন বেঁচে কোরমা পোলাও খা‌চ্ছি আমরা। এভা‌বে আর কত‌দিন ব্যাংক চল‌তে পার‌বে? আমানত শেষ হ‌য়ে যাবে। গ্রাহ‌কের অর্থ আর ফেরত দি‌তে পার‌বে না ব্যাংক। এখন আর্থিক খা‌তের ‘ক্লিনিং‌’ কার্যক্রম প্রয়োজন বলে মনে করেন ড. আহসান এইচ মনসুর। আমা‌দের ব্যাংক খা‌তের সমস্যাগুলো সমাধান না ক‌রে জিইয়ে রাখ‌ছে।

আর্থিক খা‌তে সব‌চে‌য়ে বে‌শি তথ্য লুকা‌নো হ‌চ্ছে অ‌ভি‌যোগ ক‌রে এই অর্থনী‌তি‌বিদ ব‌লেন, দে‌শের সব‌চে‌য়ে বে‌শি তথ্য লুকা‌নো হয় আর্থিক খা‌তে। যেখা‌নে স‌ঠিক ত‌থ্য সব‌চে‌য়ে বে‌শি জরু‌রি। বাংলা‌দেশ ব্যাংক এখন ১১ শতাংশ খেলা‌পি ঋণ দেখা‌চ্ছে। আস‌লে বাস্ত‌বে খেলা‌পি বা মন্দ ঋণ ২৫ শতাংশ। এভা‌বে আর বে‌শিদিন চল‌তে পার‌বে না।

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপ‌তি‌ত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ক‌রেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কা‌শেম।

Tag :

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট

Bangladesh Diplomat | বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট | A Popular News Portal Of Bangladesh.

‘দেশের ব্যাংকগুলোতে টাকাও নেই, ডলারও নেই’

Update Time : 05:05:57 pm, Saturday, 13 July 2024

বাজেট বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। এখন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজানীয় টাকাও নেই, ডলারও নেই। কিভাবে বাস্তবায়ন হবে। তাই দেশের আর্থিক খাতের সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই বলেন মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

শনিবার (১৩ জুলাই) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, পর্যাপ্ত ডলার না থাকার কারণে জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন খাতের বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার।

যদি স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তাহলে ভার বহন করা যায় না। ব্যাংক খাতের দুর্বলতার কারণে এখন ব্যাংক ব্যক্তি খাতকেও ঋণ দিতে পারছে না। আবার সরকারকেও ঋণ দিতে পারছে না। এখন ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ। এ বছর যদি বাড়ে তাহলে সেটা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হতে পারে।

সেই হিসাবে এ বছর আমানত আসবে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা কিভাবে দিবে ব্যাংক? সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে ব্যক্তি খাত টাকা কোথায় পাবে? কিন্তু বাজেটে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ২৭ শতাংশ। কিন্তু এ পর্যন্ত ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরাফেরা করছে। যদি ব্যাংক খাতের আমানতের প্রবৃদ্ধি না বাড়ে, আবার সরকারকে ঋণ দিতে হয় তাহলে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিভাবে অর্জন হবে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার আনা হবে। কিন্তু ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এটা খুবই হতাশাজনক। দেশের স্বার্থেই এখন ব্যাংক খাতের সংস্কার খুবই জরুরি। আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে সেটা ভালো। কিন্তু নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সংস্কার দরকার। আমরা তো আমানত খেয়ে ফেলেছি। এভাবে ব্যাংক কতদিন চলবে? ব্যাংক খাত নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার। সেটা করতে হবে সরকারকেই। বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে নয়। ব্যাংক খাতে আজকে যে এই অবস্থা হলো তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

ঋণ আদায় না ক‌রে ঋণের সুদকে আয় দে‌খি‌য়ে মুনাফা দেখা‌চ্ছে ব্যাংক। সেই মুনাফার অর্থ থে‌কে লভ্যাংশ দি‌চ্ছে। সরকার‌কে ট্যাক্সও দি‌চ্ছে। আস‌লে কো‌নো আয়-ই হয়‌নি। আমান‌তের অর্থ লু‌টে খা‌চ্ছে কয়েকটি গোষ্ঠী। সরকারের সহযোগিতায় তারা পুষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের কারণেই এখন আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে কার্পেটের নিচে ময়লা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটা সময় তাতো দুর্গন্ধ ছড়াবেই।

লক্ষ্য করা যাচ্ছে এতো সমস্যার মধ্যেও লভ্যাংশ দিচ্ছে অনেক ব্যাংক। আসলে ঘ‌রের থালাবাসন বেঁচে কোরমা পোলাও খা‌চ্ছি আমরা। এভা‌বে আর কত‌দিন ব্যাংক চল‌তে পার‌বে? আমানত শেষ হ‌য়ে যাবে। গ্রাহ‌কের অর্থ আর ফেরত দি‌তে পার‌বে না ব্যাংক। এখন আর্থিক খা‌তের ‘ক্লিনিং‌’ কার্যক্রম প্রয়োজন বলে মনে করেন ড. আহসান এইচ মনসুর। আমা‌দের ব্যাংক খা‌তের সমস্যাগুলো সমাধান না ক‌রে জিইয়ে রাখ‌ছে।

আর্থিক খা‌তে সব‌চে‌য়ে বে‌শি তথ্য লুকা‌নো হ‌চ্ছে অ‌ভি‌যোগ ক‌রে এই অর্থনী‌তি‌বিদ ব‌লেন, দে‌শের সব‌চে‌য়ে বে‌শি তথ্য লুকা‌নো হয় আর্থিক খা‌তে। যেখা‌নে স‌ঠিক ত‌থ্য সব‌চে‌য়ে বে‌শি জরু‌রি। বাংলা‌দেশ ব্যাংক এখন ১১ শতাংশ খেলা‌পি ঋণ দেখা‌চ্ছে। আস‌লে বাস্ত‌বে খেলা‌পি বা মন্দ ঋণ ২৫ শতাংশ। এভা‌বে আর বে‌শিদিন চল‌তে পার‌বে না।

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপ‌তি‌ত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ক‌রেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কা‌শেম।